আচার্যের দর্শন পেতে এবং ভোরের প্রার্থনায় যোগ দিতে আশ্রমের মূল ফটকের সামনে কাতারে কাতারে ভক্ত জড়ো হয়েছেন। ফটক খোলা মাত্র হুড়মুড়িয়ে ঢুকতে গেলেন ভক্তরা। আর তাতেই বাধল বিপত্তি। ভিড়ের চাপে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলেন সামনের দিকে থাকা লোকজন। পিছনের লোকের পায়ের চাপে দমবন্ধ হয়ে মারা গেলেন ন’জন। জখম অন্তত ৪০। আজ ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে, অনুকূলচন্দ্রের সৎসঙ্গ আশ্রমে। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের দুই মহিলা, রিষড়ার বিষ্ণুপ্রিয়া মল্লিক ও দেগঙ্গার উমা মজুমদার।
পুলিশ ও জেলা প্রশাসন কর্তারা জানান, মৃতদের মধ্যে আটজনই মহিলা, অন্যজন পুরুষ। তাঁরা পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশার বাসিন্দা। মৃত সাতজনকে রাত পর্যন্ত শনাক্ত করা গিয়েছে। জখমদের অনেকেই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। রয়েছেন অসম, ওড়িশা, বিহার বা ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দারাও। তাদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাও রয়েছেন। |
জখম মহিলাকে বাইরে আনছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। ছবি: চন্দন পাল |
পুলিশ জানিয়েছে, দেওঘরে সৎসঙ্গ আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ১২৫ তম জন্মতিথি উপলক্ষে প্রায় লাখ দু’য়েক ভক্ত সমাগম হয়। সৎসঙ্গ নগরের ওই আশ্রমের মূল ফটক রাস্তার উপরেই। রবিবার রাত থেকেই প্রায় হাজার চল্লিশেক ভক্ত জড়ো হয়েছিলেন সেখানে। ভোরের প্রার্থনায় যাঁরা যোগ দিতে যাবেন তাঁদের জন্য ফটক সাড়ে চারটে নাগাদ খুলবে বলে রাত থেকেই মাইকে ঘোষণা করছিলেন স্বেচ্ছাসেবকরা। প্রার্থনা শেষে আচার্যের দর্শন মিলবে। সেই কারণে ফটক খোলামাত্র প্রার্থনা প্রাঙ্গনের দিকে হুড়মুড়িয়ে ছুটে যেতে যান ভক্তরা। আর তার ফলেই দুর্ঘটনা। দেওঘর টাউন থানার পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার পরে স্বেচ্ছাসেবকরাই আহতদের আশ্রমের হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই ন’জন মারা যান।
ন’জনের মৃত্যুর পরে দেওঘর জেলা পুলিশ দুষছে আশ্রম কর্তৃপক্ষকেই। পুলিশের অভিযোগ, এই উৎসবে যে এত লোক সমাগম হবে তা তাদের জানানোই হয়নি। জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, এই অনুষ্ঠানে হাজার তিরিশেক ভক্ত সমাগম হবে। কিন্তু নানা রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা লাখ দু’য়েক ভক্ত জড়ো করে ফেলেন।
|
মৃত |
বিহার প্রতিমা কুমারী, বাদামী দেবী, পিঙ্কি দেবী
ঝাড়খণ্ড যমুনা দেবী
ওড়িশা পার্বতী বৈতা
পশ্চিমবঙ্গ বিষ্ণুপ্রিয়া মল্লিক (হুগলি), উমা মজুমদার (উত্তর ২৪ পরগনা)
শনাক্ত হয়নি এক মহিলা, এক পুরুষ |
এ রাজ্যের আহত |
রেখা বিশ্বাস (বর্ধমান), সুনীলকুমার দেব (উত্তর ২৪ পরগনা), রমা সাহা (হাওড়া), করুণা ঘোষ (হুগলি), বাবলু মাঝি (বর্ধমান), সোনালি মণ্ডল (উত্তর ২৪ পরগনা), ধ্রুব দত্ত (নদিয়া), দেবাশিস কোলে (হাওড়া), মঙ্গলা মিশ্র (হাওড়া), শোভা কুণ্ডু (উত্তর ২৪ পরগনা), শৈবা রায় (হাওড়া) |
|
জেলার পুলিশ সুপার সুবোধপ্রসাদ বলেন, “আশ্রমের ভিতরে ভিড় সামলানোর দায়িত্বও দেওয়া হয়নি পুলিশকে। যাতে যানজট না হয় তার জন্য আশ্রমের সামনের রাস্তা উৎসবের জন্য সাময়িক বন্ধ রাখতে পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছিল। ভক্তের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে দেখে রবিবার সন্ধ্যায় আমাদের বলা হয়, তাঁদের রাতে থাকার ব্যবস্থা করতে। রাতে বি এড কলেজ খুলিয়ে ভক্তদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়।” পুলিশের আরও অভিযোগ, কী করে ভিড় সামলাতে হয় আশ্রমের স্বেচ্ছাসেবকদের তার প্রশিক্ষণও ছিল না। আজ ভোরে দুর্ঘটনা ঘটলেও এসপি-র কাছে আশ্রমের আইনজীবী মারফত সে খবর জানানো হয় বেলা আটটা নাগাদ। আশ্রম কর্তৃপক্ষ পুলিশের উপর পাল্টা দোষ চাপাচ্ছেন। আশ্রমের তরফে শিবানন্দ প্রসাদের বক্তব্য, “ভিড় যে রবিবার রাত থেকে বাড়ছে পুলিশ তা জানত। আশ্রমের মূল ফটকের সামনে পুলিশ চৌকি থাকলেও আজ ভোরে তাদের দেখা মেলেনি। এ ক্ষেত্রে পুলিশও দায় এড়াতে পারে না।” ঘটনাটির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা আজ ঘোষণা করেছেন, মৃতদের পরিবার পিছু দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য সরকার। আহতদের বিনা খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থাও রাজ্য সরকারই করবে। |