৩১ নং জাতীয় সড়কের ওপর ওদলাবাড়িতে ধর্না বিক্ষোভ চলছে দাড়িয়ে থাকা বাস। হইহই করতে করতে পাঁচটা অটো গিয়ে অবরোধে থমকে দাঁড়াল। দেখা গেল, অটোচালকেরা বিদেশি। বারমুডা, টি শার্ট পরা বিদেশিরা একে একে অটো থেকে নেমে ভারতীয় ধর্নার চরিত্রকে বোঝার চেষ্টায় ব্যস্ত হলেন। ভারত দেখতে হলে ভারতের সাধারণ মানুষের যান ব্যাবহার করেই ঘোরা উচিত। ভারতে আসার আগে বৈঠকি আড্ডায় এমন মতই নাকি উঠে এসেছিল ওদের মধ্যে ওরা মানে নিউজিল্যান্ডের জো ক্রুয়েফ, মার্টিন ফ্লেমিং, ইভা মরিশদের আলোচনায়। এর পরে ভারতে কোন যানটি সর্বত্র যাতায়াত করে তাকে তা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে কিছু দিন লেগে যায়। কারণ, সাইকেলের ওপর ভারতবাসী সব চাইতে বেশী নির্ভরশীল। তার পর আসে ভ্যান রিক্শা। কিন্তু এ সব ইঞ্জিনবিহীন যানে ভারত ভ্রমণ করতে হলে ভিসার মেয়াদ পেরিয়ে যাবে বলে এই যান বাতিল করা হয়। এর পরেই অটো। অটোতেই শিলমোহর মেরে কোন রুটে তাঁরা ভারতভ্রমণ করবেন তা ঠিক হয়। মূলত উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, যে কোন একটি রুটকে বাছাই করতে হতো। ক্রুয়েফ, মরিশরা পূর্ব থেকে পশ্চিমে যাওয়ায় মত দিলেন। |
অটো জনমানববিহীন এলাকায় বিকল হলে তার মেরামতের জন্যে ইন্টারনেটে পড়াশুনো করে অটোর অটোমোবাইল সম্বন্ধেও কিছুটা জেনে নিলেন। ঠিক হল শিলং গিয়ে স্থানীয় ট্যুর অপারেটরদের সাহায্যে অটো কিনে যাত্রা শুরু হবে। কলকাতা হয়ে বিমানে সোজা গুয়াহাটি। তার পরে শিলং এ পৌঁছে ৫টা পুরোনো অটো ২৫ হাজার টাকা করে কেনা হল। আন্তঃ রাজ্য পারমিটও করানো হল। দু’সপ্তাহের মাথায় ডুয়ার্স হয়ে শিলিগুড়ি দিয়ে বিহারের নালন্দা রাজগীর হয়ে উত্তরপ্রদেশের বেনারস। এলাহাবাদের প্রয়াগ সঙ্গম হয়ে লখনউ ঘুরে গ্বালিয়র দিয়ে রাজস্থানে প্রবেশ। সেখানে গোলাপী শহর হাওয়ামহল দেখে নিয়ে জয়স লমিরে গিয়ে যাত্রাপথ শেষ। এই হল ভারতভ্রমণের রুট। প্রায় ২৫০০ কিমির এই ভ্রমণ পথে ৩৫ কিমি প্রতি লিটারে চলা অটোতে জ্বালানি খরচ প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার মতো। কিন্তু কেন এত কষ্ট করে অটো চালিয়ে ভারত ভ্রমন কেন? পর্যটকেরা জানালেন, অন্যতম কারণ হল আর্থিক সুবিধা। ভারতের যে সব জায়গা ঘোরা হবে সেখানে ট্রেনে করে বাতানুকূল কামরায় যাতায়াত, স্টেশনে নেমে গাড়ি ভাড়া, সব মিলিয়ে ২৫ হাজার টাকা পড়বে মাথা পিছু। অথচ অটোর জন্যে এককালীন ২৫ হাজার টাকা হয়তো লগ্নি করতে হয়, কিন্তু ফেরার সময়ে ২০ হাজার টাকায় অটো বিক্রি করে চলে যাওয়া যায়। ওই পর্যটকদের মতে, “অটো রিকশায় চড়ে ঘুরে বেড়ানো লাভদায়ক আবার অ্যাডভেঞ্চার।” |