নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পুকুরে স্নান করতে নেমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল দুই ভাইয়ের। বুধবার দুপুর একটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে লিলুয়ার তেঁতুলতলা এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম রামপ্রসাদ বাগ (১৩) ও বিকাশ বাগ (১৬)। একই ঘটনায় গুরুতর জখম হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে সৌরভ শর্মা (১৪) নামে আর এক কিশোরকে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুপুর একটা নাগাদ রামপ্রসাদ ও বিকাশ তেঁতুলতলার একটি পুকুরে স্নান করতে নামে। সঙ্গে নেমেছিল সৌরভও। ওই পুকুরটি বেশ বড় এবং তাতে রঙিন মাছের চাষ হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাছের চাষ হওয়ার কারণেই ওই পুকুরে জাল ফেলা থাকে। এ দিনও জালটিকে টানটান করে রাখতে সেটি লোহার তার দিয়ে একটি বিদ্যুৎস্তম্ভের সঙ্গে বেঁধে রাখা ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রামপ্রসাদ ও বিকাশ জালে লাগানো লোহার তারটি ধরতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তলিয়ে যায়। তারে হাত দিয়ে সৌরভও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। তবে কোনও মতে সে সাঁতরে পাড়ে উঠে আসে।
স্থানীয় বাসিন্দা পিয়ালী মণ্ডল পুকুর সংলগ্ন এলাকায় একটি বিউটি পার্লার চালান। তিনি বলেন, “একটা কাজে পার্লারের বাইরে বেরিয়েছিলাম। দেখি, দু’টো ছেলে তারে হাত দিয়ে ঝুলছে আর ছটফট করছে। তারটি যে পোস্টের সঙ্গে বেঁধে রাখা ছিল, তা থেকে আগুনের ফুলকি বেরোচ্ছে। ভয়ে চিৎকার করতে থাকি।” পিয়ালীর চিৎকারে ছুটে আসেন পাড়ার লোকেরা। আর এক স্থানীয় বাসিন্দা অচিন্ত্য ঘোষ বলেন, “একটা বাঁশ এনে আমরা তার থেকে ওদের ছাড়ানোর চেষ্টা করি। কিন্তু সম্ভব হয়নি। ওরা তলিয়ে যায়। সৌরভ কোনও ভাবে সাঁতরে আসে। ওর হাত দু’টো ঝলসে গিয়েছে।” পরে জাল ফেলে রামপ্রসাদ ও বিকাশকে উদ্ধার করা গেলেও হাসপাতাল তাদের মৃত ঘোষণা করে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানায়, বিদ্যুৎস্তম্ভের সঙ্গে মাছ ধরার জালের যে তারটি জড়ানো ছিল, সেটি কোনও ভাবে স্তম্ভের একটি খোলা তারের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। তার ফলেই জালের তারটি বিদ্যুৎবাহী হয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রশ্ন উঠেছে, ওই বিদ্যুৎস্তম্ভে খোলা তার ছিল কেন? বাসিন্দারা জানান, রাতে এলাকার পথ আরও আলোকিত করতে বেশ কিছু বিদ্যুৎস্তম্ভে টিউবলাইট লাগানো হয়েছে। সেগুলি রয়েছে ওই সব স্তম্ভের মাঝামাঝি। বাসিন্দারাই আলোগুলি লাগিয়েছেন। ঘটনাস্থলের টিউবলাইট থেকে কোনও তার বেরিয়ে ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন পুকুরে জাল ফেলেন পল্টু দাস নামে জন। সেই জালটিরই তার বিদ্যুৎস্তম্ভে জড়ানো ছিল। ঘটনার পর থেকেই পল্টুর খোঁজ নেই। তাঁর খোঁজ করছে পুলিশ।
রামপ্রসাদ ও বিকাশের বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তিনি বলেন, “দু’জনেই ভাল সাঁতারু। কী করে এমন ঘটল? আমার দু’টোই ছেলে। ভাবতে পারছি না ওরা আর নেই!”
|