পরপর কয়েকজন খদ্দের ফেরৎ যেতেই ময়নাগুড়ির ঘড়ি ব্যবসায়ী রজত সাহা বললেন, “কেমন করে দোকান চলবে বুঝতে পারছি না।” চোখেমুখে বিষন্নতা। ঝাচকচকে দোকান। কিন্তু মালপত্র কার্যত নেই। ওই ব্যবসায়ী জানান, দিল্লি থেকে ট্রাকে পাঠানো জিনিসপত্র দেড় সপ্তাহ থেকে রাস্তায় আটকে আছে। পুজোর বাজার চলছে। কবে মালপত্র পৌঁছবে। কবে দোকানে সাজানো হবে জানি না। কাপড় ব্যবসায়ী কমল সরকার কলকাতা থেকে দোকানের মালপত্র কিনে শিলিগুড়িতে পৌঁছতে পেরেছেন। কিন্তু তার পরে! এতদূর বয়ে আনা মালপত্র দোকানে নিয়ে যেতে পারেননি। গাড়ি না পেয়ে নিরুপায় হয়ে শিলিগুড়িতে এক আত্মীয়ের মালপত্র রেখে বাড়ি এসেছেন। শুধু রজতবাবু অথবা কমলবাবু নয়, বেহাল ৩১-ডি জাতীয় সড়কে বাস চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দোকানের জন্য পুজোর মালপত্র নিয়ে এনজেপি স্টেশনে পৌঁছে একই সমস্যায় পড়েন ময়নাগুড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সহকারি সম্পাদক স্বপন দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘শিলিগুড়ি থেকে সড়ক পথে বাড়িতে পৌঁছনোর কোনও উপায় নেই। ভাঙাচোরা জাতীয় সড়ক জুড়ে যানজট। বাস নেই। বাড়তি ভাড়া দিয়েও ছোট গাড়ি মিলছে না। কলকাতা থেকে কিনে আনা দোকানের মালপত্র শিলিগুড়িতে পরিচিত একজনের দোকানে রেখে বাড়িতে ফিরেছি।” গত রবিবার থেকে ফের যানজটে জাতীয় সড়কে কাহিল দশা হয়েছে নিত্যযাত্রীদের। গত সোমবার শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়ি থেকে মোহিতনগর পর্যন্ত রাস্তায় পণ্য বোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে যায়। ফাঁকফোকর দিয়ে গলে ছোট গাড়ি এগোবে উপায় ছিল না। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, পুজোর মুখে ওই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ডুয়ার্সের প্রতিটি বাজারের ব্যবসা লাটে উঠবে। এখনও বেশিরভাগ দোকানে পুজোর সামগ্রী পৌঁছয়নি।
ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়নাগুড়ি-সহ ডুয়ার্সের বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা বেশিরভাগ সামগ্রী প্রথমে কলকাতা, দিল্লি এবং গুজরাত থেকে কিনে আনেন। সড়ক পথে বিভিন্ন পরিবহণ সংস্থার মাধ্যমে সেগুলি এলাকায় পৌঁছয়। এ বারও অগস্ট মাস থেকে সে ভাবেই বিভিন্ন পাইকারি বাজার ঘুরে তাঁরা কেনাকাটার কাজ করেন। কিন্তু বেহাল সড়কের জন্য এখনও কেনা সামগ্রীর অধিকাংশ গন্তব্যে পৌছতে পারেনি। সবই মাঝপথে আটকে আছে। শিলিগুড়ি থেকে সামান্য কিছু সামগ্রী কিনে ব্যাগে নিয়ে ট্রেনে পৌছে পুজোর বাজারে দোকান চালু রাখার চেষ্টা করছেন তাঁরা। যেমন, জুতো ব্যবসায়ী পরিমল সাহা বলেন, “মহালয়ার আগে মালপত্র দোকানে পৌছবে কিনা নিশ্চয়তা নেই। প্রতিদিন ফোন করছি। কলকাতা থেকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে দু’সপ্তাহ হয়েছে ট্রাক রওনা হয়েছে। রাস্তায় আটকে আছে। বাধ্য হয়ে শিলিগুড়ি থেকে সামান্য কিছু মালপত্র এনে বাজার ধরে রাখতে হচ্ছে।” ময়নাগুড়ি ব্যবসায়ী সমিতি সম্পাদক বজরংলাল হীরাউত জানান, শুধু জামা-জুতো নয়। রাস্তার জন্য প্রতিটি ব্যবসায় খারাপ অবস্থা চলছে। তাঁর কথায়, “ব্যবসায়ীরা পুজোর কেনাকাটার দিকে বছরভর তাকিয়ে থাকেন। এ বার কী হবে বুঝতে পারছি না।” |