|
|
|
|
সংস্কার প্রচারে আসতে পারেন আনন্দ শর্মা |
দিল্লির এ বার কলকাতা চলো |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও কলকাতা |
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডাক দিয়েছেন, দিল্লি চলো। এ বার দিল্লির সরকার পাল্টা ডাক দিতে চায়, চলো কলকাতা! সেই লক্ষ্যে খুচরোয় বিদেশি লগ্নি-সহ সংস্কারের উপকারিতা বোঝাতে বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মাকে পশ্চিমবঙ্গে পাঠাতে পারেন মনমোহন সিংহ।
পয়লা তারিখ সনিয়া-মনমোহনের ঘরের মাঠে দলবল নিয়ে নামতে চলেছেন মমতা। ফেলে না রেখে ওই দিনই জবাবটা দিয়ে দিতে তৈরি হচ্ছে প্রদেশ কংগ্রেস। গাঁধী মূর্তির পাদদেশ থেকে মিছিল করে হাজরা মোড় পর্যন্ত যাবে তারা। অর্থাৎ ঢুকে পড়বে মমতার পাড়ায়।
বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে এমনই রাজনৈতিক টক্কর শুরু হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত দুই সদ্য বিচ্ছিন্ন জোট শরিকের মধ্যে।
এক জনের লক্ষ্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কথা বলে প্রাক্তন শরিককে ‘জনবিচ্ছিন্ন’ করে ফেলা, যাতে তার ভাগের ভোট চলে আসে নিজের ঝুলিতে।
অন্য জনের লক্ষ্য বিদেশি লগ্নি বা এফডিআই নিয়ে চলা যাবতীয় ‘অপপ্রচারের’ জবাব দিয়ে বোঝানো, রোগের দীর্ঘমেয়াদি উপশমে এখন এই তেতো ওষুধ ছাড়া উপায় নেই। এবং যাঁরা এর বিরোধিতা করছেন, ‘সস্তা রাজনীতির’ কথা মাথায় রেখে তাঁরা রোগটাকে সারতে দিতে চান না।
এক জন বলছেন, “ভর্তুকির টাকা আসে জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে। সব টাকা কেন্দ্র নিয়ে চলে যায়।” বলছেন, “আমাদের টাকা নিয়ে মাছের তেলে মাছ ভাজে কেন্দ্র।” জানাচ্ছেন, “আমি নোটের পক্ষে নই। ভোটের পক্ষে।” মনে করিয়ে দিচ্ছেন, “আমাকে চমক-ধমক দেখাবেন না। আমরা মানুষকে নিয়ে চলি।”
তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অন্য দিকে রয়েছেন মনমোহন সিংহ। কম কথার মানুষ এখন সংস্কারের কাজ জোর গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
কিন্তু সিদ্ধান্তেই প্রক্রিয়া থেমে যাচ্ছে না। এই আপাত তেতো ওষুধের উপকারিতা বোঝাতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআইয়ের উপকারিতা বোঝাতে সারা দেশে প্রচারে নামবে দল। পশ্চিমবঙ্গে যে হেতু খোদ শাসক দলই এফডিআই-এর বিরোধিতা করছে, তাই সেখানে প্রচারে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। কংগ্রেস নেতৃত্বের মত, এ ক্ষেত্রে দলের যুব-ছাত্র সংগঠনকে প্রচারের প্রথম সারিতে রাখতে হবে। কিন্তু তার আগে তাঁদের বোঝাতে হবে, কেন এফডিআই প্রয়োজন। বোঝাতে হবে, এর থেকে আখেরে লাভ হবে কৃষকদেরই।
|
উলুবেড়িয়ায় শুক্রবার।
ছবি: সুব্রত জানা |
