শুধু আর্থিক সংস্কারই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন আমলাতন্ত্রের সংস্কারও। তবে শুধু কেন্দ্রীয় স্তরে নয়। তা করতে হবে রাজ্য এমনকী আঞ্চলিক স্তরেও। একমাত্র তবেই সংস্কারের সুফল পৌঁছবে সাধারণ মানুষের দরজায়।
দ্বিধা ঝেড়ে সংস্কারের যে ঝোড়ো দ্বিতীয় ইনিংস মনমোহন সিংহ খেলছেন, তাতে স্বাভাবিক ভাবেই উৎসাহিত শিল্পমহল। কিন্তু প্রশাসন, বিশেষত আমলাতন্ত্রের আমূল পরিবর্তন না-হলে তা কার্যকর করা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে রীতিমতো ধন্দে তারা। মঙ্গলবার শিল্পের সেই আশঙ্কাই তুলে ধরেছে বণিকসভা অ্যাসোচ্যাম। তাদের বক্তব্য, সরকারি নীতির মাধ্যমে যে ব্যবস্থায় সংস্কারের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছনোর কথা, সেই আমলাতন্ত্র এখনও পড়ে রয়েছে মান্ধাতার আমলে। নীতি কার্যকর হচ্ছে এমন এক বাতাবরণে, যেখানে কিছু মানুষ আইনের সুবিধা পাচ্ছেন। বাকিরা বঞ্চিত। যার মূল কারণ প্রশাসনিক দুর্নীতি। লাল ফিতের ফাঁস আর তার জেরে প্রকল্প রূপায়ণে ঢিলেঢালা মনোভাবের পাশাপাশি আমলাতন্ত্রের এই ‘রোগের’ও দ্রুত প্রতিকার হওয়া জরুরি বলে বণিকসভাটির দাবি। একই সঙ্গে তাদের পরামর্শ, শুধু কেন্দ্রীয় স্তরে এর মোকাবিলা করলে হবে না। আমলাতন্ত্র সংস্কারে একই রকম লড়াকু মনোভাব নিতে হবে রাজ্য তো বটেই এমনকী আঞ্চলিক স্তরে।
অ্যাসোচ্যাম প্রেসিডেন্ট রাজকুমার এন ধুতের মতে, দুর্নীতি দূর না-করলে, শুধু সংস্কার ঘোষণায় সুবিধা হবে না। কারণ, সাধারণ মানুষের কষ্টের কারণ হওয়া ছাড়াও তা চাপ তৈরি করে দেশের আর্থিক পরিস্থিতির উপর। বাড়িয়ে দেয় উৎপাদন ও পরিষেবার খরচ। তাই এর মোকাবিলা করা একান্ত জরুরি।
আইন মেনে চলা নিয়ে শিল্পমহলের অবশ্যই কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু তাদের প্রশ্ন, কেন কারও কারও হাতে (যেমন ইনস্পেক্টর, পুরসভার কাউন্সিলর, আইএএস অফিসার, বিধায়ক, সাংসদ অথবা মন্ত্রী) সেই আইন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত বা ক্ষমতা পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে? অ্যাসোচ্যামের অভিযোগ, এর ফলেই সরকারি সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকে। আর সেই কারণেই শুধু নীতি নয়, সেই নীতি প্রয়োগের ব্যবস্থারও আমূল সংস্কার চাইছে তারা। সওয়াল করছে বাস্তবসম্মত কিন্তু সহায়ক আইন ব্যবস্থার পক্ষেও।
বণিকসভাটির দাবি, সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রশাসনের একাংশের অবাধ স্বাধীনতার জন্য বহু ক্ষেত্রেই (যেমন, কৃষিজমিকে শিল্পের কাজে ব্যবহার, বিক্রয়-কর ইত্যাদি) মাসুল গুণতে হচ্ছে শিল্পকে। কারণ, সরকারি নীতির সুফল পেতে সাধারণ মানুষের মতোই রাজ্য বা স্থানীয় প্রশাসনের উপর নির্ভর করে শিল্পও। ট্রেড লাইসেন্স, জমি, জল, বিদ্যুতের মতো বিষয়গুলির সমস্যা মেটাতে রাজ্য প্রশাসনেরই দ্বারস্থ হয় তারা। তাই সেখানেও ছবি না-বদলালে কার্যত অর্থহীন হয়ে পড়বে সংস্কারের দামামা।
সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়তে অ্যাসোচ্যামের দাওয়াই আরও বেশি তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার। তাদের যুক্তি, তাতে গতি আসবে নীতি রূপায়ণে। চাইলে যে এ ভাবে প্রশাসনিক দক্ষতার উন্নতি সম্ভব, সেই উদাহরণও তুলে ধরেছে বণিকসভাটি। তাদের দাবি, ইতিমধ্যেই এই পথে হেঁটে সাধারণ মানুষের কাছে সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দিচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাত, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও দিল্লির সরকার। তাই অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য প্রশাসনিক সংস্কার ও দুর্নীতি দমনে জোরকেই মূল মন্ত্র করার পরামর্শ দিচ্ছে শিল্প। |