নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা দেখা দিল জাতীয় নির্বাচক কমিটিতে পূর্বাঞ্চল প্রতিনিধি বাছা নিয়ে। সেটাই হয়ে গেল বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভার আগে শিরোনাম।
বোর্ডের শাসকগোষ্ঠী এখন এতটাই নিয়ন্ত্রণে যে বিরোধী বলে কার্যত কিছু নেই। এমনিতে এটা সেই চা-চানাচুরের নিস্তরঙ্গ বার্ষিক সাধারণ সভা। এ বার যে এ রকম আচমকা উত্তপ্ত হয়ে যাবে, বুধবার রাতের আগে কেউ আভাসই পায়নি। নাটক গড়িয়ে চলে মাঝরাত অবধি। জগমোহন ডালমিয়া এ দিন দেখা করেন শ্রীনিবাসনের সঙ্গে। তাঁকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা বহু বঞ্চিত হয়েছে। এ বার তারা সিনিয়র থেকে নিজেদের নির্বাচক চায়। আর জুনিয়রে চায় চেয়ারম্যান। সিএবি কর্মকর্তারা গত ক’দিন ধরেই আবিষ্কার করেন যে অরূপ ভট্টাচার্যের নাম পূর্বাঞ্চলের বাকি সংস্থারা মানছে না। অরূপের নাম পাশ করানো যাবে না দেখে তখন তাঁরা স্ট্র্যাটেজি নেন, জুনিয়র কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে অরূপের নাম প্রস্তাব করবেন। পূর্বাঞ্চল কর্মকর্তাদের ডাকা হয় বৈঠকে নাম চূড়ান্ত করার জন্য। চিরকাল সভার আগের রাতের বৈঠকেই নির্বাচকদের নাম চূড়ান্ত হয়ে যায়। এই প্রথম ব্যতিক্রম ঘটল। তার চেয়েও বিস্ময়কর, পূর্বাঞ্চলের বাকি কর্তারা সিএবির সঙ্গে বৈঠকে বসতেই রাজি হলেন না। ত্রিপুরা, অসম, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশার দাবি দেবাশিস মোহান্তিকেই নির্বাচক করতে হবে। বাংলা বহু বছর শাসন করেছে। প্রথমে স্থির হয় সন্ধে সাড়ে আটটায় ডালমিয়ার ঘরে বৈঠক হবে। তারপর ওড়িশার এক কর্মকর্তা ফোন করে বলেন, সময়টা তারা পেছতে চান। এর পরেও কেউ আসছেন না দেখে সিএবি কর্মকর্তারা বিস্মিত হয়ে যান। কিছু পরে আবার ফোন আসে। এক রাজ্য সংস্থার কর্তা বলেন, কাল সাড়ে দশটা-এগারোটা নাগাদ বৈঠক করে নেব। ডালমিয়া তখন রেগে গিয়ে বলেন, বারোটায় যেখানে সভা শুরু, এগারোটায় বৈঠক করার কোনও প্রয়োজন নেই। |
দেবাশিস: বাংলা বাদে
পূর্বাঞ্চল কর্তারা
তাঁর জন্য এককাট্টা। |
দেবাঙ্গ: দৌড়ে ভাল অবস্থায় রয়েছেন। এখন শ্রীনিবাসনের
ওপর তাঁর ভাগ্য নির্ভরশীল। |
দীপ: সিএবি-র পছন্দ, কিন্তু দেবাশিসকে আটকাতে গেলে
তিনিও আটকে যেতে পারেন। |
অরূপ: জুনিয়র নির্বাচন
কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত
হতে পারেন, সিনিয়রের নয়। |
|
সিএবি কর্তাদের কাছে ডার্ক হর্স হিসেবে অশোক মলহোত্রের নাম ছিল। তাঁদের ধারণা ছিল গন্ডগোল যদি হয়, অশোকের নাম অন্তত অন্য সংস্থার কর্তারা মেনে নেবেন। কিন্তু বাস্তবে তাঁরা আভাস পেয়েছেন, খোদ বোর্ড প্রধানের মলহোত্র সম্পর্কে কিছু আপত্তি রয়েছে। কারও কারও ধারণা, জাতীয় মিডিয়ায় তিনি বোর্ড সম্পর্কে খুল্লমখুল্লা সমালোচনা করায় এই উষ্মা। সিএবি-র পড়ে থাকছে তাই দুই প্রতিনিধি। দীপ দাশগুপ্ত এবং দেবাঙ্গ গাঁধী। সিএবি প্রথমে চাইছিল দীপকে। যদিও বোর্ডের সংবিধানে নিয়ম আছে যে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পাঁচ বছর আগে অবসর নিয়েছেন একমাত্র এ রকম কেউই বিবেচিত হতে পারেন জাতীয় নির্বাচক হিসেবে। এই আইনে দীপ খারিজ হয়ে যাচ্ছেন। তিনি খেলা ছেড়েছেন ২০১০ সালে। দেবাশিস মোহান্তিও তাই। ওড়িশার প্রস্তাব হল, কাল বৈঠকে নিয়মটা তুলে নেওয়া হোক। যাতে মোহান্তির আর নির্বাচক হতে কোনও বাধা না থাকে। সিএবি বলছে নিয়ম তোলার দরকার নেই। দীপ না হতে পারুন, অন্তত দেবাঙ্গ হয়ে যান। নির্বাচক বাছতে গিয়ে এ রকম প্যাঁচালো পরিস্থিতি পূর্বাঞ্চল ক্রিকেটে কস্মিনকালে হয়নি। শ্রীনিবাসন শেষমেশ বলেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি নিজে। তবে পূর্বাঞ্চলের অন্য রাজ্য সংস্থারা যে ভাবে চাপ দিচ্ছে, তাতে সিনিয়র সিলেক্টর এবং জুনিয়র চেয়ারম্যান দুটোই দিতে পারবেন কি না ভেবে দেখবেন।
উত্তরাঞ্চলে এক রকম অনিশ্চয়তা চলছিল মোহিন্দর অমরনাথকে ঘিরে। রাতের দিকে শোনা যাচ্ছে সেই চেতন চৌহানকেই চাইছেন উত্তরাঞ্চল কর্তা অরুণ জেটলি। আলোচনায় এসেছে বিক্রম রাঠৌরের নামও।
নির্বাচক বাছা নিয়ে যা নজিরবিহীন পরিস্থিতি, তাতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সুপার এইট ম্যাচে ভারতের কোন একাদশ খেলবে, সেই পূর্বাভাস করাটা বরং সহজ! |