|
|
|
|
মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে দলের প্রস্তুতি-বৈঠক পূর্বে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
আগামী ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সফর ঘিরে প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়েছে আগেই। কিন্তু সরকারি অনুষ্ঠান হলেও আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূলের শক্তঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই জেলার নেতৃত্ব দলের শক্তি প্রদর্শনের এই সুযোগ নিতে মরিয়া। তাই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা সফল করতে তৃণমূলের দলীয় স্তরেও প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সরাসরি স্বীকার না করলেও দলের তরফে তমলুকের নিমতৌড়ির এই প্রশাসনিক সভায় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যত বেশি সম্ভব লোক আনতে স্থানীয় নেতৃত্বকে উদ্যোগী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রবিবার বিকেলে নিমতৌড়িতে তৃণমূলের জেলা কমিটির বর্ধিত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফর ও আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়। দু’টি বিষয়েই দলের স্থানীয় নেতৃত্বকে বিভিন্ন নির্দেশিকা দেওয়া হয়। প্রশাসন সূত্রে খবর, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে পূর্ব মেদিনীপুরে এসে কোলাঘাট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের অতিথিশালায় জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে জেলার উন্নয়ন নিয়ে বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। রাতে হলদিয়ায় থাকবেন। পরের দিন, ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে হলদিয়ায় দুটি শিল্প সংস্থার অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এরপরে দুপুরে তমলুকের নিমতৌড়ি স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন প্রস্তাবিত জেলা প্রশাসনিক চত্বরের মাঠে প্রশাসনিক সভায় যোগ দেবেন।
রবিবার তৃণমূলের বৈঠকে দলের জেলা সভাপতি তথা সদ্য প্রাক্তন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী শিশির অধিকারী, তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী ছাড়াও দলের বিধায়ক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি, সদস্যেরা, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, পঞ্চায়েত প্রধান, পুরপ্রধান,দলের জেলা কমিটির সদস্য, ব্লক ও অঞ্চল সভাপতি, বিভিন্ন শাখা সংগঠনের জেলা নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভায় জেলার সমস্ত এলাকা থেকে সাধারন মানুষকে নিয়ে আসার জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের সঙ্গে দলীয় নেতৃত্বকেও নির্দেশ দেওয়া হয়। যেহেতু সরকারি অনুষ্ঠান তাই দলীয় পতাকা ছাড়াই যাতে সভায় সাধারন মানুষকে আনা হয় সে বিষয়েও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে জোট-সরকার থেকে তৃণমূলের সমর্থন প্রত্যাহারের কারণ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ, ডিজেল-পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধি, রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি প্রত্যাহার ও সারের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে গ্রামগঞ্জে প্রচার চালানোর নির্দেশ দেন জেলা নেতৃত্ব। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই নিয়েও নির্দেশিকা দেওয়া হয়। তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মুখ্যমন্ত্রীর সফর, পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে সম্প্রতি দলে রাজ্য স্তরে যে বৈঠক হয়েছিল তা স্থানীয় নেতৃত্ব ও নীচুতলার কর্মী-সমর্থকদের জানাতে এ দিন বৈঠকে আলোচনা হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর চতুর্থবার জেলায় আসছেন। জেলার উন্নয়ন নিয়ে বৈঠকও করবেন। এছাড়া সভায় বিপুল সংখ্যক মানুষ আসবেন। সাধারন মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে আসতে পারেন তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়েও দলীয় পর্যায়ে আলোচনা হয়।”
এ দিনের বৈঠকে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে ধরে নিয়ে জেলা নেতৃত্ব স্থানীয় নেতৃত্বকে প্রস্তুতি নিতে বলেন। প্রস্তুতি হিসেবে চলতি মাস থেকেই বুথ, অঞ্চল ও ব্লক স্তরে সম্মেলন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে ৫০ শতাংশ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। তাই দলের মহিলা প্রার্থী নির্বাচনে একটি নির্দেশিকা দিয়েছেন জেলা নেতৃত্ব। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, মহিলা প্রার্থীকে রাজনৈতিক পরিবারের হতে হবে, সমাজসেবামূলক কাজে জড়িত থাকতে হবে। যে সব মহিলা দলের কাজকর্মে সক্রিয়ভাবে জড়িত থেকে এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অগ্রনী ভূমিকা নেন প্রার্থী নির্বাচনে তাঁদের বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আর বর্তমানে দলের যাঁরা পঞ্চায়েতের পদাধিকারী বা প্রতিনিধি রয়েছেন আগামী নির্বাচনে প্রার্থী করার আগে তাঁদের কাজের মূল্যায়ন হবে। বৈঠকে দলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর হুঁশিয়ারি, “পঞ্চায়েতের কর্মকর্তা নির্বাচিত হওয়ার পর যাঁরা দলের সাংঠনিক কাজে অবহেলা করেছেন বা যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাঁদের সরে যেতে হবে। না হলে দলীয়ভাবে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি আরও বলেন, “পঞ্চায়েতে প্রার্থী নির্বাচনের জন্য কিছু নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। বিশেষত মহিলা পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা যাতে সক্রিয়ভাবে উন্নয়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।” মুখ্যমন্ত্রীর সফরের পরে বিষয়গুলি ফের দলীয়ভাবে পর্যালোচনা করা হবে বলেও জানান শিশিরবাবু। |
|
|
|
|
|