...গন্ধ এসেছে
এক হাতে অনেক পুজোয় ‘মান’
রাখা কঠিন, মানছেন শিল্পীরাই

কেউ বাতিল করছেন বিদেশের চিত্র প্রদর্শনী, কারও শেষ বেলার ভরসা মোটরবাইক, কেউ কাজ শুরু করছেন এপ্রিল-মে মাস থেকেই। তবু প্রত্যেকেই মানছেন, একাধিক পুজোর কাজ করতে গিয়ে কোথাও একটা আপস করতেই হয়। সব পুজো তাঁদের চোখে ‘লেটার মার্কস’ পায় না। তবে চাহিদা আর পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে ‘একাধিক সন্তান’-কে সমান গুরুত্ব দিতে মরিয়া চেষ্টা চালান তাঁরা।
শিল্পী ভবতোষ সুতার যেমন এ বার কাজ করছেন তিনটে পুজোয়। শহরের তিন জায়গায় তিনটে পুজোতেই কি সমান গুরুত্ব দিতে পারছেন? ভবতোষবাবুর অকপট স্বীকারোক্তি, “বাস্তবে সম্ভব হয় না। আমরা তো ডেকরেটরদের মতো নির্দেশ দিয়ে কাজ করি না। হাতেকলমে কাজ করতে হয়। হয়তো কোনওটাকে একশোয় নব্বই দেব, তো কোনওটাকে ষাটের বেশি নয়। গত বছর একটা প্রতিমার কাজ শুরু করেছিলাম আট মাস আগে। কোনওটার কাজ শুরু হয়েছে তিন মাস আগে। মানের কিছুটা হেরফের তো হবেই।” কিন্তু তা সত্ত্বেও একাধিক পুজোর কাজ তাদের নিতেই হয় বলে জানালেন শিল্পী। কারণ হিসেবে জানালেন, তাঁর কাজের সঙ্গে অন্তত দুশো লোকের কর্মসংস্থান জড়িয়ে। সকলের কথা ভাবতে গেলে একাধিক কাজ নিতেই হয়। তবে ভবতোষবাবু সাফ জানিয়েছেন, তিনটে বা চারটে পুজোর কাজ করতে পারি কিন্তু তার বেশি নয়।
শিল্পী সনাতন দিন্দাও মনে করেন একাধিক কাজ করলে মানের সঙ্গে কিছুটা আপস করতে হয়। তবে তাঁর দাবি, তিনি চেষ্টা করেন নিজের সেরাটা দিতে। এবং তা করতে গিয়ে আত্মত্যাগও করতে হয়, বলছেন তিনি। সনাতনবাবু জানালেন, এ বার দুটো পুজো করতে গিয়ে প্যারিসে নিজের প্রদর্শনী পর্যন্ত বাতিল করেছেন। দু’টোকে সমমানের করতে গিয়ে একটি পুজোর কাজ শুরু করে দিয়েছেন, মে মাস থেকেই। কারণ, দুটোই তার কাছে এখন যমজ সন্তানের মতো, যার কাউকেই হেলাফেলা করা যায় না। “একাধিক কাজ করতে গেলে কাজের মান সমান হবে না। কোনওটা বেশি ভাল কোনওটা বা একটু খারাপ হবেই। কিন্তু অবহেলা কোনওটাকেই করি না। মনে রাখি, লক্ষ লক্ষ মানুষ আমাদের পুজোর কাজ দেখেন। দুর্গাপুজোতে সাধারণ মানুষের ভালবাসা যতটা পাওয়া যায়, সে রকম ভালবাসা প্রদর্শনীতে পাই না।”
আর এক শিল্পী অমর সরকার আবার মনে করেন টিমওয়ার্ক ঠিক থাকলে একাধিক কাজও ভাল করা যায়। এ বার শহরের চার দিকে চারটে পুজোর দায়িত্বে। শিল্পী বলেন, “যদি আমার সঙ্গে ডেকরেটর, লাইটিং বিভাগের লোকেরা সমান তালে কাজ করেন, খুব একটা অসুবিধা হয় না। তবে এটা ঠিকই যে, চারটে পুজো একসঙ্গে করলে একটা দুশ্চিন্তা থাকেই। বিশেষত পুজোর আগে বৃষ্টি বা দুর্যোগ হলে কাজে অসুবিধা হয়।” তবে দমে যাওয়ার পাত্র নন অমরবাবু। জানালেন, শেষের দিকে তাঁর ভরসা মোটরবাইক। যাতে কম সময়ে শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে চলে যাওয়া যায়। তাঁর মতে, ‘টাইম ম্যানেজমেন্ট’ করতে পারলে সব পুজো সম মানের না হলেও একটা নির্দিষ্ট মানের থেকে খারাপ হয় না। একই বছরে করা তিনটে বা চারটে পুজো ‘সুপারহিট’ হতেই পারে।
শিল্পী পূর্ণেন্দু দে-র মতে আবার একাধিক কাজ করতে করতে কোনও একটা কাজ যেন নিজে থেকেই ভাল হতে থাকে। তিনি বলেন,“একাধিক কাজ করলে সব কাজে সমান ভাবে নজর দেওয়া কঠিন। তবে দেখা যায়, কোনও একটা কাজের সঙ্গে আত্মিক যোগাযোগটা বেশি হয়ে যায়। সেই সঙ্গে আনুষঙ্গিক বিষয়গুলোও ঠিক ঠিক ভাবে পাওয়া যায়। তখন ওই কাজটা নিজে থেকেই অন্য কাজের থেকে ভাল হয়ে যায়।” যদিও পূর্ণেন্দুবাবু জানাচ্ছেন, এ বার তিনি দুটোর বেশি কাজ করছেন না। দুটোকেই সমান গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
অন্য দিকে শিল্পী রূপচাঁদ কুণ্ডুর মতে, একসঙ্গে দুটোর বেশি কাজ ভাল করা যায় না। তিনি বলেন, “সংগঠকদের সাফ জানিয়ে দিই যে, সবগুলো একই মানের হবে না।” তবে রূপচাঁদবাবু জানালেন, কাজে ঢুকে পড়ার পরে অবশ্য খেয়াল থাকে না। সব কাজই সমান গুরুত্ব দিয়ে করার চেষ্টা করেন তিনি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.