নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে দফতরের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে তৃণমূল নেতারই দ্বারস্থ হলেন যুব কল্যাণ দফতরের আধিকারিক। দফতরের প্যাডে চিঠি লিখে ওই নেতার কাছে আধিকারিকের আর্জি, ‘যুব কল্যাণ দফতরের কাজে বাধা প্রাপ্ত প্রকল্পগুলি যাতে রূপায়িত করা যায়, সেই জন্য আপনার নিকট আবেদন জানাচ্ছি।’ এই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে ডেবরায়। তৃণমূলের অন্দরেও চাঞ্চল্য।
যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন রেখে ২০ সেপ্টেম্বর যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক বিবেক মুখোপাধ্যায়ের কাছে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে বলে দফতরেরই এক সূত্রে খবর। চিঠিটি পাঠিয়েছেন যুব কল্যাণ দফতরের ডেবরা ব্লকের আধিকারিক কালীপদ দিন্দা। কালীপদবাবু বলেন, “সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ করবেন, এই আশায় ওঁর কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। ফোনেও কথা হয়েছে।” তবে চিঠিটি তাঁর কাছে পৌঁছয়নি বলে জানিয়েছেন বিবেকবাবু। তাঁর বক্তব্য, “উনি ফোন করেছিলেন। কিছু সমস্যার কথা বলেছিলেন। আমি বলেছি, যাঁর সঙ্গে মতপার্থক্য রয়েছে বলে মনে করছেন, তাঁর সঙ্গেই কথা বলুন। আমার কিছু করণীয় নেই।” ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতি অবশ্য বলেন, “আমার সঙ্গে ওঁর কোনও ঝামেলা হয়নি।”
সরকারি প্রকল্পের কাজ কী ভাবে এগোবে, তা নিয়েই বিধায়কের সঙ্গে যুব আধিকারিকের ‘মতবিরোধ’ দেখা দেয়। জেলার প্রতিটি ব্লকে মিনি ইন্ডোর স্টেডিয়াম, মাল্টিজিম তৈরির পরিকল্পনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ দেবে যুব কল্যাণ দফতরই। সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রতিটি ব্লকের বিডিওদের কাছে একটি নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) রজতকুমার সাইনি। তাতে বলা হয়েছে, যুব কল্যাণ দফতরের ব্লক আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে। এবং সেপ্টেম্বরে মধ্যে ওই প্রস্তাব লিখিত ভাবে যুব কল্যাণ দফতরের জেলা আধিকারিককে পাঠিয়ে দিতে। ওই নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রতিটি ব্লকে একটি করে মিনি ইন্ডোর স্টেডিয়াম বা রিক্রিয়েশন কমপ্লেক্স তৈরি হবে। ২-৩টি মাল্টিজিম তৈরি করা হবে। আর ২টি করে খেলার মাঠের উন্নতিকরণ করা হবে। |
যুব কল্যাণ আধিকারিকের চিঠি।—নিজস্ব চিত্র। |
কোথায় মাঠের উন্নতিকরণ হবে, কোথায় মাল্টিজিম তৈরি হবে, তা নিয়েই বিধায়কের সঙ্গে যুব আধিকারিকের ‘মতবিরোধ’ দেখা দেয় বলে দফতরের এক সূত্রে খবর। তৃণমূল নেতার কাছে পাঠানো চিঠিতে আধিকারিকে লিখেছেন, ‘এমনিতেই পিছিয়ে পড়া পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা। আবার এই ব্লকে প্রকল্প রূপায়িত না হওয়ার জন্য সাধারণের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হতে চলেছে, তা আপনাকে অবগত করা প্রয়োজন ভেবেই দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’ তাঁর বক্তব্য, “এ ক্ষেত্রে মা-মাটি-মানুষের সরকারের আদেশনামা অনুযায়ী প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত করতে গিয়ে জনপ্রতিনিধি হয়েও ডেবরার বিধায়ক বাধার সৃষ্টি করছেন।” চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘আমি ওঁকে আদেশনামা দেখালেও উনি দেখেননি। আবেদনে সুপারিশ না করে সকলের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে ফিরিয়ে দেন। ১৫ তারিখে ফোন করে বলেন, আপনি অপদার্থ অফিসার। বাধ্য হয়ে আমি পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতাকে ফোন করে জানাই।’
ডেবরা পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতার পদে রয়েছেন তৃণমূলের রতন দে। রতনবাবুই ব্লক তৃণমূলের সভাপতি। তিনি বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। ফোনে ওই আধিকারিকের সঙ্গে কথা হয়েছিল। একদিন বিডিও অফিসে গিয়েও দেখা হয়। আমার মনে হয়, ভুল বোঝাবুঝির ফলেই একটা সমস্যা হয়েছিল।” বিধায়কের সুপারিশে যে আগেও কাজ হয়েছে, চিঠি থেকে তাও পরিস্কার। চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘ঘটনা প্রসঙ্গে আপনার অবগতির জন্য জানাই, বিবেক মেলার আগে ৬ টি ক্লাবকে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২ লক্ষ টাকা করে ক্রীড়া দফতর থেকে দেওয়া হয়েছিল। বিধায়ক মহোদয় ওই টাকার চেক নিয়ে এসে বিবেক মেলায় প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ভেবেছেন, এ বারেও সেই রুপ নিজের মনোনীত প্রতিষ্ঠানগুলিকে সুপারিশ করে পুনরায় নিজের হাতে চেক দেবেন। কিন্তু, এটা যে যুব কল্যাণ দফতরের প্রকল্প, তা বোঝানোর সুযোগ দেননি।’ বিধায়কের দুর্ব্যবহারে তিনি ‘মর্মাহত’ বলে চিঠিতে উল্লেখ করলেও এ নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে নারাজ ওই আধিকারিক। বুধবার তিনি বলেন, “ভুল বোঝাবুঝির ফলে সমস্যা হয়েছিল। আর কিছু বলব না।” |