গঙ্গার জলের তোড়ে বাঁধ ভেঙে বিপন্ন হয়ে পড়েছে মালদহের মানিকচকের ভুতনি দিয়ারা চরভূমির গ্রাম। সেই বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে গঙ্গার জল ঢোকা রুখতে রাত জেগে জেনারেটার চালিয়ে বাঁশ ও বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। তাতেও স্থানীয় বাসিন্দারা জল ঢোকা বন্ধ করতে পারছেন না। পাশাপাশি, গঙ্গার জলস্তর ক্রমশ বাড়ছে। ফলে, ভুতনিদিয়ারার হীরানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তত ২০ হাজার মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। জেলা সেচ দফতরের কর্তারা এলাকার বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করলেও স্থানীয় ভুতনি দিয়ারার মানুষের আতঙ্ক কাটচ্ছে না। গঙ্গার গ্রাসের হাত থেকে বাঁচতে ইতিমধ্যে হীরানন্দপুরের কালুটোলা লাগোয়া এলাকার ২৪ টি পরিবার ঘর ভেঙে একটু উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। মালদহের মানিকচক ব্লকের ভুতনি দিয়ারার তিন দিকে গঙ্গা ও একদিকে ফুলহার। ভূতনি দিয়ারার তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে লক্ষাধিক মানুষের বসবাস করেন। গঙ্গা ও ফুলহারের হাত থেকে বাঁচাতে রাজ্যের সেচমন্ত্রী থাকাকালীন গনি খান চৌধুরী ভূতনির চারপাশে রিং বাঁধ দিয়েছিলেন। রিং বাঁধ দুবর্ল হয়ে ‘লিক’ করে দুই একবার গঙ্গার জল ভূতনির চরে ঢুকেছিল। কিন্তু বাঁধ কোনদিনই ভাঙেনি। এবার হীরানন্দপুরের কাছে সেই রিং বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ভূতনির মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। সেচ দফতরের নিবার্হী বাস্তুকার অমরেশ নাথ সিংহ বলেন, “বাঁধ ভেঙে গেলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। গত কয়েকদিন ধরে গঙ্গার জল বেড়েছে। মঙ্গলবার বিকেল থেকে জল কমতে শুরু করবে। উত্তরপ্রদেশ, বিহারের বৃষ্টিপাতের উপরই গঙ্গার জলস্তর ওঠানামা করে। তিনদিন ধরে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। ফলে গঙ্গার দলস্তর বাড়ার সম্ভাবনা কম।” এ দিকে সেচ দফতর সূক্ষে জানা গিয়েছে ২৪ ঘণ্টায় গঙ্গার জলস্তর বেড়ে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। জল বাড়তে থাকায় মানিকচকে ভুতনির হীরানন্দপুরে কালুটোলার কাছে রিং বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ ৫০ মিটার থেকে বেড়ে ১৫০ মিটারে দাঁড়িয়েছে। গঙ্গার জলস্তর বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভেঙে যাওয়া বাঁধ ধীরে ধীরে গঙ্গায় তলিয়ে যেতে শুরু করায় গোটা ভূতনি এলাকার মানুষ আতঙ্কে রাত জেগে কাটাচ্ছেন। মানিকচক গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রধান ক্ষুদিরাম মন্ডল বলেন, “গঙ্গা ভাঙনে শিবেনটোলা ও জোতপাট্টার ১২ জন বাসিন্দা বাড়ি নিজেরাই ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। আমার এলাকায় বানভাসি পরিবারের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে। রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “ফরাক্কা ব্যারেজের জেনারেল ম্যানেজার বলেছি ভেঙে যাওয়া বাঁধ দ্রুত মেরামত করুন। বানভাসি এলাকায় ত্রিপল ও ত্রাণ দেওয়ার জন্য জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছি।” ফরাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্টের জেনারেল ম্যানেজার অয়ন কুমার সিংহ বলেন, “বালির বস্তা ফেলে গঙ্গার জল আটকানোর চেষ্টা চলছে। তবে জল না কমা পযর্ন্ত ভেঙে য়াওয়া বাঁধের মেরামতের কাজ শুরু করা যাবে না। গঙ্গার জলস্তর আর না বাড়লে ভুতনি প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।” অতিরিক্ত জেলাশাসক ( সাধারন) নুরুল ইসলাম জানান, তিনি সরেজমিনে মানিকচকের পরিস্থিতি দেখেছেন। বানভাসি সমস্ত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, “গঙ্গার জলস্তর বাড়লেও ভূতনির সংরক্ষিত এলাকায় এখনও জল ঢোকেনি। গঙ্গার জল যাতে সংরক্ষিত এলাকা না ঢোকে সে জন্য বাঁশ ও বালির বস্তা ফেলে চেষ্টা করা হচ্ছে।” |