ঘোষণাই সার!
দু’বছর আগে বাঁকুড়া জেলার চতুর্থ পুরসভার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে খাতড়াকে। তারপর কেটে গিয়েছে এতগুলি দিন। কিন্তু বাস্তবে পুরসভা গঠনের প্রশাসনিক প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। ফলে ক্ষুব্ধ এই মহকুমা শহরের আমজনতা থেকে রাজনৈতিক নেতা-সকলেই। অবিলম্বে ঘোষিত এই পুরসভার কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হোক- দলমত নির্বিশেষে সকলে এই দাবিই করছেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, দক্ষিণ বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের এই জনপদ ১৯৮৬ সালের ২৭ মার্চ জেলার অতিরিক্ত মহকুমা হিসাবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৯২ সালের ২ নভেম্বর জেলার তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ মহকুমায় উন্নীত হয় খাতড়া। ৯টি থানা ও ৮টি ব্লক নিয়ে গঠিত এই খাতড়া মহকুমা। মহকুমা সদর খাতড়া কিন্তু এখনও পঞ্চায়েত এলাকার অন্তর্ভুক্ত হয়ে রয়েছে। ২০১০ সালের ১৫ জুলাই বিগত বামফ্রণ্ট সরকার খাতড়াকে পুরসভা হিসেবে ঘোষণা করেছিল।
ব্যস, ওইটুকুই!
ঘোষণার পরে এতদিন পেরিয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকারও বদল হয়েছে। কিন্তু এতদিন পরেও প্রস্তাবিত খাতড়া পুরসভা কোন কোন এলাকা নিয়ে গঠিত হবে, তা স্থির হয়নি। পুরসভা গঠনের নোটিফিকেশনও জারি করা হয়নি। তবে প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, খাতড়া ১ পঞ্চায়েতের সমগ্র এলাকার সঙ্গে খাতড়া ২, দহলা, ধানাড়া ও সুপুর পঞ্চায়েতের বেশ কিছু এলাকা নিয়ে গঠিত হতে পারে খাতড়া পুরসভা। যদিও পুরসভা গঠনের ব্যাপারে কোনও নির্দেশ এখনও আসেনি বলে জানিয়েছেন খাতড়ার মহকুমাশাসক দেবপ্রিয় বিশ্বাস। তিনি বলেন, “খাতড়া পুরসভা ঘোষণা হলেও নোটিফিকেশনের নির্দেশ এখনও পাইনি। তাই কতটা এলাকা পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বা কবে কাজ শুরু হবে তা, এই মুহূর্তে আমারও অজানা।”
পুরসভা হলে এলাকার উন্নয়নের কাজ বহুগুন বাড়বে বলে প্রত্যাশা শহরবাসী থেকে রাজনৈতিক নেতা- সকলের। কিন্তু বাস্তব ছবিটা এখনও উল্টো। তাই সকলেই হতাশ। খাতড়া শহরের ভ্যানচালক ফেলু বাউরি, কালো বাউরিদের আক্ষেপ, “অনেকদিন ধরে শুনছি পুরসভা হচ্ছে। কিন্তু এখনও তো কাজই শুরু হয়নি। কবে হবে, কে জানে?” স্থানীয় মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা শেখ রফিকউদ্দিন, শেখ নিয়ামতদের হতাশা, “পুরসভা গঠিত হলে শহরের উন্নয়ন খাতে টাকা অনেক বেশি মিলত। প্রতিটি পাড়ায় হাইড্রেন, রাস্তা-সহ নানা উন্নয়নের কাজ হত। কিন্তু পুরসভা না হওয়ায় এ সব থেকে বঞ্চিত আমরা।” স্থানীয় ব্যবসায়ী সমর মাজির ক্ষোভ, “পুরসভার ঘোষণা তো অনেকদিন হয়েছে। এ বার ঢিলেমি না করে কাজ শুরু করুক প্রশাসন।” এলাকাবাসীর বক্তব্য, পুরসভা হলে এলাকার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। উন্নয়ন হবে। কিন্তু প্রশাসনিক উদাসীনতায় এই কাজ আটকে গিয়েছে। খাতড়া-১ পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের পুতুল দে বলেন, “শহরে বসতি বাড়ছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পঞ্চায়েতের বরাদ্দ টাকায় নিকাশি নালা, রাস্তা সংস্কার আর রাস্তার আলোর ব্যবস্থা করতেই বহু টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। কিছু পরিকল্পনা থাকলেও অর্থের অভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। পুরসভা হলে এই সমস্যা অনেকটাই মিটে যেত।”
এতদিনেও কেন খাতড়া পুরসভা গঠন করা হল না কেন? এ নিয়ে যথারীতি রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। সিপিএমের খাতড়া জোনাল কমিটির সম্পাদক সুশীল মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “বিগত বামফ্রণ্ট সরকারের আমলে খাতড়া শহর মহকুমায় উন্নীত হয়েছে। এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ থেকে রাস্তা- নানা উন্নয়নমূলক কাজ আমাদের সরকারই করেছে। পুরসভার ঘোষণা তো আমাদের সরকারের আমলেই হয়েছে। তাঁর টিপ্পনী, “আমাদের সরকার খাতড়াকে পুরসভা হিসেবে ঘোষণা করলেও তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের আমলে পুরসভা গঠনের প্রশাসনিক কাজ এক কদমও এগোয়নি।” খাতড়ার বাসিন্দা তথা তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা কার্যকরী সভাপতি শ্যামল সরকারের পাল্টা দাবি, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিধানসভা ভোটের আগে খাতড়াকে পুরসভা করার ঘোষণা করেছিল বামফ্রণ্ট সরকার। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করে যায়নি। নতুন সরকারের আমলে ওই কাজ ধীরে-সুস্থে এগোচ্ছে। দ্রুত নোটিফিকেশন করানোর চেষ্টা চলছে।”
তবে রাজনৈতিক কচকচানি আর নয়। এ বার পুরসভা গঠনের কাজ অবিলম্বে শুরু হোক- চাইছেন খাতড়া শহরের আমজনতা। |