কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংস্রব রাখলে চাকরি খোয়াবেন কলেজ সার্ভিস কমিশন (সিএসসি)-এর চেয়ারম্যান। রাজনৈতিক দলের সদস্য হলে তো কথাই নেই। সোমবার বিধানসভায় এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের পেশ করা বিলেই এ কথা বলা হয়েছে।
রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাম আমলের সিএসসি আইন রদবদলের প্রয়োজনের কথা বলে আসছিল। এ দিন বিলটি বিধানসভায় পেশ করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাতেই কমিশনের চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের উপরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য হলে কিংবা সদস্য না-হয়েও অন্য কোনও ভাবে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংস্রব রাখলে তিনি তাঁর পদ হারাবেন। এমনকী তিনি পক্ষপাত করলেও তাঁকে বরখাস্ত করা হবে।
আইনটি ব্যাখ্যা করে এর পরে বলা হয়েছে, কোনও দল ‘রাজনৈতিক’ কি না কিংবা চেয়ারম্যানের কী ধরনের সংস্রবকে ‘রাজনৈতিক’ বলা হবে, সেই ব্যাপারে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তবে তার আগে চেয়ারম্যানকে আচার্য তথা রাজ্যপালের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন করে উপাচার্যদের ব্যাপারেও রাজ্য সরকার একই ভাবে বরখাস্তের সংস্থান রেখেছে। তবে উপাচার্যদের ক্ষেত্রে বিষয়টি রাজ্যপালের এক্তিয়ারভুক্ত রাখা হয়েছে। সেখানে রাজনৈতিক সংস্রবের বিচার নির্ভর করবে রাজ্যপালের উপরেই। সিএসসি-র চেয়ারম্যানকে নিয়োগ করবে রাজ্য সরকার। সম্ভবত সেই কারণেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের এক্তিয়ার সরকার নিজেদের হাতেই রাখল। সংশ্লিষ্ট বিলটি এ দিন পাশ হয় বিধানসভায়।
কলেজ সার্ভিস কমিশন বিলে যে-সব পরিবর্তন আনা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
• কলেজ শিক্ষক নিয়োগে গোটা রাজ্যের জন্য প্রতিটি বিষয়ের একটিই তালিকা তৈরি হবে। তার পরে বাছাই হবে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে।
• কলেজে শিক্ষাকর্মী নিয়োগের সুপারিশও করবে কলেজ সার্ভিস কমিশন।
জীবনশৈলী পাঠ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে জীবনশৈলীর পাঠ চালু করা যায় কি না, তা বুঝতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেবে রাজ্য সরকার। বিশেষজ্ঞেরা সায় দিলে এই পাঠ চালু হবে। বিধানসভায় একটি প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “জীবনশৈলীর পঠনপাঠনে সমাজ কতটা ছাড় দেবে, তা জানার ভার শিক্ষাবিদদের উপরেই ছেড়েছি। এই বিষয়টি ছাত্রছাত্রীদের উপযোগী কি না, সেই বিষয়ে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।” সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী জানান, শিক্ষাবিদদের নিয়ে একটি কমিটি গড়ার কথা বলা হয়েছে স্কুল পাঠ্যক্রম কমিটিকে। সেই কমিটির রিপোর্ট দেখেই জীবনশৈলীর পঠনপাঠনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
২০০৭ সালে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে জীবনশৈলী পড়ানো শুরু হয় রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে। তখন থেকেই রুটিনেও নিয়মিত এই বিষয়ের ক্লাস রাখা হয়। কিন্তু গোড়া থেকেই এই নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক এবং অবশ্যই রাজনৈতিক বিরোধিতা ছিল। তা ছাড়া যথাযথ পরিকল্পনা ছিল না। অভাব রয়েছে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোরও। সব মিলিয়ে এখন এই বিষয়ের ক্লাস কার্যত বন্ধই হয়ে গিয়েছে। ব্রাত্যবাবু এ দিন বলেন, “ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত জীবনশৈলীর পঠনপাঠন চলবে, নাকি বন্ধ করে দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবে পাঠ্যক্রম কমিটি। আমার কিছু বলার নেই।” তবে একাদশ-দ্বাদশে এই বিষয়ে পড়াশোনা চালু করতে ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর আপত্তি নেই বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। |