বিচ্ছেদের পরে তেরাত্তির কাটেনি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে কংগ্রেস।
পুরসভা থেকে বিধানসভা সর্বত্র ‘প্রাক্তন’ শরিক তৃণমূলকে বিঁধতেও কসুর করছে না তারা।
কলকাতায় ত্রিফলা আলো লাগানোর ‘অনিয়ম’ নিয়ে পুরসভায় ‘সরব’ ছিল ইউপিএ-র প্রধান শরিক দল। এ বার সেই ‘অনিয়ম’ নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি জানাল তারা। সোমবার পুর কমিশনার খলিল আহমেদকে লেখা এক চিঠিতে ওই ঘটনার পুর্ণাঙ্গ তদন্তের অনুরোধ করেছেন কংগ্রেস কাউন্সিলররা। এ দিন পুরসভার পাঁচ কংগ্রেস কাউন্সিলর হাজির হন কমিশনারের ঘরে। পুরসভার কংগ্রেস দলনেত্রী মালা রায় বলেন, “নিয়ম না মেনে ত্রিফলা আলো লাগানোর বরাতেই শেষ নয়, বাতিস্তম্ভ পিছু যে দর ধরা হয়েছে, বাস্তবে তার থেকে অনেক বেশি টাকা (সেট পিছু) পুরসভার কোষাগার থেকে খরচ করা হয়েছে।” তিনি বলেন, “পুর কমিশনারকে জানিয়েছি তদন্ত হলে এ সবই ধরা পড়বে।” তাঁদের বক্তব্য, কারও অনুমতি ছাড়া দরপত্র না ডেকে প্রায় ৩০ কোটি টাকার কাজ একজন অফিসার করতে পারে না। এর পিছনে কার বা কাদের হাত রয়েছে, তদন্ত হলেই তা বের হবে।
ত্রিফলা আলো লাগানোর বরাতে অনিয়ম নিয়ে ইতিমধ্যেই পুরসভার বাম কাউন্সিলরেরা একাধিক বার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের নেতৃত্বে রাজ্যপালের কাছে এ নিয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছেন বামফ্রন্টের একদল বিধায়ক। পরে রাজ্যপালও পুরো বিষয়টি জানতে চিঠি দেন পুর কমিশনারকে। রাজ্যপালের চিঠির জবাবে পুর কমিশনার একটি অর্ন্তবর্তী রিপোর্টও পাঠিয়েছেন। ওই ঘটনার দায়ে পুরসভার ডিজি (আলো)-কে শো-কজ করা হয়েছে। তার দু’দিনের মধ্যেই ওই ডিজি-কে পদ থেকে সরানো হয়। পুর সূত্রের খবর, কয়েক দিনের মধ্যে ফের রাজ্যপালের কাছে ত্রিফলা আলোর বরাত নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠানো হবে।
মেয়র অবশ্য বলেছেন, “এ বার সিপিএমের পথ অনুসরণ করছে কংগ্রেস।” কিন্তু কংগ্রেসের নেতাদের একাংশ স্পষ্ট জানিয়েছেন, তৃণমূলের দুর্নীতি এ বার জনসমক্ষে আনতে তাঁরা প্রস্তুত হচ্ছেন।
পুরসভায় যখন তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস বিরোধিতা তুঙ্গে, তখন বিধানসভাতেও বিরোধিতার উত্তাপ চড়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। কলেজ সার্ভিস কমিশনের বিলের উপর সংশোধনী নিয়ে ভোটাভুটিতে সরকারের পাশে দাঁড়াননি কংগ্রেস বিধায়কেরা। তাঁরা ভোটদানে অংশই নেননি। এমনকী, সরকারের কাজের নানা ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে মুলতবি প্রস্তাব আনার কথাও আছে কংগ্রেসের।
সরকারের সঙ্গে বিচ্ছেদের পরিণতিতে তাঁদের পদত্যাগী মন্ত্রীদের বিধানসভায় ট্রেজারি বেঞ্চের বদলে কংগ্রেসের দলীয় বেঞ্চে আসনের ব্যবস্থা করার জন্য স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পরিষদীয় দলের সচেতক অসিত মাল এ দিনই চিঠি দিয়েছেন।
আজ বিধানসভায় এলেও, অধিবেশনে যোগ দেননি কংগ্রেসের প্রাক্তন মন্ত্রী আবু হেনা। এ দিন হেনা বলেন, “আগে আমার আসনের ব্যবস্থা হোক, তারপরে সভায় যাব।” দলের অপর দুই মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া ও প্রমথনাথ রায় কলকাতার বাইরে বলে সভায় আসেননি। তবে অন্য তিন পদত্যাগী মন্ত্রী আবু নাসের খান চৌধুরী, সুনীল তিরকে এবং সবিনা ইয়াসমিন অধিবেশনে যোগ দিলেও তাঁদের পূর্ব আসনে বসেননি। দলের অন্য বিধায়কদের সঙ্গে বসেছিলেন। অসিতবাবু জানান, বিরোধী দলের মর্যাদার দাবিও তাঁরা স্পিকারের কাছে তুলবেন। এই বিষয়ে পরিষদীয় দলের জরুরি সভা ডাকা হয়েছে বৃহস্পতিবার। ওইদিনই এ বারের অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা।
অসিতবাবু বলেন, “পরিষদীয় দলের বৈঠকে বিরোধী দলের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে। বৈঠকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যকেও উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।” |