চরম দারিদ্রকে সঙ্গী করেই বড় ফুটবলার হওয়ার
স্বপ্ন দেখে সুব্রত কাপের ‘ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট’
রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে কোচিং ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়া। বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে ফুটবল প্রশিক্ষক সৌরজিত ঘোষের কাছে প্র্যাকটিস সেরে বাড়ি ফেরা। বেশিরভাগ দিনই খাবার বলতে আলুসেদ্ধ আর ভাত। তা মুখে দিয়েই স্কুলে রওনা। ছোটবেলা থেকেই ইস্টবেঙ্গলে খেলার স্বপ্ন বুকে নিয়ে এভাবেই নিজেকে তৈরি করছে ১৪ বছরের সৌরভ। উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের কচুয়া লেকপাড়ার বাসিন্দা সৌরভ বিশ্বাস।
বাবা প্রশান্ত বিশ্বাস মুম্বইতে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করেন। বহুদিনের দরমার বেড়া আর টালির চালের ছোট্ট ঘরটা সম্প্রতি পাকা ঘর হয়েছে। সৌজন্যে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার গরিবরেদর গৃহনির্মাণ প্রকল্প। যদিও অনটনের সংসারে এর জন্য অনেক কষ্টেও কয়েক হাজার টাকা দিতে হয়েছে পুরসভাকে। দিদি রূপা দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট থেকেই লাল-হলুদ জার্সিটা বড় টানে সৌরভকে। ইস্টবেঙ্গলের খেলা থাকলে নাওয়া-খাওয়া ভুলে যাওয়া ছেলেটার মনে এ ভাবেই একদিন ঢুকে পড়ে সেই স্বপ্ন। যেখানে লাল-হলুদ জার্সি পড়ে মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সে। শুধু স্বপ্ন দেখা নয়, ইতিমধ্যেই যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে সৌরভ। দিল্লিতে সদ্য সমাপ্ত অনূর্ধ্ব ১৪ সুব্রত কাপ ফুটবলে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের সম্মান ছিনিয়ে এনেছে এই বঙ্গতনয়।
অনুশীলনে সৌরভ। ছবি: শান্তনু হালদার।
কিন্তু এর পর? আর পাঁচজনের মতো সেও হারিয়ে যাবে না তো? বর্তমানে এই আশঙ্কাই ঘিরে ধরেছে বিশ্বাস পরিবারকে। কারণ, সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বড় বাধা, সংসারের অভাবের পিছুটান। যদিও সহজে হাল না ছাড়ার জেদ সৌরভের মনে। ছেলের জেদ দেখে বাবা-মাও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যত কষ্টই হোক ছেলের জন্য তাঁরা সবরকম কষ্ট করতে প্রস্তুত। প্রশিক্ষক সৌরজিৎবাবুও শিষ্যকে নিয়ে গর্বিত। যাঁর আবার নেশা হল এলাকায় ঘুরে ঘুরে ক্ষুদে প্রতিভাদের তুলে এনে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। এ ভাবেই একদিন তাঁর নজরে পড়ে যায় সৌরভ। দিনের পর দিন তাকে ঘষে-মেজে চাবুক করে তুলেছেন তিনি। অশোকনগর-কল্যাণগড় বিদ্যামন্দিরের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রটি এ বার স্কুলের হয়ে দিল্লিতে সুব্রত কাপ ফুটবল টুনার্মেন্টে খেলতে গিয়েছিল। ফাইনালে নাগাল্যান্ডের স্কুলের কাছে তার স্কুল হেরে গেলেও সে নিজে হারেনি। প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড়ের সম্মান তুলে এনেছে সে। বাঁ পা থেকে কামানের গোলার মতো শট বেরোয়। পছন্দের জায়গা লেফট হাফ। সেরার স্বীকৃতি হিসাবে পেয়েছে ২৫ হাজার টাকা ও ট্রফি। যা দিয়ে তার ইচ্ছা ফুটবলের সরঞ্জাম কেনার। তবে সম্মান পেলেও মন ভাল নেই সৌরভের। কারণ, প্রতিযোগিতা থেকে জুনিয়র ভারতীয় দলের ট্রায়ালে তার দলেরই তিনজন সুযোগ পেলেও বাদ পড়েছে সে। তবে এই ঘটনা সৌরভকে কষ্ট দিলেও একই সঙ্গে জেদ বাড়িয়ে দিয়েছে ছেলেটার। সব ভুলে আরও কঠোর অনুশীলনে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছে সৌরভ।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.