নিজস্ব সংবাদদাতা • রাজনগর |
কর্তব্যরত এক চিকিৎসককে ঢিল মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার ঘটনায় অভিযোগের তির উঠল তৃণমূলের দিকে। শুক্রবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে রাজনগরের তাঁতিপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আক্রান্ত চিকিৎসক দেবাশিস কর্মকারের অভিযোগ, “স্থানীয় কিছু তৃণমূল নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে পরিকল্পিত ভাবে আমার উপরে হামলা চালানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে রাজনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করব। তবে আমাকে যে ব্যক্তি আঘাত করেছে তাকে পুলিশ ধরেছে।” রাজনগর থানা অবশ্য ওই যুবককে গ্রেফতার না আটক করা হয়েছে, তা স্পষ্ট করেনি। পুলিশের দাবি, সুনির্দিষ্ট আভিযোগের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই চিকিৎসক আক্রান্ত হলেন কেন?
স্থানীয় সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার দুপুরে। তাঁতিপাড়া পঞ্চায়েত এলাকার খয়রাডিহি গ্রাম থেকে সাহিদা বিবি নামে এক বধূ ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বহির্বিভাগে তাঁর অসুস্থ শিশুকে দেখাতে এনেছিলেন। অভিযোগ, ওই দেবাশিসবাবু শিশুটিকে পরীক্ষা করে বাইরে থেকে ওষুধ কিনে নিতে বলেন। তা থেকেই বচসার সূত্রপাত। ওই শিশুর বাবা শেখ জাকিরের দাবি, “হাসপাতাল থেকে ওষুধ চাওয়া হলে ওই চিকিৎসক বলেন এখানে ওষুধ নেই। তিনি তৃণমূলের এমপি এমএলেদের ওষুধের ব্যবস্থা করে দিতে বলার কথা বলেন।” ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে ওই শিশুর পরিবারের লোকেদের নিয়ে চিকিৎসকের মন্তব্যের ‘বিহিত’ করতে হাজির হন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা কর্মীরা। তারা দেবাশিসবাবুর সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু করেন। তখনই একটি ঢিল এসে দেবাশিসবাবুর মাথায় এসে লাগে বলে জানা গিয়েছে। তাতেই মাথা ফেটে জখম হন তিনি। এরপরেই পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
চিকিৎসকের আহত হওয়ার কথা স্বীকার করে নিলেও তৃণমূলের দাবি, ঘটনায় তাদের কেউ জড়িত নয়। ঘটনার নিন্দা করেও স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুকুমার সাধুর দাবি, “ওই চিকিৎসক প্রায়ই রোগীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। তৃণমূলের সাংসদ-বিধায়ক-মন্ত্রীদের নিয়ে বিদ্রূপ করেন। তাই এ দিন দলের কিছু লোক এর প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন মাত্র।” যদিও ওই শিশুর বাবা এবং তৃণমূলের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দেবাশিসবাবু বলেন, “বেশ কিছু দিন ধরেই হাসপাতালে ওষুধের সরবরাহ অনিয়মিত, অপর্যাপ্ত। তাই শিশুটির পরিবারের লোকেদের জানিয়েছিলাম, হাসপাতালে ওষুধ না থাকলে কী ভাবে দেব!” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “আমার কথা না বুঝে তাঁরা অমুক নেতাকে বলে দিদির (মুখ্যমন্ত্রীর) কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন বলে হুমকি দিতে থাকেন। তখন আমি বলি, পরিস্থিতির জন্য আমি দায়ী নই। যদি বলতেই হয়, জন প্রতিনিধিদের বলুন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলুন।” এর বাইরে আর কোনও কথা হয়নি বলেই তাঁর দাবি।
এ দিকে, রাজনগরের বিএমওএইচ হিমাদ্রি ঘটক বলেন, “অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক ঘটনা। ওই চিকিৎসককে পুলিশে আভিযোগ জানাতে বলেছি।” ঘটনার নিন্দা করেছে সিপিএমও। তাঁতিপাড়া লোকাল কমিটির সম্পাদক দামোদর কুণ্ডু বলেন, “হাসপাতালে ওষুধপত্র না থাকলে তার দায় চিকিৎসকের উপর চাপিয়ে তাঁকে মারধর করা অন্যায়।” |