এসপি-র গাড়িতে দুর্ঘটনা |
বাবার মৃত্যুর পর এ বার মা-ছেলে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
একটি দুর্ঘটনা এড়াতে গিয়ে ঘটে গেল আরও একটি দুর্ঘটনা। তা-ও আবার খোদ পুলিশ সুপারের গাড়িতে। মৃত্যু হল তিন জনের। জখম আরও দুই।
বুধবার সকালে পুরস্কার নিতে মেদিনীপুর আসছিলেন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সি সুধাকর। সামনের গাড়িতে ছিলেন পুলিশ সুপার নিজে। পিছনে অন্য একটি গাড়িতে তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা। গড়বেতার রসকুণ্ডু চৌমাথা মোড়ের কাছে হঠাৎই একটি মোটর সাইকেল এসপি’র গাড়ির সামনে চলে আসে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সি সুধাকরের বক্তব্য, “আমার হাতে সামান্য চোট লেগেছে। চালক ও নিরাপত্তারক্ষীরও চোট লাগে। তবে কারওরই আঘাত গুরুতর নয়। দুর্ঘটনায় জখমদের নিজেই উদ্যোগী হয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছি।” পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “গাড়ির চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গাড়িটিও আটক করা হয়েছে।”
দুর্ঘটনায় মৃতেরা হলেন আরতি মণ্ডল (৫২), অলোক মণ্ডল (৩৫) ও হালিমা খাতুন (২৬)। আরতিদেবীর ছেলে অলোক। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় আরতিদেবীর। আর হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে মারা যান হালিমা। দুর্ঘটনায় জখম হন অলোকের স্ত্রী শম্পা ও স্থানীয় বাসিন্দা নীলু রায়। তাঁদের মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়েছে। দুর্ঘটনার পরে বেশ কিছুক্ষণ ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা। যানজটে আটকে পড়ে বহু গাড়ি। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। পরে পুলিশ গিয়ে অবরোধকারীদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। |
|
মেদিনীপুর মেডিক্যালে আহত শম্পা মণ্ডল। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
দুর্ঘটনায় মৃত মা-ছেলে আরতি ও অলোক মণ্ডলের বাড়ি গড়বেতা থানা এলাকারই নলপা গ্রামে। এ দিন একটির মামলার বিষয়ে মেদিনীপুর আদালতে যাচ্ছিলেন তাঁরা। মাস ছয়েক আগেই পথ দুর্ঘটনাতেই মৃত্যু হয়েছিল অলোকের বাবা পঞ্চানন মণ্ডলের। এ দিনের দুর্ঘটনাস্থল রসকুণ্ডু মোড়ের অদূরে ময়রাকাটার কাছে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। এ দিনের দুর্ঘটনায় মৃত ছাত্রী হালিমার সংস্কৃত এমএ-র দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। মেদিনীপুরে পড়তে যাচ্ছিলেন তিনি। দুর্ঘটনার পরে মৃত অলোকদের বাড়িতে যান ডিএসপি (অপারেশন) সৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও গড়বেতা থানার ওসি শৈলেন বিশ্বাস।
মাওবাদী দমনে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য পুলিশ কর্মীদের পুরস্কৃত করতে এ দিন এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল যৌথ বাহিনী। পশ্চিম মেদিনীপুরের সালুয়ার কাছে টাঙাশোলে ছিল এই অনুষ্ঠান। সেখানেই পুরস্কার নিতে আসছিলেন পুরুলিয়ার এসপি। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে আসছিল পুলিশ সুপারের গাড়ি। গড়বেতা ছাড়িয়ে মেদিনীপুর আসার পথে পড়ে রসকুণ্ডু মোড়। চৌরাস্তার ওই মোড়ে বাসও দাঁড়ায়।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সকাল ৮টা নাগাদ এসপি’র গাড়ি রসকুণ্ডু মোড়ে পৌঁছতেই আমলাগোড়ার দিক থেকে (অর্থাৎ ডান দিক থেকে) হঠাৎ একটি মোটর সাইকেল সামনে এসে পড়ে। মোটর সাইকেল আরোহীকে বাঁচাতে দ্রুত ব্রেক কষার পাশাপাশি গাড়িটি নিয়ে বাঁ দিকে চাপতে যান চালক। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি ধাক্কা মারে বাসের জন্য অপেক্ষারত কয়েকজনকে। দুর্ঘটনার খবর ছড়াতেই ভিড় জমতে শুরু করে। তখন স্থানীয় থানাকে খবর দিয়ে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সোজা মেদিনীপুরে চলে আসেন। পুলিশ সূত্রে খবর, কিছুক্ষণ মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে অপেক্ষাও করেন করেন এসপি। কী করণীয় তা জানতে চান পদস্থ আধিকারিকদের কাছ থেকে। তারপর টাঙাশোলের অনুষ্ঠানে যান। তাঁর জন্য অনুষ্ঠান ঘন্টা দেড়েক দেরিতে শুরু হয়। পরে পৌঁছে ‘মেডেল’ নেন সি সুধাকর। |
|