জোট ভাঙতেই রাজ্য সরকারের বঞ্চনার অভিযোগ প্রকাশ্যে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস পরিচালিত জলপাইগুড়ি পুরসভা। তৃণমূল জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরে গত এক বছর চার মাসে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্য আর্থিক বরাদ্দে জলপাইগুড়ি পুরসভা কীভাবে বঞ্চিত হয়েছে তার একটি খতিয়ানও তৈরি করেছে পুর কর্তৃপক্ষ। বঞ্চনার অভিযোগে সরকার বিরোধী আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু করেছে জেলা কংগ্রেসও। আগামী বৃহস্পতিবার রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, সাংসদ দীপা দাশমুন্সি সহ প্রদেশ নেতৃবৃন্দ জলপাইগুড়িতে সভা করবেন। আপাতত ঠিক হয়েছে, সেই সভা মঞ্চ থেকেই জলপাইগুড়ি পুরসভাকে রাজ্য সরকারের বঞ্চনার খতিয়ান তুলে ধরা হবে। সেখান থেকেই জেলায় আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহন বসু বলেন, “জোট সরকারের থেকে যে আশা করা হয়েছিল জলপাইগুড়ি পুরসভার ক্ষেত্রে তা পূরণ হয়নি। উল্টে বাম আমলে যে বঞ্চনার ইতিহাস ছিল জলপাইগুড়িতে। তার কোনও পরিবর্তন হয়নি। আমরা শহরবাসীকে সবই জানাতে চাই। বঞ্চনার বিরুদ্ধে আমরা পথে নামব।” ২০০৮ সাল থেকে চলতি আর্থিক বছর পর্যন্ত পুরসভাকে দেওয়া রাজ্য সরকারের আর্থিক বরাদ্দের হিসাব বঞ্চনার খতিয়ানে রাখা হয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প, রাজ্যের সুনির্দিষ্ট প্রকল্পগুলি পুরসভা রূপায়ণ করে, সেগুলি ছাড়াও পুর এলাকার উন্নয়নের বিভিন্ন খাতে রাজ্য সরকার পুরসভাগুলিকে অর্থ বরাদ্দ করে। |
পুরসভার দেওয়া তথ্য অনুয়ায়ী, ২০০৮ সাল থেকে প্রতি বছর রাজ্য সরকারের শহর সাধারণ পরিকাঠামো উন্নয়নের বিভিন্ন খাতে গড়ে প্রায় ৮ কোটি টাকা দিলেও রাজ্যে পরিবর্তনের পর বরাদ্দ একলাফে কমিয়ে প্রায় ৪ কোটি টাকা করা হয়েছে। সুসংহত বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে ২০১০-১১ আর্থিক বছরে রাজ্যে বাম সরকারের সময়ে জলপাইগুড়ি পুরসভা প্রায় আড়াই কোটি টাকা পেলেও গত বছরে বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৭৮ লক্ষ টাকা। চলতি আর্থিক বছরের ৬ মাস কেটে গেলেও এখনও এই প্রকল্পে কোনও বরাদ্দ জলপাইগুড়িকে দেওয়া হয়নি। তৃণমূল জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরে জলপাইগুড়ি পুরসভাকে রাজ্য অর্থ কমিশনের কোনও বরাদ্দ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। পুরসভার দাবি, রাজ্য নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তথা সুডার তরফে বাম আমলে পর পর তিন বছর দেড় থেকে ২ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হলেও ২০১১ সালের এপ্রিল মাসের পর থেকে পুরসভাকে কোনও অনুদান দেওয়া হয়নি। শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তথা এসজেডিএর তরফেও গত আর্থিক বছরে জলপাইগুড়ি পুরসভা কোনও বরাদ্দ পায়নি। পুরসভার সার্বিক হিসেবে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম বছর জলপাইগুড়ি পুরসভা প্রায় ৮ কোটি টাকা কম বরাদ্দ পেয়েছে। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ছয় মাসে বরাদ্দে ঘাটতির পরিমাণ ৫ কোটি টাকা। এতে শহরের উন্নয়ন থমকে গিয়েছে বলে পুরসভার দাবি। পুজোর মুখে রাস্তা সংস্কার, নতুন পথবাতি লাগানো সব কাজই অর্থের অভাবে থমকে রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। কংগ্রেসের অভিযোগকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা হবে বলে তৃণমূল জানিয়েছে। দলের জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিক জানান, বিগত দিনে পুরসভা যে বরাদ্দ পেয়েছিল তার খরচের হিসেব যথাযথ রয়েছে কিনা তা দেখা প্রয়োজন। যদি নিয়মবর্হিভূত ভাবে কোনও টাকা খরচ হয়ে না থাকে, যদি সব নথিপত্র সঠিক থাকে, তবে বরাদ্দ না পাওয়ার কারণ নেই। তবু যদি দেখা যায় পুরসভা কম বরাদ্দ পাচ্ছে, তবে শহরের স্বার্থে আমরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হব। আগে পুরসভার আর্থিক বিষয়গুলি ভালভাবে দেখা দরকার। পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা শহর ব্লক কংগ্রেস সভাপতি পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “একাধিকবার রাজ্যের পুরমন্ত্রীকে বরাদ্দ কম পাওয়ার কথা জানিয়েছি। উনি শুধু আশ্বাসই দিয়েছেন। বরাদ্দ না পাওয়ায় শহরের উন্নয়নের কাজ ব্যহত হচ্ছে।” |