সম্পাদক সমীপেষু...
রবীন্দ্রনাথ মুসোলিনি পত্রালাপ নিয়ে আরও কিছু কথা
বেনিতো মুসোলিনির প্রতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ (৭-৮) লেখায় আশিস পাঠক বিশ্বভারতীর সাম্প্রতিক প্রকাশনা রবীন্দ্রনাথের ‘চিঠিপত্র’-র যে দ্বিতীয় খণ্ডের সূত্রে এই আলোচনা করেছেন, তা নিছকই ১৩৪৯ সালে প্রকাশিত রথীন্দ্রনাথকে লিখিত রবীন্দ্রনাথের চিঠিপত্রের সংশোধিত সংস্করণ নয়। সম্পাদক সুপ্রিয়া রায় রবীন্দ্রনাথের লেখা পূর্বে প্রকাশিত ৪৮টি চিঠির সঙ্গে এই গ্রন্থে আরও ১২৫টি চিঠি যোগ করেছেন। রথীন্দ্রনাথেরও ৮টি চিঠি প্রকাশ করেছেন। বহু প্রত্যাশিত, সুমুদ্রিত ও সুসম্পাদিত এই সংকলনটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। প্রথম সংস্করণে বর্জিত অংশগুলিও বর্তমান সংস্করণে সংযোজিত হয়েছে।
মুসোলিনিকে লেখা রবীন্দ্রনাথের বহুচর্চিত চিঠিটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে গ্রন্থে প্রকাশ করেও বিশ্বভারতীর পিছিয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সঙ্গত কারণ ছিল। ২০১২ সালে আশ্রমিক জুজুর ভয়ে, বা সাহসিকতার অভাবে চিঠিটি প্রতিষ্ঠাতা আচার্য ও তাঁর পুত্রের চিঠিপত্রের সংকলনভুক্ত না-করার পিছনে বিশ্বভারতীর কোনও গোপন নীতি প্রযুক্ত হয়েছে বলে মনে হয় না। এই বর্জন নিছক সুপ্রিয়াদেবীর সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত হিসাবে গ্রহণ করাটাই হয়তো সহজ। চিঠিটি যে মুসোলিনিকে শেষ পর্যন্ত পাঠানো হয়েছিল, সে কথা সুপ্রিয়াদেবী পত্র-পরিচিতিতে উল্লেখ করেছেন।
রবীন্দ্রভবন আর্কাইভে এই চিঠিটি আছে, এ তথ্য অসম্পূর্ণ। রোমের বিদেশ মন্ত্রকের সংগ্রহে রবীন্দ্রনাথের মূল চিঠিটির সন্ধান পাওয়া যায়। (নথি সংখ্যা ১৩২৮৮)। রবীন্দ্রভবনে অমিয় চক্রবর্তীর হস্তাক্ষরে একটি প্রতিলিপিও সংরক্ষিত হয়েছে। মূল চিঠির প্রতিলিপি বিকাশ চক্রবর্তী তাঁর ‘ইংরেজিতে রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য প্রবন্ধ’ বইতে প্রকাশ করেছেন (২০১০)।
মূল চিঠি ও অমিয় চক্রবর্তী-কৃত প্রতিলিপির মধ্যে বেশ কিছু পাথর্ক্য চোখে পড়ে।
১) II Duce/Signor Mussolini কথাগুলি রবীন্দ্রনাথ নিজে চিঠিতে কোথাও লেখেননি,
২) New York ও চিঠির তারিখ রবীন্দ্রনাথ দুটি পঙ্ক্তিতে বিন্যস্ত করেননি,
৩) Prof Formichi নয়, রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন Professor Formichi, ইত্যাদি।
অর্থ সংগ্রহের তাগিদে রবীন্দ্রনাথ মুসোলিনির সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব ফিরে পেতে চেয়েছিলেন, এই ধারণা হয়তো ঠিক নয়। গাঁধীজির মতোই মুসোলিনির অন্ধকার দিকগুলির সমালোচনা করেও তাঁর ভাল দিকগুলির স্বীকৃতি দিতে রবীন্দ্রনাথ কুণ্ঠাবোধ করেননি।
মুসোলিনির চিঠি-বর্জিত হলেও বিশ্বভারতীর রবীন্দ্র-রথীন্দ্র পত্র সংকলন তার স্বমহিমায় উজ্জ্বল।


মুসোলিনিকে লেখা রবীন্দ্রনাথের চিঠির উল্লেখ করে আশিসবাবু লিখেছেন‘চিঠিটা পাঠানো হয়েছিল, এবং সেটা মুসোলিনির হাতে পৌঁছেছিলও।’ লিখেছেন, ‘রবীন্দ্রভবন আর্কাইভের মুসোলিনি ফাইলে মুসোলিনিকে লেখা চিঠিটি আছে।’ তা কী ভাবে সম্ভব! মুসোলিনির মৃত্যুর পর আত্মীয়স্বজনদের কেউ চিঠিখানি সংরক্ষণের জন্য বিশ্বভারতীতে পাঠিয়েছেন এ রকম ভাবা সঙ্গত নয়। আমি যত দূর জানি, যথেষ্ট ‘দ্বিধার কারণ’ থাকায়, রথীন্দ্রনাথ গভীর চিন্তা করে চিঠিটি মুসোলিনিকে পাঠাননি।
প্রতিবেদকের বক্তব্য: মুসোলিনিকে শেষ পর্যন্ত চিঠিটি যে পাঠানো হয়েছিল, সম্প্রতি সে খবর মিলেছে। রোমের বিদেশমন্ত্রকের সংগ্রহশালায় মূল চিঠিটি পাওয়া গিয়েছে। অমিয় চক্রবর্তীর হস্তাক্ষরে একটি প্রতিলিপি রবীন্দ্রভবনে আছে। চিঠিপত্র ২-এর সাম্প্রতিক সংস্করণে চিঠিটি বর্জনের নেপথ্যে বিশ্বভারতী-র কোনও গোপন নীতি প্রযুক্ত হয়েছে, এমন কথা আমি আমার লেখায় বলিনি।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর যে চিঠিতে এমন ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ একটি চিঠির উল্লেখ করছেন সেটি যদি ছাপা হয়, তবে তার সঙ্গে মুসোলিনিকে লেখা ওই চিঠিটিও ছাপা হবে এটাই সম্পাদনার স্বাভাবিক নীতি। বিশ্বভারতী-র বইয়ে সম্পাদনার সেই স্বাভাবিক নীতিকে কোনও যুক্তি না-দেখিয়ে নিছক অস্বীকার করা হলে প্রকাশনাটির কোনও সম্পাদকীয় নীতি আছে কি না তা নিয়েই শঙ্কিত হতে হয়। আমার লেখায় চিঠির পাঠটি নেওয়া হয়েছিল চিঠিপত্র ২-এর পূর্ববর্তী সংস্করণ থেকে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.