মনমোহনের পাশেই দল
এ বার বিদ্যুতেও সংস্কারের পথেই হাঁটছে কেন্দ্র
শেষ পর্যন্ত অর্থনীতি কতটা মজবুত হবে, তা সময় বলবে। তবে সংস্কারের যে ঘোড়া তিনি ছোটাতে শুরু করেছেন, কোনও ভাবেই তার রাশ টানতে রাজি নন মনমোহন সিংহ।
ইউপিএ-সরকারের উপর থেকে তৃণমূল সমর্থন প্রত্যাহারের পর আজ প্রথম বৈঠকে বসল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এবং সেখানেও সংস্কারের লক্ষ্যে অটল থেকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদগুলির আর্থিক পুনর্গঠনের জন্য পদক্ষেপ করলেন। রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদগুলির ১ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকা ঋণ পুনর্গঠনের মাধ্যমে সে গুলিকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এবং এ ক্ষেত্রেও অর্থনীতি ও রাজনীতির দ্বন্দ্বের ক্ষেত্র রয়েছে। কারণ, কেন্দ্রের প্রস্তাব গ্রহণ করলে রাজ্যস্তরে বিদ্যুৎ মাসুল বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ আরও একবার সংঘাতের পথে হাঁটার ঝুঁকি নিল মনমোহন সরকার।
সংস্কারের প্রশ্নে ‘সাহসী’ প্রধানমন্ত্রীর পাশে পুরোদস্তুর দাঁড়াতে চাইছে কংগ্রেসও। আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। আগামিকাল সকালে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকেছেন সনিয়া। এআইসিসি শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, দল ওই বৈঠকে প্রস্তাব গ্রহণ করে সরকারের পদক্ষেপকে সমর্থন করবে। ঠিক যে ভাবে ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির সময় দলের ওয়ার্কিং কমিটিতে প্রস্তাব পাশ করিয়ে সায় দিয়েছিল কংগ্রেস, এ ক্ষেত্রেও একই পথ নিতে চাইছেন সনিয়া। যাতে এই বার্তা যায় যে, সংস্কারের প্রশ্নে সরকার ও কংগ্রেসের অবস্থান অভিন্ন।
রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদগুলির আর্থিক স্বাস্থ্য ফেরানোর লক্ষ্যে কেন্দ্র আজ যে পদক্ষেপ করেছে, তাতে পর্ষদগুলির স্বল্পমেয়াদি ঋণের ৫০ শতাংশের দায় রাজ্য সরকারগুলোকে নিতে হবে। এ বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সংস্থাগুলির ঘাড়ে যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ রয়েছে, তার ৫০ শতাংশের সমপরিমাণ বন্ড ছেড়ে তার দায় নেবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলি। বাকি ৫০ শতাংশ স্বল্পমেয়াদি ঋণের আসল শোধ করার ক্ষেত্রে তিন বছরের স্থগিতাদেশ (মোরাটোরিয়াম) এবং সুদের হার ও তা পরিশোধের শর্ত শিথিল করবে ব্যাঙ্কগুলি। তবে শর্ত থাকবে, বিদ্যুৎ পর্ষদগুলিকে প্রতি বছর মাসুল বাড়াতে হবে এবং পরিবহণ ও বণ্টন খাতে ক্ষতি কমাতে হবে।
কেন্দ্রের এ দিনের সিদ্ধান্তের ফলে ঋণভারে জর্জরিত সিংহভাগ রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদকেই মাসুল এক লাফে অনেকটা বাড়ানোর পথে হাঁটতে হবে। তবে পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, এ রাজ্যের ছবিটা তুলনায় অনেকটাই আলাদা। তিনি জানান, বাম আমলে রাজ্যে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে যে সংস্কার হয়েছিল, তার ফলে এখানে ক্ষতির বহর কম। বিশেষত গত তিনটি আর্থিক বছরে রাজ্য বিদ্যুৎ সংস্থার লাভ হয়েছে। ফলে কমেছে পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ। কেন্দ্রের আজকের সিদ্ধান্তের ফলে এখানে কী প্রভাব পড়বে, তা এখনই স্পষ্ট নয় বলে জানান তিনি।
এ দিকে, সরকার সংস্কারের রথ ছোটানোর সঙ্গে সঙ্গে তার পাশে দাঁড়িয়ে বিরোধী আক্রমণ ভোঁতা করতে চাইছে কংগ্রেস। দলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, সরকার কোন পরিস্থিতিতে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির মতো অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে তা সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় ব্যাখ্যা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে তিনি বহুব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির প্রয়োজনীয়তার কথাও বুঝিয়েছেন। এ বার কংগ্রেসের তরফেও সেই কথা বলা হবে। দলীয় তরফে এই বার্তা দেওয়া হবে যে, প্রথমত, কংগ্রেস অযথা সাধারণ মানুষের উপর আর্থিক বোঝা চাপানোর পক্ষে নয়। বাধ্য হয়েই সরকারকে ভর্তুুকি ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এবং দ্বিতীয়ত, খুচরো ব্যবসায় বেসরকারি লগ্নি নিয়ে কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আতঙ্কের কারণ নেই। বরং বিদেশি বিনিয়োগ এলে কৃষকরা তাদের উৎপাদনের জন্য বেশি মূল্য পাবেন। আবার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। কংগ্রেস সূত্রে এ-ও বলা হচ্ছে, সরকার সংস্কারের পথে হাঁটলেও সামাজিক প্রকল্প রূপায়ণের দিকটিও উপেক্ষিত হবে না। বরং সামাজিক প্রকল্পে অর্থ জোগানোর জন্য রাজস্ব বাড়াতেই প্রধানমন্ত্রী সংস্কারের কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। সেই বার্তা আজ সরকারের তরফেও দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা বাড়ানো, মহিলা ও শিশুকল্যাণ প্রকল্পের আওতায় চলতি আর্থিক বছরে দু’শোটি পিছিয়ে পড়া জেলায় মহিলা ও শিশুকল্যাণ সংক্রান্ত প্রকল্পের পুনর্গঠন, চলতি আর্থিক বছরের শেষে দেড়শো থেকে দু’শোটি জেলায় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প পাইলট হিসেবে শুরু করার মতো সিদ্ধান্ত হয়েছে এ দিনের বৈঠকে। পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগ টানতে আজ বন্দর পত্তনের নিয়মও কিছুটা শিথিল করেছে কেন্দ্র।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.