পিকের পথ নিতে পারেন দুই কোচই
কিক অফের আগেই শুরু মর্গ্যান বনাম সুভাষ ‘ম্যাচ’
ক্ষুরধার বুদ্ধির এক ব্রিটিশ কোচ বনাম ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সফল এক ক্লাব কোচের ধুরন্ধর স্ট্র্যাটেজি।
‘ফ্রিকিক মাস্টার’ বেটো দ্য সিলভা বনাম ‘পেন্ডুলাম’ পেন ওরজি।
সাপের মতো এঁকেবেঁকে বিপক্ষের বক্সে ঝাঁপিয়ে পড়ায় ওস্তাদ এডে চিডি বনাম শিলিগুড়িতে এসেই মাত্র তিন ম্যাচে আলোড়ন ফেলে দেওয়া স্টপার লেবাননের বিলাল।
মেহতাব হোসেনের আগুনে মেজাজ বনাম লেনি রডরিগেস-তোম্বা সিংহদের নাছোড় দৌড়।
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সেমিফাইনালে ওঠা ইস্টবেঙ্গল বনাম তেলের মতো মসৃণ ভাবে শেষ চারে যাওয়া চার্চিল ব্রাদার্স।
বৃহস্পতিবারের কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে যেন নানা যুদ্ধের কোলাজ। যুদ্ধে নামার আগেই বাংলা এবং গোয়া শিবির থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে নিজস্ব কায়দায় গোলাগুলি ছোড়া। ট্রেভর মর্গ্যান যেমন প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন, “কে সুভাষ? কাল খেলবে নাকি? খেলবে তো ফুটবলাররা।” তেমনই চার্চিল কোচ বলে দিয়েছেন, “পারফর্মারদের যা দেখাতে হয় তা মাঠেই।” কিছুক্ষণ পর হোটেলের লবিতে বসে সেই চ্যালেঞ্জকে আবার গ্রহণ করে বসেছেন লাল-হলুদ কোচ, “আমাদের খেলা নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। কে কী বলছে জানি না। জানি, মাঠই প্রমাণ করার সেরা জায়গা। সেখানেই আমার ছেলেরা যা করার করবে।”
দুই মেজাজে দু’দলের দুই গোলমেশিন
ফেড কাপ সেমিফাইনালের আগের দিন বেটো এবং চিডি।
ফেড কাপ সেমিফাইনালের আগে পারফরম্যান্স-গ্রাফ যদি আঁকা হয়, তা হলে সেটা গোয়ার ক্লাবের পক্ষেই যাবে। ফুটবলের নক-আউট ম্যাচ অবশ্য অনেকটা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মতো। কোথায় একটা গোল হয়ে যাবে, কোথায় একটা পেনাল্টি দিয়ে দেবেন রেফারি। কোন ফুটবলার চোট পেয়ে বা লাল-কার্ড দেখে বাইরে চলে যাবেন, কেউ জানে না। ম্যাচ টাইব্রেকারে গেলে তো কোনও অঙ্কই খাটে না। ফলে, তারকা খেলোয়াড় টিমে থাকা বা পুরনো পারফরম্যান্সের কোনও প্রভাব এতে পরে না। তা সত্ত্বেও ম্যাচের আগের দিন দুই শিবিরের ছবি যদি কোনও ভবিষ্যৎবার্তা বহন করে তা হলে লিখতেই হচ্ছে, দু’টিমের কোচের সঠিক অঙ্কের ওপরই নির্ভর করছে সব কিছু। এবং তীব্র চাপে রয়েছে দু’দলই।
চব্বিশ মাসের লাল-হলুদের কোচিং জীবনে এই প্রথম বার মর্গ্যানের মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে, “আমরা আন্ডারডগ। এখানে যে আটটা টিমের খেলা দেখলাম এখানে, তার মধ্যে সবচেয়ে ব্যালান্সড দল চার্চিল। ওদের বেটো খুব ভাল ফর্মে আছে। লেবানিজ স্ট্রাইকার আক্রম আর স্টপার বিলাল খুব ভাল খেলছে।” হতে পারে এটা মর্গানের নতুন ট্যাকটিক্স। কিন্তু ধুরন্ধর সুভাষ কি এতে ভোলার লোক? মর্গ্যান যদি হন ‘বুনো ওল’ তা হলে সুভাষ ‘বাঘা তেঁতুল’। “ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগান বড় দল। ওদের আমি মাথার ওপরে রাখি। আমরা একটা লক্ষ্য নিয়ে খেলতে এসেছি। হলে ভাল, না হলে দুঃখ নেই,” অতি বিনয়ী হয়ে বলে দিয়েছেন নিউ আলিপুর ছেড়ে অধুনা গোয়ার বেনোলিনা নিবাসী সুভাষ। বোঝাই যায়, এই বিনয় আসলে চাপ কাটানোর কৌশল।
