মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমর্থন তুলে নিলেও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে কোনও রকম বঞ্চনা করতে চান না বলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে জানালেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
কংগ্রেস-তৃণমূল বিচ্ছেদের পরে পশ্চিমবঙ্গে রেল, সড়ক-সহ কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির গতি আরও শিথিল হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবার রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বের আশঙ্কা, অতীতে বামেরা যেমন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ‘বিমাতৃসুলভ আচরণের’ অভিযোগ তুলেছিল, তৃণমূলও এ বার সেই অভিযোগ এনে পঞ্চায়েত ভোটে ফায়দা তোলার চেষ্টা চালাবে। এই পরিস্থিতিতে আজ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যকে ডেকে পাঠিয়ে ইউপিএ সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন মনমোহন। তিনি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের দাবিদাওয়া বিবেচনা করে সাংবিধানিক সীমার মধ্যে থেকে সব রকম সাহায্য করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক কর্তার কথায়, প্রকল্প ধরে ধরে রাজ্য সরকার যে আর্থিক সাহায্য চাইবে তা নিশ্চয়ই পাবে। সেই সঙ্গে রাজ্যের পিছিয়ে পড়া জেলার উন্নয়নেও কেন্দ্র অর্থ বরাদ্দ করবে। ভুলে গেলে চলবে না বিরোধী-শাসিত রাজ্য হলেও বিহার কিন্তু কেন্দ্রের কাছ থেকে ধারাবাহিক আর্থিক সাহায্য পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রদীপবাবু বলেন, “রাজ্যের সঙ্গে বঞ্চনা হোক আমরাও চাই না। উল্টে তেত্রিশ বছরের বাম শাসনে রাজ্যের যে করুণ দশা হয়েছে, তার থেকে বেরোতে কেন্দ্রের সাহায্য অপরিহার্য। সেই কথাটা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি।”
তবে রাজ্যের আর্থিক সঙ্কটা কাটাতে সুদ-আসল পরিশোধের উপরে তিন বছর স্থগিতাদেশের যে দাবি মমতা জানিয়েছেন, তা মানতে যে অসুবিধা আছে সেটা ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের ওই কর্তা। কিন্তু প্রকল্পভিত্তিক অনুদানের ক্ষেত্রে কেন্দ্র আগেও বঞ্চনা করেনি, এখনও করবে না। এমনকী আর্থিক সাহায্যের বিষয়ে কথা বলতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে শীঘ্রই দিল্লিতে ডাকতে পারেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম।
কিন্তু কেন্দ্রের তরফে এই আশ্বাস দেওয়া হলেও রাজনীতির কারবারিদের মতে, এ সব রাজনৈতিক কারণে শুধু বলার জন্যই বলা। নীতিগত ভাবে প্রধানমন্ত্রী প্রতিহিংসার রাজনীতির পক্ষপাতী নন ঠিকই। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা পশ্চিমবঙ্গের প্রকল্পগুলি নিয়ে এর পর কতটা আন্তরিকতা দেখাবেন সেটাই প্রশ্ন।
যেমন পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক পুনর্গঠনের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে ২২০০ কোটি টাকা ঋণের চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে আলোচনা চলছে। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের মাধ্যমে সেই ঋণ পাওয়ার কথা। কিন্তু চিদম্বরম যদি
উদাসীনতা দেখান তা হলে চুক্তি বিলম্বিত হতে পারে।
একই ভাবে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ নিজে উদ্যোগী হয়ে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে ১০ হাজার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ব্যাপারে তৎপর হয়েছিলেন। তিনি আর আগের মতো তৎপরতা দেখাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
পাশাপাশি রাজনীতির ময়দানেও তৃণমূলকে কোণঠাসা করতে এ বার উঠেপড়ে লাগতে চাইছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। তাঁদের কৌশল, তৃণমূল এবং বিজেপি-কে একই বন্ধনীতে ফেলে সমালোচনা চালিয়ে যাওয়া। প্রদীপবাবু এবং প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়ার বক্তব্য, “বিজেপি, সিপিএমের সঙ্গে একই ভাষায় প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের এই বিরোধিতায় আখেরে বিজেপি-র হাত শক্ত হবে।”
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, তৃণমূল সমর্থন প্রত্যাহার করার পর পশ্চিমবঙ্গে কী রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তা জানতেই প্রদীপবাবুকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। এই ঘটনায় রাজ্যে কংগ্রেস সমস্যার মুখে পড়বে কিনা, তা-ও জানতে চান তিনি। প্রদীপবাবু প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, “তৃণমূল সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় রাজ্য কংগ্রেস কোনও ভাবেই হতাশ নয়। উল্টে উচ্ছ্বসিত।” |