‘একটি শরিক দল’ সমর্থন প্রত্যাহার করলেও ইউপিএ-সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনও কারণ দেখছেন না সনিয়া গাঁধী। সেই আত্মবিশ্বাসে ভর করে সংস্কারের প্রশ্নে শুধু সরকারের পাশে দাঁড়ানো নয়, কংগ্রেস সভানেত্রী পাল্টা প্রচারেও নামতে চাইছেন। আর্থিক সংস্কার কেন প্রয়োজন, তা বোঝানোর পাশাপাশি কংগ্রেস ও কেন্দ্রীয় সরকার যে ‘আমআদমি’-র হাত ছাড়ছে না, সেই বার্তাও দিতে চাইছেন তিনি। আজ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনার পর পাল্টা প্রচারের পরিকল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
আজ কংগ্রেসের শীর্ষ কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আর্থিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে দিল্লিতে বিশাল জনসভা করা হবে। খুচরো ব্যবসায় ৫১ শতাংশ বিদেশি লগ্নির অনুমতি দেওয়া হল কেন, সেই ব্যাখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি ডিজেলের দাম বাড়ানো বা রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি বেঁধে দেওয়ার যৌক্তিকতা কোথায়, তা-ও বোঝানো হবে। সমস্ত রাজ্যে এই প্রচার ছড়িয়ে দিতে চাইছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। সেই তালিকায় বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। আজ কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার সঙ্গে এ বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার পৃথক বৈঠক হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, সিডি তৈরি করে, পোস্টার ছাপিয়ে কংগ্রেস সংস্কারের পক্ষে প্রচারে যাবে।
দলের যুব-ছাত্র সংগঠনকেও মাঠে নামানো হবে। |
তৃণমূল সমর্থন প্রত্যাহারের পর আজই প্রথম দশ জনপথে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক বসে। সেখানে তৃণমূলের নাম না করেই সনিয়া জানান, সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে আশঙ্কা নেই। কারণ মুলায়ম সিংহ যাদব ও মায়াবতীর দল সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন দেবে বলে জানিয়েছে। বিজেপির ‘নেতিবাচক রাজনীতি’-রও সমালোচনা করেন সনিয়া। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি গঠনমূলক বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করছে না।
বৈঠকে কেউ কেউ বলেন, আর্থিক সংস্কারের ফলে আমজনতার উপরে কোপ পড়বে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গুজরাত, হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে। তাঁদের বক্তব্য ছিল, দল ‘কংগ্রেস কা হাত, আম আদমি কে সাথ’ বলে নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিল। এখন সেই কংগ্রেসই জনমুখী সামাজিক প্রকল্প থেকে সরে আসছে বলে বিরোধীরা অভিযোগ তুলছে। সাধারণ মানুষের সেই আশঙ্কা দূর করতেই রাজধানীতে বিরাট জনসভা করে পাল্টা প্রচারে নামার প্রস্তাব দেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত।
বস্তুত দল ও সরকারের মধ্যে এই ‘অবস্থানগত দূরত্ব’ দূর করাই ছিল মনমোহন ও সনিয়ার সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারী অনেকেই মনে করছিলেন, সনিয়ার সামাজিক প্রকল্প আর মনমোহনের আর্থিক সংস্কারের মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলতে গিয়েই ইউপিএ-সরকার দিশাহীন হয়ে পড়ছে। আজ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এক দিকে সনিয়া বলেছেন, আর্থিক সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। সরকার সেই দিকেই পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে। অন্য দিকে মনমোহন জানিয়েছেন, সরকার জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি থেকে সরে আসছে না। কিন্তু একশো দিনের কাজ বা খাদ্য সুরক্ষা আইনের মতো সামাজিক প্রকল্প রূপায়ণ করতেই আর্থিক সংস্কার প্রয়োজন। ভর্তুকির বহর কমিয়ে রাজকোষ ঘাটতিতে রাশ টানতে না পারলে, সামাজিক প্রকল্পের জন্য অর্থের সংস্থান করা কঠিন হবে।
দেশের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে কংগ্রেস নেতাদের আশঙ্কা দূর করার দায়িত্ব আজ অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে দেন সনিয়া। চিদম্বরম বলেন, বিশ্বের আর্থিক মন্দার ধাক্কা এ দেশে যাতে না লাগে, সেই চেষ্টাই করছে সরকার।
কিন্তু বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিটাও শোধরানো দরকার। তার জন্য উৎপাদন বাড়াতে হবে, বিনিয়োগ টানতে হবে, মূল্যবৃদ্ধি এবং ভর্তুকিতে লাগাম টানতে হবে।
কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, আজকের বৈঠকে তেলেঙ্গানার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। এমনকী কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রদবদল সংক্রান্ত কোনও কথা হয়নি। দলে বা সরকারে রাহুল গাঁধীকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া নিয়েও কোনও আলোচনা হয়নি। শুধু অজিত জোগী দাবি তুলেছেন, আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বেই লড়বে বলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে তা ঘোষণা করে দেওয়া হোক। |