একটি সাদা গাড়ি। মাথায় জ্বলছে লালবাতি। বুধবার দুপুরে আলিপুরের জাজেস কোর্ট রোডে সেটি থামিয়ে দেখা গেল, গাড়িটির বৈধ কাগজপত্র নেই। এমনকী, লালবাতি ব্যবহারেরও এক্তিয়ার নেই। গাড়িটি আটক করে আলিপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, গাড়িটি সরকারি নয়। সরকারের উচ্চপদস্থ অফিসার বা মন্ত্রীও সেটিতে চড়েন না। গাড়ির মালিক সেটি ভাড়া দেন রেল দফতরে। কিন্তু সে ভাবে ভাড়া দেওয়ার ‘পারমিট’ও নেই গাড়িটির। পুলিশকে গাড়ির চালক জানান, রেল দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্তা গাড়িটি ব্যবহার করেন।
হাইকোর্টের ‘বকুনি’র জেরে তৎপর হয়ে লালবাতির অপব্যবহার করছে এমন গাড়ি খুঁজতে গিয়ে এই ঘটনার সম্মুখীন হল কলকাতা পুলিশ। শহরে লালবাতির অপব্যবহার কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তারও প্রমাণ এই ঘটনা। |
আলিপুরে চলছে ধরপাকড়। —নিজস্ব চিত্র |
পুলিশ জানায়, বুধবার লালবাজার ট্রাফিক কন্ট্রোলের ‘বেতার-বার্তা’ পৌঁছয় বিভিন্ন ট্রাফিক গার্ডে। বলা হয়, জানুয়ারি থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কতগুলি বেআইনি লালবাতির গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার সবিস্তার রিপোর্ট দ্রুত পাঠাতে হবে লালবাজারে। বেআইনি লালবাতির গাড়ির দিকে নজর রাখতেও বলা হয়। তবে লালবাজার-কর্তাদের একাংশের মতে, এতে পরিস্থিতির বেশি ‘পরিবর্তনের’ সম্ভাবনা নেই। লালবাতির অপব্যবহারের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের হিসেব একেবারেই আশাব্যঞ্জক নয়। ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে খবর, ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৪টি মামলা রুজু হয়েছে।
লালবাতির যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে মঙ্গলবার রাজ্যকে সতর্ক করেছিল হাইকোর্ট। কোর্টের বক্তব্য, বিভিন্ন পদাধিকারীরা ব্যক্তিগত কাজে লালবাতি ব্যবহার করছেন। যাঁদের ব্যবহারের কথা নয়, তাঁরাও পুলিশের সামনেই লালবাতি জ্বেলে যাচ্ছেন।
পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “হাইকোর্টের আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন পরিবহণ সচিব।” কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “কোন গাড়ি লালবাতি বা ফ্ল্যাশার ব্যবহার করতে পারবে, তা নিয়ে পরিবহণ দফতরের নির্দেশিকা আছে। আইন ভাঙলে যথাযথ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।” তবে রাজ্য পুলিশের ডিজি (ট্রাফিক) গৌতমমোহন চক্রবর্তী আদালতে রিপোর্ট জমা দেওয়ার আগে কিছু বলতে চাননি।
কিন্তু শহরের বিভিন্ন ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্টদের একাংশের কথায়, বুধবার লালবাজারের এমন নির্দেশে তাঁরা বেআইনি লালবাতিযুক্ত গাড়ি ‘ধরতে’ কিছুটা হলেও সাহস পেয়েছেন। টালিগঞ্জ এলাকার এক সার্জেন্টের কথায়, “লালবাতির গাড়ির সওয়ারিরা ‘আম-আদমি’ নন। এই অভিযান জোরদার করতে হলে তাই আঁটঘাট বেঁধেই এগোতে হবে।” |