আমি, ট্রেভর জেমস মর্গ্যান, ঈশ্বরের নামে, ফুটবলের নামে শপথ করে বলছিযত দিন আমি কোচ থাকব, আমার টিম ইস্টবেঙ্গল কোনও রকম ম্যাচ গড়াপেটার সঙ্গে জড়াবে না। আমি না থাকলেও জড়াবে না।
শুধু তাই নয়। যদি কোনও দিন জানতে পারি আমার অজান্তে দল গড়াপেটায় জড়িয়েছে, সে দিন থেকে আমার কাছে কোচের চাকরিটার কোনও মানে থাকবে না।
জানি কথাগুলো বেশ কড়া। কিন্তু আমার মনে হয়েছে কারও অন্তত এই ফালতু অভিযোগের জবাব দেওয়ার সাহস দেখানো উচিত। সত্যি বলতে কী, গতকাল আমরা সেমিফাইনালে ওঠার পর থেকেই এই আষাঢ়ে গল্পগুলো আমার কানে আসছে। আরও একটা সত্যি কথা বলি। এ সবে আমার কিচ্ছু যায়-আসে না। কারণ যখনই আমরা গড়াপেটার কথা শুনেছি, ম্যাচের স্কোরলাইন প্রায় সব সময়ই ১-০ বা ২-০ থেকেছে। অথচ কাল কী হল? ম্যাচের দশ মিনিটের মধ্যে ০-২ পিছিয়ে থেকে জেতা দলের বিরুদ্ধে গড়াপেটার অভিযোগ উঠছে, এ রকম জীবনে দেখিনি। মিথ্যে কথাগুলো বলার আগে অন্তত দু’বার ভেবে তো দেখবে!
ইংল্যান্ডে আমি জর্জ বেস্টের মতো তারকাদের সঙ্গে খেলেছি। ওই দেশে ফুটবল খেলাটা এত সম্মানের জায়গায় রয়েছে যে আমি ওখানে একটাও ম্যাচ গড়াপেটা হতে দেখিনি। মনে রাখবেন, ইংল্যান্ডে কিন্তু জুয়া খেলাটাও বেআইনি নয়। ওই সংস্কৃতিতে বড় হয়েছি বলে জোর দিয়ে বলতে পারছি, ওখানে ম্যাচ গড়াপেটা করাটা অধর্ম। যে ফুটবল ভালবাসে, সে কখনও গড়াপেটায় জড়াতে পারে না। |
কালকের ম্যাচের কথায় ফিরি। যাঁরা স্টেডিয়ামে ছিলেন তাঁরা সবাই স্বীকার করবেন, ওই দুটো পেনাল্টি আমাদের প্রাপ্য ছিল। শুনছি আনন্দবাজারের প্রতিবেদকও লিখেছেন, দুটো নয়, আমাদের তিনটে পেনাল্টি পাওয়া উচিত ছিল। আমি তো এ-ও বলব যে এই সমস্যাগুলো আরও ফুলে-ফেঁপে উঠছে কারণ ভারতের কোটি-কোটি ফুটবল ভক্তরা টিভিতে ফেড কাপ দেখতে পারছে না। যদি আপনারা টিভিতে ম্যাচটা দেখতে পারতেন তা হলে আপনারাও জানতেন ওই পেনাল্টিগুলো আমাদের প্রাপ্য ছিল। আপনারাও বুঝতে পারতেন গড়াপেটার অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন। ম্যাচগুলো লাইভ দেখাচ্ছে না বলে যা হচ্ছে তা হল, মাঠে উপস্থিত কয়েকজনের মতামতটাই আমজনতার কানে পৌঁছচ্ছে। আর কে বলবে সেই মতামতগুলোয় পক্ষপাত নেই?
আরও বড় কথা হল, ফেড কাপ ভারতের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টগুলোর একটা। এই টুর্নামেন্ট যারা জিতবে তারা আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। এ রকম টুর্নামেন্টের জন্য এআইএফএফ যদি একটা টিভি স্পনসর জোগাড় করতে পারত, ভাল হত। আর টিভিতে ম্যাচ দেখালে সেটা ফুটবলারদের তো মোটিভেট করতই, খেলার মানও অনেক বাড়ত।
টুর্নামেন্টটা যখন এত বড় মাপের, তখন মাঠের মানও সে রকম হওয়া উচিত ছিল। তা-ও এখন বৃষ্টি কমেছে বলে মাঠের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। না হলে প্রথম দুটো ম্যাচে মাঠের অবস্থা জঘন্য ছিল। নাহ, জঘন্য বললেও খুব কম বলা হয়। আরও শুনবেন? মাঠের ঠিক মধ্যিখানে আছে একটা ক্রিকেট পিচ! যেটা প্রায় কংক্রিটের মতো খটখটে। ঈশ্বর না করুন কোনও ফুটবলার ওই কংক্রিটের উপর আছাড় খায়। তা হলে মুহূর্তের মধ্যে তার মাথা ফেটে যাওয়া একেবারে নিশ্চিত!
যাক গে, এখন আর অতীত ঘাঁটব না। চার্চিলের বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল ছাড়া আর কিছু নিয়ে এখন ভাবতেও চাই না। চিডি যে দুর্দান্ত ফর্মে আছে সেটা কোচ হিসেবে আমার কাছে দারুণ খবর তো বটেই, লাল-হলুদ ভক্তদের জন্যও স্বস্তির কারণ।
কয়েক মাস আগে অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন, চিডি টোলগের বিকল্প। খুব ভুল ভেবেছিলেন। টোলগে আর চিডির খেলার ধরন একেবারে আলাদা। টোলগের গতি অনেক বেশি। ও ডিরেক্ট ফুটবল খেলে। অন্য দিকে চিডি খেলাটা ‘বিল্ড-আপ’ করে। ও নিজেই শুধু গোল করতে পারে না, অন্যদের জন্যও গোল সাজিয়ে দেয়। সেমিফাইনালে চিডিকে আমার প্রচণ্ড কাজে লাগবে।
ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের বলছি, আপনাদের আস্থার মর্যাদা রাখতে আমার টিম প্রাণপণ লড়বে। |