স্নাতকোত্তরে ফাঁকা আসনে ছাত্র ভর্তিকে কেন্দ্র করে গোলমালের জেরে শুক্রবার রবীন্দ্রভারতীর বিটি রোড ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়ায়। গোলমাল পাকানোর পিছনে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র হাত আছে বলে অভিযোগ ভর্তি হতে আসা ছাত্রছাত্রী এবং তাঁদের অভিভাবকদের। টিএমসিপি অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, বেশ কয়েক দফায় মেধা-তালিকা প্রকাশ করার পরেও স্নাতকোত্তরে বিভিন্ন বিষয়ে সব আসনে ছাত্র মেলেনি। কোনও বিষয়ে ৩-৪টি, কোথাও বা ২০-২৫টি আসন ফাঁকা। এত দিন বারবার মেধা-তালিকা প্রকাশ এবং তার ভিত্তিতে ফাঁকা আসনে ছাত্র ভর্তি করা হত। কিন্তু তাতে ভর্তি প্রক্রিয়া চলত নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত। অগস্টে ক্লাস শুরু হয়ে যাওয়ার অনেক পরে যাঁরা ভর্তি হতেন, তাঁদের পড়া বুঝতে সমস্যা হত। তাই ভর্তি পর্ষদের বৈঠকে ‘আগে এলে আগে ভর্তি’র সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুক্রবার ছিল সেই ভর্তির দিন।
কিন্তু স্নাতকোত্তর স্তরে ‘আগে এলে আগে ভর্তি’র নীতি চালু করা কতটা সঙ্গত, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত অনেকেরই প্রশ্ন, যোগ্য ছাত্রছাত্রী না-পাওয়ায় অথবা তাঁদের মধ্যে যথেষ্ট চাহিদা না-থাকায় যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু আসন খালি থাকে, তাতে ক্ষতি কী? মেধার সঙ্গে আপস করে সব আসন ভরাতে হবে কেন?
এই পদ্ধতির মধ্যে যে ক্রটি রয়েছে, রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী কার্যত তা মেনে নিয়েছেন। তাঁর আশ্বাস, অন্য কোন উপায়ে ভর্তি প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা যায়, সেটা তাঁরা ভেবে দেখবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা অবশ্য বলেন, “ছাত্র সংসদের তরফে সব সময়েই ফাঁকা আসন ভর্তি করার চাপ থাকে। তাই সব আসনেই ছাত্র ভর্তি করতে হয়।”
এ দিন গোলমাল বাধল কেন? বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিটি রোড ক্যাম্পাসের সামনে চলে আসেন অনেক ছেলেমেয়ে এবং তাঁদের অভিভাবকেরা। নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে একটি সারিতে অপেক্ষা করতে থাকেন তাঁরা। কিন্তু শুক্রবার সকালে এক দল যুবক এসে অপেক্ষমাণ ছাত্রছাত্রীদের জোর করে সরিয়ে দিয়ে নিজেরা সেখানে দাঁড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। দু’দলের মধ্যে বচসা শুরু হয়। রানিগঞ্জ থেকে আসা এক প্রার্থী প্রতিবাদ করায় ওই যুবকেরা তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। এর জেরে গোলমাল বাড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও উত্তেজনা কমেনি।
পরে ভর্তি হতে আসা প্রার্থীদেরই কেবল ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। কিন্তু ওই ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, ভিতরে গিয়ে তাঁরা দেখেন, শ’দেড়েক ছেলেমেয়ে আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকে পড়েছেন। নিয়ম ভেঙে পিছনের দরজা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে পড়া ওই ছেলেমেয়েদেরই আগেভাগে ভর্তি করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
উপাচার্য বলেন, “হঠাৎ অনেক ছেলেমেয়ে এবং তাঁদের অভিভাবকেরা চলে এসেছিলেন। এমনকী ভর্তির ফর্ম তোলেননি, এমনও অনেক প্রার্থীও চলে আসেন। সকলেরই আশা ছিল, ভর্তির সুযোগ পাবেন। তা না-পেয়ে একটু উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।” যে-সব ছাত্রছাত্রী এ দিন সকালে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করেছেন, তাঁরা টিএমসিপি-র সক্রিয় কর্মী বলে অভিযোগ। টিএমসিপি-র রাজ্য সম্পাদক সুজিত সাম অবশ্য দাবি করেছেন, এই ঘটনায় তাঁদের সংগঠনের কোনও ভূমিকা নেই। |