|
|
|
|
রায় এবিজি-র পক্ষে |
অফিসার বদলি ঘিরে নয়া জট হলদিয়া বন্দরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও হলদিয়া |
লাগাতার শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয়েছে গত সপ্তাহে। জঙ্গি আন্দোলনের জেরে পণ্য খালাস সংস্থা এবিজি মঙ্গলবার থেকে ২ এবং ৮ নম্বর বার্থে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এর মধ্যে শ্রমিক-অসন্তোষে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগে এক অফিসারের বদলিকে কেন্দ্র করে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে হলদিয়া বন্দরে। বদলির নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবিতে এ বার অফিসারেরাও আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন। তার ফলে অন্য ১০টি বার্থে যেটুকু কাজ হচ্ছিল, তা-ও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
হলদিয়া বন্দরের ২ এবং ৮ নম্বর বার্থে দু’টি জাহাজ দাঁড়িয়ে আছে। দু’দিন তাদের পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় বন্দরের অন্তত ৪০ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে বন্দর সূত্রের খবর। কবে ফের মালপত্র নামানোর কাজ শুরু হবে, বলতে পারছেন না বন্দর-কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য সরকার বা বন্দর-কর্তৃপক্ষ কেউই তেমন উদ্যোগী না-হওয়ায় হলদিয়া বন্দরে কবে আবার স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। পুরো বিষয়টি নিয়ে জাহাজি মহল উদ্বিগ্ন।
এই পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্ট বুধবার বন্দর-কর্তৃপক্ষের হাতে বড় অস্ত্র তুলে দিয়েছে। হলদিয়া বন্দরের দু’টি বার্থে এবিজি-কে পণ্য খালাসের অনুমতি দেওয়াকে চ্যালেঞ্জ করে আটটি ক্লিয়ারিং সংস্থার দায়ের করা মামলা খারিজ করে দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। হাইকোর্ট গত সপ্তাহে কলকাতা বন্দর-কর্তৃপক্ষ ও এবিজি সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানসূত্র বার করে দিয়েছিল। তাদের নির্দেশ ছিল, এবিজি হলদিয়া বন্দরের ২ এবং ৮ নম্বর বার্থে পণ্য খালাস করবে। শুক্রবার হলদিয়া ডকের গেটে বিক্ষোভ দেখানোর সময় তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ তোলেন, হাইকোর্টের রায়ের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে। উচ্চ আদালতের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আটটি ক্লিয়ারিং সংস্থা আপিল করে। তারা বলে, সিঙ্গল বেঞ্চ তাদের বক্তব্য শোনেনি। তাই ওই নির্দেশের উপরে স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক। |
|
বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি শুক্লা কবীরের ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন সেই আপিল মামলা খারিজ করে দেয়। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, আবেদনকারীদের আপিল মামলা করার কোনও আইনি এক্তিয়ারই নেই। বন্দর-কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়, সিঙ্গল বেঞ্চে মামলা হয়েছিল বন্দর ও এবিজি সংস্থার মধ্যে। বর্তমান আবেদনকারী সংস্থাগুলির কোনও ভূমিকাই ছিল না সেখানে। হলদিয়া বন্দরের ডেপুটি ম্যানেজার (শিপিং) অভয়কুমার মহাপাত্র এ দিন বলেন, “ওই দু’টি বার্থে অচলাবস্থা চলছে। তবে এবিজি-র সঙ্গে এখনও কথা হয়নি। এবিজি-ও যোগাযোগ করেনি। সমস্যা মেটাতে বৃহস্পতিবার (আজ) বৈঠক ডাকা হয়েছে।”
কিন্তু হলদিয়ায় সমাধানের সম্ভাবনা যে দূর অস্ত্, এ দিন এক অফিসারের বদলির পরে সেটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। শ্রমিক-অসন্তোষে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ তুলে এ দিন বদলি করা হয়েছে জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) রমাকান্ত বর্মনকে। কলকাতা বন্দরের হাইড্রোলিক স্টাডি ডিপার্টমেন্টে বদলি করা হয়েছে তাঁকে। বদলির নির্দেশে লেখা হয়েছে, ‘পূর্ব মেদিনীপুর জেলা গোয়েন্দা দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী নিজস্বার্থে বন্দরে শ্রমিক আন্দোলনে ‘ইন্ধন’ জুগিয়েছেন রমাকান্ত। এর ফলে ক্রমেই কাজের পরিবেশের অবনতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতেই তাঁকে বদলি করা হল।’ বদলির ফলে রমাকান্তের কর্মস্থল হবে কলকাতা।
হলদিয়া ডক বাঁচাও কমিটি এ দিন জানিয়ে দিয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রমাকান্তের বদলির নির্দেশ বাতিল না-হলে লাগাতার আন্দোলন হবে। রমাকান্তের দাবি, হলদিয়া বন্দর বাঁচাতে তিনি উদ্যোগী হওয়াতেই তাঁকে বদলি করে দেওয়া হল। তিনি বলেন, “আমি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী। জেলা গোয়েন্দা দফতরকে দিয়ে কী ভাবে তদন্ত করানো হল, মাথায় ঢুকছে না।” ওই অফিসারের অভিযোগ, পুরো ঘটনার পিছনে রয়েছেন বন্দরের এক অতি উচ্চপদস্থ কর্তা। গত রবিবার তাঁকে একটি ঠিকাদারের অফিসে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সেখানে ওই অতি উচ্চপদস্থ কর্তাও উপস্থিত ছিলেন। হলদিয়া বন্দর নিয়ে তাঁকে মাথা না-ঘামানোর হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের কাছে অবশ্য কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি ওই অফিসার। কেন করেননি? সদুত্তর মেলেনি রমাকান্তের কাছে।
হলদিয়া বন্দরের অচলাবস্থায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে কর্মচারীদের মধ্যে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে চিঠি লিখে তাঁর হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন বন্দরের চেয়ারম্যান। আবার এবিজি-কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়েছিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। কিন্তু কোনও তরফেই কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কেন?
রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “মারামারি কিংবা লাঠালাঠি হলে তবেই আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি। তা ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই।” বন্দরে যে-সমস্যা চলছে, তা শিল্প দফতরের দেখার কথা বলে দায় এড়িয়েছেন স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারা। তবে শিল্পমন্ত্রী পার্থবাবু বলেন, “চলতি সমস্যা নিয়ে আমার কাছে কেউ আসেনি। আগে বিভিন্ন সংস্থা যখন আমার কাছে সাহায্য চাইতে এসেছিল, আমি সব পক্ষকেই চুক্তি মেনে কাজ করতে বলেছিলাম।”
শিল্প দফতরের এক কর্তার মন্তব্য, “কলকাতা বন্দর কেন্দ্রের অধীন। বন্দরের ব্যাপারে রাজ্যের শিল্প দফতরের কোনও ভূমিকাই থাকতে পারে না।” |
|
|
|
|
|