|
|
|
|
সন্ত্রাসের শিকার উদ্বাস্তু মানুষরা এখনও দিশাহারাই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আগরতলা |
আয়েষা খাতুন, বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। চোখেও স্পষ্ট দেখতে পান না। মহেন্দ্রচন্দ্র পাল, বয়স ৭২, দেহ-মনে বাহাত্তুরের সব লক্ষণ স্পষ্ট। টিঙ্কু বৈশ্য, ইনিও সত্তর পেরিয়ে গিয়েছেন। এঁরা প্রত্যেকেই ত্রিপুরার উগ্রপন্থী হামলায় দশ-বারো বছর আগে স্বজন হারিয়ে ঘর-বাড়ি ছেড়ে স্বভূমিতেই ‘উদ্বাস্তু’। রাজ্যর কাছ থেকে পুনর্বাসন ও আর্থিক সহায়তার দাবিতে আজও তাঁরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, ‘গাঁধীবাদী আন্দোলন’-এর পথে। প্রত্যেক্যের প্রতিবাদের ভাষা আজ একআমরণ অনশন। পশ্চিম জেলা উদ্বাস্তু উন্নয়ন কমিটির নেতৃত্বে এই আন্দোলন শুরু হয়েছে শহরের আস্তাবল মাঠ সংলগ্ন এলাকায়।
১৯৯৬ সাল থেকে এটিটিএফ, এনএলএফটি ইত্যাদি উগ্রপন্থী সংগঠনের সদস্যদের আক্রমণে ভীত, সন্ত্রস্ত্র হয়ে প্রায় সাড়ে তিন-চার হাজার বাঙালি হিন্দু এবং বাঙালি মুসলিম পরিবার পশ্চিম ত্রিপুরার অমরপুর, তৈদু, জম্পুইজলা, গাবার্দি, কুমারঘাট, টাকারজলার নিজস্ব বাড়িঘর, জমি-জায়গা ফেলে শহরমুখী হয়ে কোনও রকমে দিন গুজরান করে চলেছেন। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে তিন-চার হাজার বাস্তচ্যুত পরিবারের ১৩-১৪ হাজার সদস্য সিপাহীজলা-সহ পশ্চিম জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করছেন।
পশ্চিম জেলা উদ্বাস্তু উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক গোপাল নস্কর জানান, ‘‘আমাদের দাবি দাওয়া নিয়ে ২০০২ সাল থেকে বহু ডেপুটেশন, স্মারকলিপি, চিঠি-চাপাঠি পাঠিয়েছি জেলাশাসক-সহ রাজ্য সরকারের বহু দফতরে। আজও আমাদের সমস্যার সমাধান হল না।’’ কমিটির প্রতিনিধিরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সঙ্গেও দেখা করে তাঁদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। সে কথাও স্বীকার করলেন রাজস্ব দফতরের সচিব স্বপন সাহা। কেউ কেউ সরকারি সাহায্য পেলেও এখনও কিছু পরিবার তা থেকে বঞ্চিত, সে কথা তাঁর কথায় স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গি হামলার শিকার, অসহায় বাস্তুচ্যুত পরিবারের সঙ্গে সরকারি প্রতিনিধিদের কোথায় যেন কোনও দূরত্ব তৈরি হয়েছে। পশ্চিম জেলাপ্রশাসন তা নিরসনে উদ্যোগী হয়েছে।’’
সন্ত্রাসবাদী হামলায় গৃহচ্যূত সরোজিনী রায়ের অভিযোগ, ‘‘পরিবারের এক সদস্যকে উগ্রপন্থীরা খুন করল। এখনও আমরা নিঃস্ব হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আর উগ্রপন্থীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য রাজ্য সরকার এক কদম এগিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।’’ টাকারজলা বাজার থেকে রাধু মালাকার-সহ সাত জনকে সন্ত্রাসবাদীরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল ১৯৯৯ সালে। মধ্যবয়স্ক রাধু জানালেন, ‘‘জঙ্গিরা পরে সাত জনকে মুক্তি দিলেও, নিজের ভিটেয় আর ফিরে যেতে পারিনি।’’
উদ্বাস্তু কমিটির তরফে রাজ্য সরকারের কাছে যে যে দাবি করা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ, বিপিএল কার্ড প্রদান ইত্যাদি। এ ছাড়াও দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে: স্বামী পরিত্যক্ত, বয়স্ক ব্যক্তি, বিধবা এবং শারীরিক ভাবে পঙ্গুদের জন্য সরকারি ভাতা।
রাজ্যের রাজস্বসচিব স্বপন সাহা উগ্রপন্থী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির দাবি বিষয়ে সচেতন। দাবিগুলির যৌক্তিকতা স্বীকার করে নিয়েই তাঁর বক্তব্য, ‘‘তাঁদের দাবির সমর্থনে উপযুক্ত তথ্যাদি দেওয়ার জন্য পশ্চিম জেলার জেলাশাসক উদ্বাস্তু উন্নয়ন কমিটির প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন। বিষয়টি আমরা দেখছি।” |
|
|
|
|
|