স্বপ্নের শরিক হল কলকাতা। বুধবার বিকেলে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার মাটি ছুঁয়ে গেল এ শহরের। পরিবেশবন্ধু ও জ্বালানি সাশ্রয়কারী এই বোয়িং বিমানটিকেই ‘আগামী দিনের আকাশযান’ হিসেবে তুলে ধরছে এয়ার ইন্ডিয়া। মসৃণ ক্লান্তিবিহীন লম্বা উড়ানের জন্য আমেরিকা থেকে আনা এই বোয়িং মডেলটিকেই বলা হচ্ছে ‘সেরা’।
দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে এ দিন দিল্লিতেই ফিরে গেল ড্রিমলাইনার। বিদেশে লম্বা উড়ান শুরু করার আগে অন্তর্দেশীয় উড়ানের মাধ্যমেই বিমানকর্মীদের ধাতস্থ করা হচ্ছে বলে এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে জানানো হয়েছে। সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর রামেশ্বর দয়াল
জানিয়েছেন, এ বছরে ছ’টি বোয়িং ড্রিমলাইনার তাঁরা হাতে পাবেন। সব মিলিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানবহরে এমন মোট ২৭টি ‘বি-৭৮৭’ ড্রিমলাইনার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা।
বুধবার ঘণ্টাখানেক কলকাতার মাটি ছুঁয়ে ছিল ড্রিমলাইনার। সেই সময়টায় বিমানসংস্থার অনেক উৎসাহী কর্মীই এই আশ্চর্য আকাশযানের ভিতরে ঢুকে চতুর্দিক খুঁটিয়ে দেখতে হামলে পড়েন। কলকাতায় নামার পর বিমান থেকে প্রথম বেরিয়ে আসেন যে যাত্রীটি, সেই সঞ্জীব বেজবরুয়ার অভিজ্ঞতাটা কিন্তু বেশ মজাদার। বিমানে ওঠার সময়েও জানতেন না, এটিই ড্রিমলাইনার। এমন প্রশস্ত জানলাযুক্ত আরামের বায়ুসফর শেষে বেশ আপ্লুত কলকাতার এই তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। উড়ানের কম্যান্ডার ওয়েন রাইডনুরও বলছিলেন, “যাত্রী বা বিমানকর্মী, সকলের স্বাচ্ছন্দ্যের দিক দিয়েই এমন বিমান আদর্শ।” |
বিমানকর্মীদের সঙ্গে ড্রিমলাইনারের ভিতরে ঢুকে মালুম হল, বিমানের আসন, হাঁটাচলার জায়গা এবং জানলা রীতিমতো প্রশস্ত। এয়ার ইন্ডিয়ার কর্তাদের দাবি, এমন প্রশস্ত জানলা (১৮ ইঞ্চি) অন্য কোনও বাণিজ্যিক বিমানে নেই। বোতাম টিপতেই শাটারবিহীন জানলার কাচ ধূসর হয়ে যাবে। ইকনমি ক্লাসে ২৩৮ জন ও বিজনেস ক্লাসে ১৮ জন বসতে পারবেন। প্রতিটি আসনের মুখোমুখি এলসিডি পর্দা। ঢালাও গান শোনা, গেম্স খেলা, সিনেমা দেখার ব্যবস্থা। বিমানের ভিতরে মোবাইল চার্জ দেওয়া, ল্যাপটপ ব্যবহারেরও দারুণ সুবিধা।
এয়ার ইন্ডিয়ার কর্তাদের দাবি, এই বিমানে লম্বা সফরের ক্লান্তি বা জেটল্যাগও টের পাবেন না যাত্রীরা। কী ভাবে? তাঁরা জানালেন, কেবিনের ভিতরে বায়ুর চাপ এতটাই নিয়ন্ত্রিত যে, অনেক উঁচু দিয়ে উড়লেও যাত্রীদের অক্সিজেনের অভাবে কষ্ট হবে না। বিভিন্ন দেশ তথা পৃথক ‘টাইম-জোন’-এর উপর দিয়ে ওড়ার সময় সেই দেশের সময় অনুযায়ী বিমানের ভিতরের আলো পাল্টে পাল্টে যাবে। বিমানসংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, বিমানের ভিতরের বাতাস বিশুদ্ধ ও জীবাণুমুক্ত রাখতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে দুর্গন্ধ বা কোনও রকম সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কাই নেই। কেবিনের ভিতরের পরিবেশে দীর্ঘ ক্ষণ থাকলেও মাথা ধরা, ঝিম ধরা, চোখ বা গলার কষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা ঢের কম।
তবে এয়ার ইন্ডিয়ার জন্য ড্রিমলাইনার তুরুপের তাস হয়ে উঠেছে অন্য একটি কারণেও। দুনিয়ার দ্রুততম বাণিজ্যিক বিমানগুলির মধ্যে অন্যতম এই বিমান। অথচ তার জ্বালানি খরচ ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ যথাক্রমে ২০ ও ৩০ শতাংশ কম। আকাশে মাঝেমধ্যেই ধোঁয়াভরা নিঃশ্বাস ছাড়ার দরকার পড়ে না ড্রিমলাইনারের। ফলে এক দিকে পরিবেশের লাভ। অন্য দিকে কম খরচে লাভের কড়ি গুনবে বিমানসংস্থা। আর যাত্রী-বিমানকর্মীদের জন্য রইল স্বাচ্ছন্দ্যের সফর।
এক কথায়, এরই নাম ‘ড্রিমলাইনার’। |