নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
গত কয়েক দিন ধরে খুচখাচ অশান্তি লেগেই ছিল। তা চরম আকার নিল বুধবার। ক্যাম্পাসিংয়ের মাধ্যমে চাকরি দেওয়ার দাবিতে ধুন্ধুমার বাধল দুর্গাপুরের ফুলঝোড়ের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে।
কলেজের চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়াদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ বারবার বিভিন্ন সংস্থা ক্যাম্পাসিংয়ে আসবে বলে তারিখ ঘোষণা করছেন। কিন্তু সেই নির্দিষ্ট দিনে কোনও সংস্থা আসছে না। কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে গেলে তাঁরা গা করছেন না। উল্টে, ফের আর একটা তারিখ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে আদৌ আন্তরিক নন বলে তাঁদের দাবি।
এরই প্রতিবাদে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে এ দিন দুপুরে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের দাবি, ক্যাম্পাসিংয়ের ব্যাপারে নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট সংস্থার নাম আগাম ঘোষণা করতে হবে। বিক্ষোভে যোগ দেন কলেজের বাকি তিন বর্ষের পড়ুয়ারাও। পঠন-পাঠন বন্ধ হয়ে যায়।
|
কলেজ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বিক্ষোভ চলাকালীন হঠাৎই এক দল পড়ুয়া ভাঙচুর শুরু করে দেয়। জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়। কলেজে চত্বরে বেশ কয়েকটি গাড়ির কাচও ভেঙে দেওয়া হয়। তছনছ করা হয় মোটরবাইকও। ফুলের টব উল্টে দেওয়া হয়। অধ্যক্ষকেও হেনস্থা করা হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তাঁরা পুলিশে খবর দেন।
পুলিশ এসে লাঠি উঁচিয়ে বিক্ষোভকারীদের তখনকার মতো হঠিয়ে দেয়। সব পড়ুয়ারা কলেজের ভিতরে ঢুকে যায়।
পড়ুয়াদের অভিযোগ, তাড়া করার সময়ে পুলিশ লাঠি চালায়। তাতে মাথায় চোট পান ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া গৌরব কুমার। বিক্ষোভকারী ছাত্রদের দাবি, গৌরব জখম হওয়ার পরেই পড়ুয়াদের একাংশ ক্ষোভ সামলাতে না পেরে কলেজে ভাঙচুর করে। এর পরেই পড়ুয়ারা কলেজের প্রধান ফটক বন্ধ করে দিয়ে কলেজ চত্বরে ফের অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করে দেন। ভিতরে আটকে পড়েন অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা।
কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য ক্যাম্পাসিংয়ের মাধ্যমে চাকরির ব্যাপারে আন্তরিকতার অভাবের অভিযোগ মানতে চাননি। |
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক জানান, গত দু’তিন বছরে চাকরির বাজার আগের তুলনায় খারাপ হয়ে গিয়েছে। আগে পাঠ্যক্রম শেষ হওয়ার অনেক আগেই বহু পড়ুয়া চাকরি পেয়ে যেতেন। এমনকী অনেকে একাধিক চাকরিও পেতেন। কিন্তু বর্তমানে তা হচ্ছে না। ওই আধিকারিকের দাবি, বিশ্বজুড়ে আর্থিক মন্দার প্রভাবে নানা সংস্থা কর্মী নিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে। তাই এমন পরিস্থিতি। কলেজের চেয়ারম্যান দুলাল মিত্র বলেন, “প্লেসমেন্টের বিষয়টি নিয়ে আন্তরিক ভাবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। পড়ুয়াদের আর একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। কিন্তু এ দিন পড়ুয়ারা যা করেছে তা সমর্থনযোগ্য নয়।”
সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ পুলিশের উদ্যোগে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন পড়ুয়ারা। তার পরেই রাত ৮টা নাগাদ অচলাবস্থা কাটে। পুলিশ অবশ্য পড়ুয়াদের উপরে লাঠি চালানোর কথা মানতে চায়নি আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (সদর)।
|