এই কাজের জন্য আনন্দ শর্মাকেই কলকাতায় পাঠানোর কথা ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী। ছাত্র-যুবদের ক্লাস নেওয়ার সঙ্গে আনন্দ সভায় বক্তব্য রাখতে পারেন। করতে পারেন সাংবাদিক সম্মেলনও। প্রধানমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই কলকাতায় ছাত্র-যুবদের জন্য এফডিআই নিয়ে ক্লাসের পরিকল্পনা করে ফেলেছে। ঠিক যে ভাবে এর আগে গ্যাট চুক্তি বা পরমাণু চুক্তির উপকারিতা নিয়ে কংগ্রেসের তরফে ক্লাসের আয়োজন করা হয়েছিল। ছাত্র-যুবদের জন্য আয়োজিত সেই সম্মেলনেই আনন্দ শর্মাকে পাঠানোর জন্য আজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন মানস ভুঁইয়া। মনমোহন তাঁকে জানান, এ বিষয়ে তিনি আনন্দ শর্মার সঙ্গে কথা বলবেন। তিনিও চান, আনন্দ যাতে কলকাতায় যান। পরে মানস জানান, তিনি আনন্দের সঙ্গে দেখা করে ‘গ্লোবাল পার্টনারশিপ সামিট’ সরিয়ে নেওয়ার কারণ জানতে চাইবেন। রাহুল গাঁধীর সঙ্গেও তিনি দেখা করেন।
এর আগে কংগ্রেসের কোনও কোনও মন্ত্রী রাজ্যে সফরে এসে হয়তো সংস্কার বা জ্বালানির দাম বাড়ানোর পক্ষে কথা বলেছেন। কিন্তু আনন্দ শর্মা এলে তা হবে কোমর বেঁধে পাল্টা চাল। যা কি না মমতার দিল্লি গিয়ে ধর্না দেওয়ার ‘জবাব’ বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। এই কাজে শুধু এ বারের সংস্কারের কথাই নয়, ১৯৯১ সালে সংস্কারের কী সুফল মিলেছিল, তা-ও তুলে ধরতে চায় কংগ্রেস। দলের নেতাদের বক্তব্য, ইউপিএ-সরকার সংস্কারের নামে জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কিংবা রাজ্যকে বঞ্চনা করছে এমন কোনও অভিযোগ নিয়ে মমতাকে ফাঁকা ময়দান ছাড়তে নারাজ তারা।
মমতা অবশ্য এর মধ্যেই ময়দানে নেমে পড়েছেন। এ দিনও উলুবেড়িয়ার বীরশিবপুরে এক অনুষ্ঠানে তিনি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ফের তোপ দাগলেন। তবে এ দিন তিনি এক বারও কংগ্রেসের নাম করেননি। অনেকে আবার মনে করছেন, এই ভাবে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারই শুরু করে দিয়েছেন তিনি।
মমতা এ দিন কী বলেছেন? বলেছেন, “কেন্দ্র ডিজেল, সারের দাম বাড়িয়েছে। এ সব জনবিরোধী কাজ।
যারা এ সব করছে তাদের চিহ্নিত করুন। তাদের কোনও সমর্থন দেবেন না।”
এ দিন হাওড়ার নিউ কালেক্টরেট ভবনে জেলার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, একশো দিনের কাজ প্রভৃতি প্রকল্পে অগ্রগতি নিয়ে জেলা ও ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক ছিল মমতার। সেখান থেকে তিনি যখন উলুবেড়িয়ায় সরকারি কর্মসূচিতে আসেন, তত ক্ষণে তা জনসভার রূপ নিয়েছে। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী ফের জানিয়ে দেন, এ রাজ্যে তিনি খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির প্রবেশ ঘটতে দেবেন না। তিনি বলেন, “কেন্দ্র দিল্লিতে বসে যে ভাবে কাজ করছে, তাতে তারা ভাবছে মানুষের খুব উপকার করছে। আর তার ফল হল, ছোট দোকান, বড় দোকান সব বন্ধ করে দাও। আমরা তো এটা মানবই না, আমাদের রাজ্যে এ সব করতেই দেব না। আমরা চাই, আমাদের সব্জিওয়ালারা বাঁচুক, দোকান থাকুক।”
এই প্রতিবাদ রাজ্য থেকে কেন্দ্রে পৌঁছে দিতেই যে তাঁর দিল্লি যাওয়ার কর্মসূচি, তা-ও দলের তরফে আর এক বার স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, তিনি চান না ঝাঁকে ঝাঁকে লোক হইহই করে ট্রেনে চেপে দিল্লি চলুক। সাংসদদের যেতেই হবে। তা ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিধায়ক এবং নেতারা চলুন। এর বেশি যাওয়ার দরকার নেই। |
|
|
|
|
|