বাবু বসু খুন
বছর পেরোলেও জমা পড়েনি চার্জশিট
ছর ঘুরে গেল। অথচ ঝাড়খণ্ডী নেতা বাবু বসু খুনে চার্জশিটই দিতে পারল না পুলিশ। নির্দিষ্ট সময়ে চার্জশিট জমা না পড়ায় ধৃত চার অভিযুক্ত ইতিমধ্যে জামিন পেয়েছে।
কেন চার্জশিট দিতে দেরি হচ্ছে?
ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “তদন্ত চলছে। সব অভিযুক্ত এখনও ধরা পড়েনি। যথাসময়ে চার্জশিট দেওয়া হবে।”
২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১। সন্ধে সাড়ে সাতটা। বিনপুরের দহিজুড়ি চকে শ্যালকের দোকানের সামনে গল্প করছিলেন ঝাড়খণ্ড জনমুক্তি মোর্চার (জেজেএম) রাজ্য সম্পাদক বাবু বসু। হঠাৎই কয়েকজন যুবক খুব কাছ থেকে তাঁকে গুলি করে মোটর সাইকেলে চেপে চম্পট দেয়। ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে বাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের শ্যালক অসীম কুণ্ডুর অভিযোগের ভিত্তিতে ২৬ সেপ্টেম্বর মামলা রুজু করে বিনপুর থানার পুলিশ। এফআইআর-এ অবশ্য কারও নাম ছিল না। ‘অপরিচিত মাওবাদীরা’ জামাইবাবুকে খুন করেছে বলে অভিযোগে জানান অসীমবাবু।
তদন্তে নেমে ৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত বছর নভেম্বরে গ্রেফতার হন রাধামোহনপুর গ্রামের কানাই হাঁসদা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে গ্রেফতার হন দহিজুড়ির বাবলু পাল। গত জুলাইয়ে ধরা পড়েন তলপাল-ডুমরিয়া গ্রামের বশিষ্ঠ মাহাতো ওরফে বুলেট। গত অগস্টে বিরিডাঙার রঞ্জন টুডু নামে এক জেলবন্দিকে বাবু বসুর খুনের মামলায় যুক্ত করা হয়। যেহেতু এফআইআর-এ অভিযুক্তদের নাম নেই এবং এখনও পর্যন্ত মামলার চার্জশিট পুলিশ জমা দিতে পারেনি, সে জন্য পরবর্তী কালে বিভিন্ন সময়ে চার জন অভিযুক্তই জামিনে মুক্তি পেয়ে গিয়েছেন।
বাবু বসুর স্ত্রী ও মেয়ে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
যদিও তদন্ত প্রক্রিয়া অনেক দূরই এগিয়েছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, মামলার তদন্তকারী অফিসার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। আদালতে দাখিল করা পুলিশের নথি অনুযায়ী, বাবু বসু খুনে অভিযুক্ত এক জনকে গত ১৩ জুন দহিজুড়ি চকে নিয়ে যায় পুলিশ। কী ভাবে বাবুকে খুন করা হয়েছিল তা ‘অভিনয়’ করে দেখায় ওই অভিযুক্ত। বাবুর শ্যালক অসীম কুণ্ডু-সহ স্থানীয় কয়েকজনকে সাক্ষী রেখে পুরো প্রক্রিয়াটি ভিডিও রেকর্ডিং করে পুলিশ। ওই অভিযুক্ত পুলিশকে জানায়, মাওবাদী কমান্ডার ‘হিরু’র নির্দেশে ঘটনার দিন সিপাই ও বদ্রুকে মোটর সাইকেলে চাপিয়ে দহিজুড়ি চকে নিয়ে গিয়েছিল সে। বাবুকে লক্ষ করে গুলি চালিয়েছিল সিপাই ও বদ্রু।
কে এই সিপাই ও বদ্রু? পুলিশের একটি সূত্রের খবর, সিপাই ‘ফেরার’। বদ্রু অন্য একাধিক মামলায় জেলবন্দি। তবে তাঁকে বাবু বসুর খুনের মামলায় যুক্ত করতে এখনও আদালতে আবেদন জানায়নি পুলিশ। যদিও ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপারের দাবি, “বদ্রুকে বাবু বসু খুনে ধরা হয়েছে।” হিরুর পরিচয় নিয়েও আছে ধোঁয়াশা। বাবু ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের দাবি, জগন্নাথ সরেন ওরফে হিরো-ই হল হিরু। গত মে মাসে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন জগন্নাথ।
জঙ্গলমহলের রাজনীতিতে বরাবর বাবু বসুর বিশেষ ভূমিকা ছিল। এক সময় চুনিবালা হাঁসদার ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এ ছিলেন বাবু। নেত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে ২০০৪ সালে দল ছেড়ে ঝাড়খণ্ড পার্টি (আদিত্য গোষ্ঠী)-তে যোগ দেন। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর নিজের দল ‘ঝাড়খণ্ড জনমুক্তি মোর্চা’ তৈরি করেন। জঙ্গলমহলের অশান্তি পর্বে তাঁর দলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী মাওবাদী হানায় খুন হন। বাবু অবশ্য দহিজুড়ির বাড়ি ছেড়ে যাননি। অকুতোভয়েই চলাফেরা করতেন। নিজেকে ‘অজাতশত্রু’ হিসেবে দাবি করতেন। বাবুর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, গত বছর সেপ্টেম্বরে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বাবুর কথাবার্তা চলছিল। তৃণমূলের এক সাংসদের সঙ্গে দেখা করার কথাও ছিল তাঁর। তার আগের সন্ধেতেই জনবহুল দহিজুড়ি চকে খুন হয়ে যান বাবু। তিনি তৃণমূলে যোগ দিলে অনেকেরই স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা ছিল বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের অভিমত। সেই সঙ্গে বাবু ঘনিষ্ঠদের প্রশ্ন, ‘কেঁচো খুড়তে কেউটে’ বেরিয়ে পড়ার আশঙ্কাতেই কি তদন্তে গড়িমসি করা হচ্ছে?
এ দিকে, পুলিশ আদালতে চার্জশিট জমা না দেওয়ায় আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন বাবুর স্ত্রী দীপালিদেবী। একটি বিমা সংস্থায় বাবুর গচ্ছিত মোটা অঙ্কের আমানত তুলতে পারছেন না তিনি। চার্জশিটের প্রতিলিপি ছাড়া ওই টাকা দিতে রাজি হচ্ছে না বিমা সংস্থাটি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দু’দফায় ঝাড়গ্রামে এসে দীপালিদেবীর হাতে ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে দিয়েছেন। বাবুর পরিবারের একজনের চাকরির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মতো গত জানুয়ারিতে বাবুর মেয়ে অনিন্দিতা আঁধারিয়ার একটি হাইস্কুলে পার্শ্বশিক্ষিকার পদে যোগ দিয়েছেন। বাবুর ছেলে অনির্বাণ দশম শ্রেণির ছাত্র। অনিন্দিতা অবশ্য বলেন, “পার্শ্বশিক্ষিকার চাকরি অস্থায়ী। একটা স্থায়ী চাকরি পেলে সুবিধা হয়।” সেই সঙ্গে বাবু বসু খুনের এক বছরের মাথায় তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের দাবি, “প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি চাই।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.