জেলাশাসকদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিব। সোমবার মহাকরণের রোটান্ডায় তখন পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতির ব্যাপারেই আলোচনা চলছিল। হঠাৎই সেখানে ঢুকে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকের মাঝপথে এ ভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে ঢুকতে দেখে জেলাশাসকেরা ব্যস্তসমস্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন। দ্রুত হাত নেড়ে তাঁদের বসতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, “একসঙ্গে আপনাদের এ ভাবে দেখা করার সুযোগ ছাড়তে পারলাম না। বলুন, আপনারা কেমন জেলা চালাচ্ছেন? কী সমস্যা? আমাকে কী করতে হবে?”
প্রাথমিক বিস্ময় কাটিয়ে উঠে কয়েক জন জেলাশাসক মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জেলার কিছু সমস্যার কথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী প্রকল্প ধরে ধরে জেলাশাসকদের কাছে কাজের অগ্রগতি জানতে চান। দু’-একটি সমস্যার ব্যাপারে সেখান থেকেই সরাসরি ফোনে বিহিত করেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলাশাসকদের বলেন, “গত দেড় বছর যে-ভাবে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি, আগামী দিনেও সেই ভাবে কাজ করব। আপনারা উন্নয়নের কাজ ফেলে রাখবেন না। মানুষের জন্য দ্রুত কাজ করুন।”
একশো দিনের কাজ, কিষান ক্রেডিট কার্ড বিলি, ইন্দিরা আবাস যোজনা, গ্রামে পাকা রাস্তা তৈরি এবং পানীয় জল সরবরাহের মতো কাজ যাতে আর পড়ে না-থাকে, সেই ব্যাপারে জেলাশাসকদের সচেতন করে দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, “দুর্গাপুজো এবং ঈদ একই সঙ্গে পড়েছে। ফলে আপনারা সতর্ক থাকুন। কোনও ভাবেই রাজ্যে যেন অশান্তি না-ছড়ায়।” মহাকরণের এক কর্তার কথায়, “পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আনতে হলে উন্নয়নমূলক কাজ যে দ্রুত শেষ করতে হবে, তা বোঝাতেই জেলাশাসকদের এই নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।”
পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আনার সম্ভাবনা নিয়ে বৈঠকে মুখ্যসচিব সমর ঘোষ এবং স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নানা ধরনের মতামত দিয়েছেন জেলাশাসকেরা। তাঁদের মোদ্দা কথা, সরকার চাইলে জেলা প্রশাসন আগেই ভোট করতে প্রস্তুত। কিন্তু ভোটের প্রস্তুতি পর্বে চার-পাঁচটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। সেগুলো শেষ করে ওঠা বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। ভোট এগোচ্ছে, রাজ্য প্রশাসনের তরফেও নির্দিষ্ট ভাবে এমন কথা ঘোষণা করা হয়নি। তবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন পঞ্চায়েত স্তরে আসন পুনর্বিন্যাসের যে-সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে, তাতে ভোট এগোনোর বিষয়টি স্পষ্টতর হচ্ছে।
আসন পুনর্বিন্যাস, ওবিসি-র জন্য সংরক্ষণ এবং সংরক্ষিত আসন চূড়ান্ত করার কাজ কতটা এগিয়েছে, জেলাশাসকদের কাছে তা জানতে চান মুখ্যসচিব। রাজ্য নির্বাচন কমিশন জেলা পরিষদ স্তরে ২১ সেপ্টেম্বর এবং পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আসন পুনর্বিন্যাস শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে। জেলাশাসকেরা জানান, সময়ের মধ্যেই আসন পুনর্বিন্যাসের কাজ শেষ হবে। কিন্তু পরের ধাপে সংরক্ষিত আসন চূড়ান্ত করতে বাড়তি সময় লাগতে পারে। রয়েছে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজও। এই ব্যাপারে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত জানায়নি। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনও ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু করেছে। চলবে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত। ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ না খুলতে জেলাশাসকদের নির্দেশ দেন মুখ্যসচিব। |