শহর সাজানোর জন্য লাগানো ত্রিফলা বাতি নিয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের একটি প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মন্তব্য ঘিরে বুধবার উত্তাল হয়ে উঠল বিধানসভা। স্পিকার সতর্ক করে দিলেন মন্ত্রীকেই।
ত্রিফলা বাতি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে ইতিমধ্যেই কলকাতা পুরসভায় সরব বাম ও কংগ্রেস। ত্রিফলা-দুর্নীতির সেই অভিযোগ এ দিন এসে পড়ে বিধানসভাতেও। টেন্ডারের নিয়ম নীতি না-মেনে, পছন্দ মতো সংস্থার কাছ থেকে বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে বাতি কেনা হয়েছে বলে বিরোধীদের যাবতীয় বক্তব্যের জবাবে পুরমন্ত্রী জানান, ত্রিফলা বাতি নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে, এমন কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ এখনও দফতরে জমা পড়েনি।
বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবুই এ দিন প্রশ্ন করছিলেন। তিনিই বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত হচ্ছে কলকাতা পুরসভায়।” তখনই মন্ত্রী পাল্টা বলেন, “পুরসভার নির্বাচনে জিতে কলকাতা পুরসভায় গিয়ে এ প্রশ্ন করবেন!” মন্ত্রীর এই জবাবে ক্ষুব্ধ হন বাম বিধায়কেরা।
শুরু হয় চিৎকার। পাল্টা চিৎকার শুরু হয় তৃণমূলের তরফেও। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, “বিধানসভার কোনও সদস্য আহত হন, এমন মন্তব্য করা ঠিক নয়।”
প্রশ্নের উত্তরে এ দিন মন্ত্রী জানান, কলকাতা পুরসভা এলাকায় এই বাতি লাগাতে খরচ হয়েছে ২৪ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও বিধাননগর, নবদিগন্ত এবং রাজ্যের অন্যান্য পুরসভা এলাকায় এই বাতি বসাতে খরচ হয়েছে আরও ২৪ কোটি টাকা। এত টাকা খরচ করে রাস্তায় বসানো এই বাতিগুলি ইতিমধ্যেই খারাপ হতে শুরু করেছে বলে বিধায়করা অভিযোগ তোলেন। সিপিএম বিধায়ক শাজাহান চৌধুরী উল্লেখ-পর্বে বলেন, “যে আলো পুরসভার এন্টালি ওয়ার্কশপে তৈরি করতে ৯৬০০ টাকা খরচ হওয়ার কথা, তা বাইরে থেকে ২৪ হাজার টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে। তার জন্য ১৪০টি সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছে। ৫৪০টি ফাইল তৈরি হয়েছে। পুরসভার যে কর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হল, তিনিই বলেছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই তিনি এই কাজ করেছেন।”
ত্রিফলা-দুর্নীতির সিবিআই তদন্তের দাবিতে আজ, বৃহস্পতিবার কলকাতা পুরসভার সামনে বিক্ষোভ দেখাবে যুব কংগ্রেস। পুর-কমিশনারের কাছে তারা এই বিষয়ে দাবিপত্রও জমা দেবে বলে জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। তাঁরা কী কংগ্রেসের এই দাবির সঙ্গে একমত? বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু পরে বলেন, “কংগ্রেস কী প্রেক্ষিতে বলেছে, জানি না। আমাদের নীতিগত অবস্থান হল, রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত কোনও বিষয়ে রাজ্য সরকার না-চাইলে সিবিআইয়ের হস্তক্ষেপ দরকার নেই। কিন্তু এই ক্ষেত্রে পুরসভা, রাজ্য সরকার ছাড়াও রেল ও পোর্ট ট্রাস্টের ভূমিকা আছে এবং গোটা ঘটনা স্পষ্ট নয়। তাই এই বিষয়টা আর রাজ্যের এক্তিয়ারে থাকতে পারে না।” |