নারী নিগ্রহ নিয়ে বিক্ষোভে শাসকের ‘ঢাল’ মহিলারাই
নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে বিধানসভায় বিরোধীদের বিক্ষোভে স্পিকারের আসন ঘিরে ‘ঢাল’ হল শাসক দলের নারী বাহিনী!
বিধানসভায় সোমবার প্রশ্নোত্তর-পর্বের পরে রাজ্যে একের পর এক নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও বিপর্যস্ত আইনশৃঙ্খলার উল্লেখ করে মুলতবি প্রস্তাব আনে বিরোধীরা। কিন্তু স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু প্রস্তাবটি পাঠ করতে দেন। আলোচনা না-করতে দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণী পর্ব শুরু করে দেন। তখনই হাতে ‘পরিবর্তনের অপর নাম, রাজ্যে শ্লীলতাহানি-ধর্ষণ ক্রমবর্ধমান’, ‘শুধু বিশ, ত্রিশ হাজারের ক্ষতিপূরণ নয়, নারী লাঞ্ছনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে ওয়েলে নেমে স্লোগান দিতে থাকেন বিরোধীরা। আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা সভার কার্যবিবরণী ও প্রশ্ন-তালিকা ছিঁড়ে ওড়াতে থাকেন। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন বামফ্রন্টের মহিলারাও। ‘বেগতিক’ বুঝে মন্ত্রী ও তৃণমূলের মহিলা সংগঠনের নেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একে একে শাসক দলের মহিলা বিধায়কেরা গিয়ে স্পিকারের আসনের পাশে দাঁড়ান। অন্য পাশে দাঁড়ান ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহ। সতীর্থ মহিলারা একে একে বিক্ষোভের আঁচ থেকে স্পিকারকে ‘বাঁচাতে’ এগিয়ে যাচ্ছেন দেখে নিজের আসন ছেড়ে চন্দ্রিমাদেবীর পাশে গিয়ে দাঁড়ান শিউলি সাহা, নমিতা সাহা, অসীমা পাত্ররা। প্রমীলা-বাহিনীকে ‘ঢাল’ হতে দেখে দলের পুরুষ বিধায়কেরাও তখনও আসনে বসে-থাকা সতীর্থ মহিলাদের অনুরোধ করেন চন্দ্রিমাদের দলে যোগ দিতে!
নারী নির্যাতনে সরকারের ‘ব্যর্থতা’র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে, অন্য দিকে স্পিকারের আসন তৃণমূলের মহিলা বাহিনীর ‘রক্ষাকবচে’র মধ্যে! এর মধ্যেই প্রথমার্ধের অধিবেশন মুলতুবি করেন স্পিকার। বিক্ষুব্ধ বিরোধীরা স্লোগান দিতে দিতে সভার বাইরে বেরোন। পরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র অভিযোগ করেন, “গত দেড় বছরে যতগুলি মুলতবি প্রস্তাব এনেছি, একটাও সরকার পক্ষ গ্রহণ করেনি। আলোচনাও করতে দেয়নি।” পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ড পরবর্তী বিভিন্ন ধর্ষণ-শ্লীলতাহানির ঘটনাগুলির উল্লেখ করে সূর্যবাবু বলেন, “কৃষক আত্মহত্যা, শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য, নারী নির্যাতনের মতো একের পর এক ঘটনা ঘটছে। সে ব্যাপারে সরকারের বক্তব্য মানুষ জানতে চায়। অথচ এই সরকার নিজেদের সমালোচনা শুনতে প্রস্তুত নয়!” সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, “সরকার বলছে, রাজ্যে নাকি কোনও সমস্যা নেই। ডেঙ্গি, নারী নির্যাতন, খাদ্য উৎপাদন, সব সমস্যার নাকি সমাধান করে ফেলেছে!” মুলতবি প্রস্তাব আলোচনার সুযোগ না-দেওয়াকে তাঁদের ‘অধিকারভঙ্গ’ বলেও অভিযোগ বিরোধী দলনেতার।
সিপিএম বিধায়ক রেজ্জাকও পরে তৃণমূলকে ‘লুম্পেন, সমাজবিরোধীদের দল’ বলে আক্রমণ করেন। তাঁর মন্তব্য, “এই সরকারের গত ৫০০ দিনে যা হয়েছে, ৩৪ বছরে তত অরাজকতা দেখিনি। সরকার চলছে গুন্ডাদের দ্বারা। দলটা চলছে লুম্পেনদের দ্বারা! আর ঘুষখোর কিছু পুলিশ তাদের মদত দিচ্ছে!” এর পরেই ক্যানিং পূর্বের এই প্রবীণ বিধায়ক সরকার ও প্রশাসনকে ‘হুঁশিয়ারি’ বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটের সময় ওদের ন’টা মন্ত্রী আমার ক্যানিংয়ে দিনরাত পড়ে থাকলেও চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলছি, ওদের শূন্য করে ছেড়ে দেব!”
প্রসঙ্গত, নারী নির্যাতনের ক্রমবর্ধমান ঘটনার প্রতিবাদে এ দিনই সারা রাজ্যে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বামফ্রন্টের মহিলা সংগঠনগুলি। কলকাতায় প্রতিবাদ হয় মৌলালি ও হাজরা মোড়ে। একগুচ্ছ দাবি নিয়ে বিধানসভায় এ দিন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ ও দলের নেতা কার্তিক পাল। তাঁদের দাবির মধ্যেও ছিল নারী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’র প্রসঙ্গ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.