চার্চিলের প্র্যাক্টিসে ডিফেন্সের প্রধান ভরসা বিলাল।
গত কালই হাড্ডাহাড্ডি গ্রুপ লিগ ম্যাচ খেলায় ইস্টবেঙ্গল এ দিন অনুশীলন করেনি। চিডি-ওপারা-পেন-মেহতাবরা সময় কাটালেন জিমে। সুইমিং পুলে। মর্গ্যান অভিযোগ করেছেন, “এ রকম সূচি হয়েছে আমি জানতামই না। ক্লাবের কেউ জানায়নি। ছ’দিনে চারটে ম্যাচ। ফুটবলারদের রিকভারির সময় কোথায়?” ইস্টবেঙ্গল শিবিরে অধিনায়ক ছাড়া সব ফুটবলারের কথা বলার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। চার্চিলে অবশ্য সে সব নেই। প্রদীপ বন্দ্যোপাধায়ের ধারা মেনে সবাইকে ‘মুক্ত’ করে দিয়েছেন সুভাষ। আর সেই সুযোগে ইস্টবেঙ্গলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসলেন চার্চিল অধিনায়ক বেটো। তোপ দাগলেন রেফারিং নিয়ে। “আমাদের ডিফেন্ডাররা ওডাফা-টোলগেকে আটকেছে, চিডি-বলজিৎকেও আটকাবে। আমরাই জিতব। কেউ আটকাতে পারবে না। নব্বই মিনিটেই খেলা শেষ হয়ে যাবে। তবে একমাত্র চিন্তা রেফারিং। এখানে তিন ম্যাচে চারটে পেনাল্টি পেয়েছে ইস্টবেঙ্গলই। এখনও পর্যন্ত রেফারির কাছ থেকে ওরাই সবথেকে বেশি সাহায্য পেয়েছে।” যা শুনে আবার মর্গ্যান বলছেন, “পেনাল্টি হলে রেফারি কী করবে? অন্য দিকে তাকিয়ে থাকবে?”
সীমা সুরক্ষা বলয়ের মাঠে সকালে ঘণ্টা দেড়েকের অনুশীলনে টিমের স্ট্র্যাটেজি আরও নিখুঁত করতে চেয়েছেন সুভাষ। পেন্ডুলামের মতো এ দিক-ও দিক করে বিপক্ষ গোলমুখ খুলে ফেলার ‘যন্ত্র’ পেনকে কী ভাবে আটকানো হবে তার কৌশল শিখিয়েছেন ছাত্রদের। চিডির হঠাৎ টার্নিং আটকাতে লেবানিজ বিলালকে পাঠ দিয়েছেন। সেটপিস, পেনাল্টি কিক প্র্যাক্টিস করিয়েছেন।
এক্স ফ্যাক্টর ইস্টবেঙ্গল এক্স ফ্যাক্টর চার্চিল ব্রাদার্স সেয়ানে সেয়ানে
মিডফিল্ডারদের ঝড় বেটোর ফ্রি কিক চিডি বনাম বিলাল
মর্গ্যান যা করেছেন ক্লাসরুমের বোর্ডে। ইস্টবেঙ্গল কোচের স্ট্র্যাটেজির যা খবর ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে আসছে তাতে, বিপক্ষের সেরা অস্ত্রকে অকেজো করার জন্য নিজের সেরা অস্ত্রদের বলি দিতেও প্রস্তুত মর্গ্যান। চার্চিলের খেলাটা বিলাল থেকে তৈরি হচ্ছে বলে তাঁর ঘাড়ে তুলে দেওয়া হবে চিডিকে। বেটোর পিছনে লাগানো হচ্ছে মেহতাবকে। ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার কোচ অতনু ভট্টাচার্য বলছিলেন, “প্রচণ্ড চাপের ম্যাচ প্রদীপদা এ রকম ট্যাকটিক্সেই অনেক বার বের করেছেন। মর্গ্যানও হয়তো সেটাই করবে।”
মর্গ্যান বনাম সুভাষ এর আগে হয়েছে দু’বার। বছরখানেক আগে। মোহনবাগানের ভঙ্গুর টিম নিয়ে একবার ইস্টবেঙ্গলকে রুখে দিয়েছেন। আর একবার হেরেছেন সুভাষ। আজ শিলিগুড়িতে ১-১ করার সুযোগ চার্চিল কোচের সামনে। টগবগে একটা টিম এ বার কিন্তু সুভাষের সঙ্গী। ইস্টবেঙ্গলকে আসিয়ান জেতানো কোচ পারবেন লাল-হলুদের ফেড কাপ জয়ের স্বপ্ন চুরমার করে দিতে? না, মর্গ্যান ব্রিগেড বাংলা ফুটবলের ধ্বজা ওড়াবেন গোয়ার চ্যালেঞ্জ টপকে?

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

আজ ফেড কাপ সেমিফাইনালে
ইস্টবেঙ্গল : চার্চিল ব্রাদার্স (শিলিগুড়ি, সন্ধে ৬-৩০)




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.