এক দিকে বুলেভার্ড তৈরির কংক্রিটের স্ল্যাব থেকে যন্ত্রপাতি সবই পড়ে আছে রাস্তা জুড়ে। অন্য দিকে, দু’টি মিছিল। সব মিলিয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত পথচারী থেকে বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীদের। মিছিল না হয় ছিল শুধু বুধবারেই, কিন্তু অফিসের ব্যস্ত সময়ে বা পুজোর মুখে দিনভর ভিড়ের সময়ে এ ভাবে রাস্তা আটকে কাজের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। সমস্যা যে হচ্ছে, মানছে প্রশাসনও। তবে তাদের দাবি, নির্দেশ মেনে সময়ে কাজ শেষ করতে গিয়েই এই অবস্থা।
দুপুর আড়াইটে। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ও গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের মোড়ে দু’দিকেই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে যানবাহন। রাস্তার মাঝখানে পুরসভার ঠিকাদারের কর্মীরা ‘স্ট্রিট মিডিয়ান’ তৈরি করছেন। রাস্তায় পড়ে কংক্রিটের স্ল্যাব, সিমেন্ট-বালি-পাথরকুচি মেশানোর যন্ত্রও। ফলে সরু হয়ে গিয়েছে দু’দিকের রাস্তা। যানবাহনের গতি শ্লথ হতে হতে এক সময়ে থমকে গেল। জানা গেল, মহাত্মা গাঁধী রোড থেকে একটি ধর্মীয় সংগঠনের শোভাযাত্রা বেরিয়ে যাওয়ার পরেই কলেজ স্কোয়ার থেকে অন্য একটি সংগঠনের পদযাত্রা বেরিয়ে পড়েছে। তাই এই হাল। |
বিকেল তিনটে। শরৎ বসু তীব্র রোডেও যানজট। তবে মিছিল বা শোভাযাত্রার কারণে নয়। সেখানেও ‘স্ট্রিট মিডিয়ান’ তৈরির জন্য রাস্তার মাঝখানে বাঁশের ব্যারিকেড। রাস্তার উপরেই মেশানো হচ্ছে সিমেন্ট, বালি। এখানেও পড়ে কংক্রিটের স্ল্যাব, যা দিয়ে বুলেভার্ড গড়া হবে।
ট্রাফিক পুলিশ জানায়, বুলেভার্ড তৈরি, পুজোর কেনাকাটা এবং বিভিন্ন রাস্তার বেহাল দশার কারণে কমবেশি যানজট চলছে গত কয়েক দিন ধরেই। তার উপরে এ দিন ছিল দু’টি সংগঠনের মিছিল। যা কার্যত ঘণ্টা তিনেক স্তব্ধ করে দেয় মধ্য কলকাতাকে। অফিসটাইমে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা আটকে এ ভাবে ‘মিডিয়ান’ তৈরি হচ্ছে কেন, প্রশ্ন তুলছেন জেরবার নিত্যযাত্রীরা।
কলকাতা পুর-কর্তৃপক্ষ জানান, পুজোর আগে কাজ শেষের জন্য চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ এবং শরৎ বসু রোডে দিনরাত কাজ করতে হচ্ছে। পূর্ত বিভাগের এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, যে কাজ করতে ছ’মাসের বেশি লাগা দরকার, তা মাত্র দু’মাসে শেষ করতে বলা হয়েছে। সে কারণেই যে ওই দুই রাস্তায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে, তা স্বীকার করছে পুর-প্রশাসনও। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করেই কাজ শুরু হয়েছে।”
রাস্তা সংস্কার ও আবর্জনা সাফাইয়ের মতো জরুরি কাজে পুরসভার ঢিলেমি নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা অভিযোগ উঠেছে। জরুরি ভিত্তিতে সে সব কাজ না করে সৌন্দর্যায়নকে এত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কেন? এ বিষয়ে মেয়রের জবাব, “সাফাই বা রাস্তা সারানোর কাজ জরুরি ভিত্তিতেই করা হয়। কে কী অপপ্রচার করছে, তা জানি না।”
পুরসভার পূর্ত বিভাগ সূত্রের খবর, ‘স্ট্রিট মিডিয়ান’-এর কাজের জন্য দু’দিক মিলিয়ে তিন মিটার রাস্তা নেওয়া হয়েছে। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে ছয় এবং শরৎ বসু রোডে দু’কিলোমিটার রাস্তায় ওই মিডিয়ান গড়া হচ্ছে। পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, যান চলাচলের সমস্যা এড়াতে রাস্তার উপরে মশলা মাখা হচ্ছে না।
শোভাযাত্রা আর মিছিল কী ভাবে বাড়তি ভোগান্তির কারণ হয়ে উঠল?
ট্রাফিক-কর্তারা জানান, দুপুর দেড়টার কিছু পরে ধর্মীয় সংগঠনের শোভাযাত্রাটি মহাত্মা গাঁধী রোড থেকে বার কয়েক আশপাশের কিছু গলিতে ঘুরে আর্মেনিয়ান স্ট্রিটে চলে যায়। তার জেরে মহাত্মী গাঁধী রোডের পাশাপাশি কলেজ স্ট্রিট, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, হরিরাম গোয়েন্কা স্ট্রিট, দেবেন্দ্র রোডেও যানজট ছড়ায়। বড়বাজার এবং পোস্তা এলাকাতেও ঘোরে শোভাযাত্রা।
অন্য দিকে, লালবাজার ট্রাফিক দফতরের কর্মীরা জানান, ‘অল বেঙ্গল সেভ এডুকেশন কমিটি’র হাজার চারেক সদস্য এ দিন হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন থেকে দফায় দফায় মিছিল করে ধর্মতলায় আসেন। ওই সব মিছিল ব্রেবোর্ন রোড, আর এন মুখার্জি রোড, নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট, এস এন ব্যানার্জি রোড, মৌলালি হয়ে ধর্মতলায় পৌঁছয়। সাময়িক ভাবে রাস্তা থাকে। আমহার্স্ট স্ট্রিট, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটেও দীর্ঘক্ষণ যানজট থাকে।
পুলিশ জানায়, সব মিছিল এসে পৌঁছনোর পরে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ধর্মতলা। কারণ, রাস্তার মাঝখানে সংগঠনের কর্মীরা দাঁড়িয়ে পড়েন। ডোরিনা ক্রসিং আটকে রাখতে বাধ্য হন ট্রাফিক-কর্মীরা। মেট্রো চ্যানেলের একাংশও বন্ধ করে দিতে হয়। জওহরলাল নেহরু রোড, পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুল, মেয়ো রোড, রানি রাসমণি রোড, লিন্ডসে স্ট্রিট পর্যন্ত থমকে থাকে যানবাহন। যান চলাচল স্বাভাবিক হতে সন্ধ্যা ৬টা বেজে যায়। |