কেন্দ্রবিরোধী ‘লড়াই’কে রাজ্যের সীমার বাইরে নিয়ে যেতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) থেকে শুরু করে ডিজেলের দামবৃদ্ধি, রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের ভর্তুকি ছাড়ের প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই রাস্তা নেমেছেন মমতা। আজ, মঙ্গলবার ধর্মতলায় তাঁর ‘অনুগামী’ বিশিষ্টজনদের প্রতিবাদ সমাবেশেও উপস্থিত থাকবেন মমতা। (ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, বক্তা নয়, শ্রোতা হিসেবে সমাবেশে যোগ দেবেন) এই প্রতিবাদকে দিল্লিতেও পৌঁছে দিতে আগামী ১ অক্টোবর যন্তরে-মন্তরে ধর্নায় বসছেন তৃণমূলের সাংসদ ও নেতারা। তবে সে দিন ধর্না মঞ্চে উপস্থিত থেকে বক্তৃতা দেওয়ার কথা আছে মমতার।
বস্তুত, তাঁদের দাবি নিয়ে সারা দেশের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য যন্তর-মন্তরের কর্মসূচিতে ব্যাপক লোক সমাগম করাতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী। ধর্নায় যোগদানের অনুরোধ জানিয়ে সোমবার ফেসবুকে মমতা লিখেছেন ‘আমি সকলকে অনুরোধ করছি অনুগ্রহ করে আপনারা সকলে আসুন। আপনাদের বন্ধুদের বলুন, আগামী ১ অক্টোবর বেলা ১টায় গণতান্ত্রিক অবস্থানে যোগ দিতে।’ ডিজেল, সারের দামবৃদ্ধি, এফডিআই-র সিদ্ধান্তকে ‘জনস্বার্থবিরোধী ও অনৈতিক’ আখ্যা দিয়ে মমতা ফেসবুকে লিখেছেন ‘কেন্দ্রকে আমরা অনুরোধ করব জনস্বার্থবিরোধী অনৈতিক কাজ প্রত্যাহার করতে।’ আর কেন্দ্রের কাছে সেই আর্জি জানাতে দেশ জুড়ে তিনি যে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তার ইঙ্গিত রয়েছে তৃণমূল নেত্রীর ফেসবুক ‘বার্তা’য়। তিনি বলেছেন, ‘আসুন, সাহসের সঙ্গে ও ঐক্যবদ্ধ ভাবে আমরা লড়াই শুরু করি। গণতন্ত্রে মানুষ সবার উপরে। আমাদের প্রতিবাদের সুর এমন চড়াতে হবে যে কেন্দ্র পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে।’
তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের অভিমত, লোকসভা ভোটের আগে জাতীয় রাজনীতিতে দলকে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে চান নেত্রী। আর সেই কারণে রাজ্যের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় কেন্দ্র বিরোধী লড়াইতে ‘জনগণকে সচেতন করতে’ প্রচারের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ দিনই ফেসবুকে মমতা ধন্যবাদ জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্রের ‘ফেডারেশন অফ অ্যাসোসিয়েশনস’কে। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে মনমোহন সিংহকে লেখা ফেডারেশনের একটি চিঠিও ফেসবুকে পোস্ট করেছেন মমতা। সেই চিঠিতে ফেডারেশনের দাবি, ২০০২-০৩ সালে তাদের প্রতিনিধিদের তৎকালীন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মনমোহন বলেছিলেন, ‘আমাদের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির অনুমতি দেওয়া
উচিত নয়।’
আজ মেট্রো চ্যানেলে ‘মমতাপন্থী’ বিশিষ্টজনদের সমাবেশ নিয়ে সমালোচনা করেছেন বিরোধীরা। সাম্প্রতিক কালে রাজ্য সরকারের অনুষ্ঠান বা তৃণমূল ও তার সহযোগী সংগঠনের সমাবেশ ছাড়া অন্য সংগঠন বা দলকে মেট্রো চ্যানেল ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসনের তরফে এমন ‘বৈষম্যে’র ঘটনায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল বাদে অন্য রাজনৈতিক দলগুলি।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর মন্তব্য, “এটাকে বেআইনি বলব না। কিন্তু অগণতান্ত্রিক। রাজা-রানিরা এ রকম করেন। রানি যেখানে সভা করবেন, অন্য কেউ সেখানে সভা করতে পারবে না!” রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, এফডিআই, ডিজেলের দামবৃদ্ধি ইত্যাদির প্রতিবাদে আগামী রবিবার বারাসতে তৃণমূল একটি ‘সেমিনার’ করবে। আগামী ২ অক্টোবর উত্তর ২৪ পরগনার বীজপুর থেকে সোদপুর পর্যন্ত সাইকেলে ‘প্রতিবাদ মিছিল’ হবে। |