৫ ঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগছে প্রায় ২০ ঘণ্টা। খানাখন্দে ভরা বেহাল জাতীয় সড়ক এ ভাবেই পাল্টে দিয়েছে কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলার পণ্য পরিবহণের গতি। যানজটের ভোগান্তি এড়াতে আসছে না বাইরের ট্রাক। বেশি ভাড়া গুনেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মিলগুলিতে পাট পৌঁছনো সম্ভব না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীরা। নিরুপায় হয়ে পাট কেনা কম করতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। ক্রেতার অভাবে পাটের দাম কমছে বিভিন্ন হাটে। পুজোর মুখে ওই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। গত বছরও সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে পাটের খোঁজে বিভিন্ন রাজ্যের ট্রাক দিনহাটা থেকে রাজগঞ্জ বিভিন্ন এলাকায় ভিড় করেছে। দিনরাত কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মিলগুলিতে পাট পাঠানোর কাজ চলেছে। ব্যবসায়ীদের বিশ্রামের সুযোগ মেলেনি। এ বার ছবিটা পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে জাতীয় সড়কের খানাখন্দ। বিভিন্ন রাজ্য থেকে যে সমস্ত ট্রাক পণ্য সামগ্রী নিয়ে শিলিগুড়িতে পৌঁছে ফেরার সময় পাট নিয়ে যেত তাঁদের দেখা মিলছে না। শিলিগুড়িতে এসে চালকরা ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দিচ্ছেন যানজট কাটিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে পাট নিয়ে আসা সম্ভব নয়। এমনকী ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, দিনহাটা, মাথাভাঙায় যাওয়ার নাম শুনে চমকে উঠছেন অনেকে। ভাগ্যক্রমে কোনও ট্রাক মিললে তার জন্য বেশি টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। পাট ব্যবসায়ীরা জানান, দিনহাটা থেকে কলকাতার মিলে এক ট্রাক পাট পাঠানোর ভাড়া কয়েকদিন আগেও ছিল ১৭ হাজার টাকা। রাস্তার বেহাল দশার জন্য সেটা বেড়ে হয়েছে ২১ হাজার টাকা। দিনহাটা জুট বেলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কিষাণ সারদা বলেন, “ওই ভাড়া দিয়ে ট্রাক পেলেও অনেকে বর্তে যাচ্ছেন। কারণ শিলিগুড়ির পরে কেউ ডুয়ার্স ও কোচবিহারের দিকে যেতে রাজি হচ্ছে না।”
নর্থবেঙ্গল জুট বেলার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলা থেকে পুজোর আগে ৪০ লক্ষ মন অর্থাৎ ৮ লক্ষ বেল পাট বাইরে যায়। দুই জেলার অন্তত আড়াইশো ব্যবসায়ী ওই কাজের সঙ্গে জড়িত। বেহাল রাস্তার জন্য এ বার তাঁরা অর্ধেক পাট বাইরে পাঠাতে পারেনি। ফলে বিভিন্ন গুদাম উপচে পড়েছে। রাখার যায়গা না পেয়ে অনেকে চাষিদের থেকে পাট কেনা বন্ধ করেছেন। কিছু ব্যবসায়ী এখনও কিনলে তা খুবই সামান্য। সংস্থার সম্পাদক বজরংলাল হীরাউত বলেন, “ব্যবসায়ীরা পাট কিনতে সাহস পাচ্ছে না। বেশিরভাগ গুদাম ভরে আছে। পাট পাঠাতে না পারলে এ ভাবে গুদামে ফেলে রেখে কী লাভ!” এ দিকে ব্যবসায়ীরা হাত গুটিয়ে নেওয়ায় বাজারের পাটের দাম ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। এ বার মরশুমের শুরুতে কুইন্টাল প্রতি পাটের দাম ছিল আড়াই হাজার টাকা। কয়েক দিনে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০০ টাকায়। পুজোর মুখে বাজারের ওই পরিস্থিতি দেখে মাথায় হাত পড়েছে পাট চাষিদের। ময়নাগুড়ি বার্নিশ এলাকার পাট চাষি দীননাথ বর্মন বলেন, “বাজারে বড় ব্যবসায়ীদের দেখা মিলছে না। ফড়েরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রতিদিন পাটের দাম দাম কমছে। মনে করেছিলাম পাট বিক্রি করে ঘরদোর ঠিক করব। সেটা আর হল না।” |