...গন্ধ এসেছে
জৌলুস বাড়াতে নতুন কৌশল পুজো-অ্যাম্বাসাডর
কাল বোধনে বিপণনের সংস্কৃতি ঢুকে গিয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু সেই পুজো-বিপণনের নতুন শব্দবন্ধ এখন পুজো-অ্যাম্বাসাডর।
এমনিতে অ্যাম্বাসাডর অর্থ দূত বা প্রতিনিধি। তবে কোনও বারোয়ারি পুজোর অ্যাম্বাসাডরকে বলা যেতে পারে সেই পুজোর মুখ। তাঁকে সামনে রেখেই সেই বারোয়ারি পুজো টানবে দর্শক এবং আরও বেশি করে অর্থ পৃষ্ঠপোষক ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। স্বভাবতই, সেই পুজোর মুখ কোনও তারকা না-হয়ে যান কী ভাবে?
যেমন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। নিজের পুরনো পাড়া, রাজা বসন্ত রায় রোডে নিজেদের পুজোর মুখ এ বার তিনি। জোড় হাতে, আগাম শারদ-শুভেচ্ছায় ঝকঝকে হাসিমুখের ঋতুপর্ণার ছবি ও বার্তা সম্বলিত হোর্ডিং গোটা শহর জুড়ে। ৭০টি হোর্ডিং। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে বসবে ঋতুপর্ণার ২০টি কাট-আউট। তার ছবি বাছাই করছেন নায়িকা স্বয়ং। সেলিব্রিটিকে পুজোর মুখ করে শুধু পুজোর বিপণন নয়, একই সঙ্গে সেই পুজো উপলক্ষে সেলিব্রিটিরও প্রচার। পুরাণের দেবী আর সেলুলয়েডের দেবী যেন একে অপরের পরিপূরক!
বেহালার একটি পুজোর অ্যাম্বাসাডর টলিউডের উঠতি নায়ক সোহম। এখানেও সেই পাড়া-একাত্মতা। আর্য সমিতি রোডে বড় হয়ে ওঠা সোহম গত বছর থেকেই নিজের পাড়ায় পুজো-অ্যাম্বাসাডর। পুজোর অন্যতম কর্তা স্নেহাশিস হালদার বললেন, “সোহম যেখানে আমাদের সঙ্গে ছোটবেলায় খেলাধুলো করেছে, সেই মাঠেই আমাদের পুজো হয়। ওর মতো টলিউডের এক জন স্টার পুজো অ্যাম্বাসাডর হওয়ার অর্থ স্পনসর, ব্যানার, হোর্ডিং পেতে অনেক সুবিধা। পাড়ার ছেলে এক জন সিনেমা-তারকা পুজোর সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িয়ে, এতে এলাকার মানুষও প্রভাবিত হন।”
একটা সময়ে পুজো বিপণনের প্রধান কৌশল ছিল, প্রতিমা শিল্পীদের নাম আগাম ঘোষণা করা। বারোয়ারি পুজোর ব্যানার, হোর্ডিংয়ে জ্বলজ্বল করত রমেশ পাল, অলোক সেন, মোহন বাঁশি রুদ্রপালদের নাম। তার পরে এল সেই সঙ্গে আলোকসজ্জা ও মণ্ডপসজ্জার বিশেষত্বের উল্লেখ। থিম পুজোর রমরমার যুগ থেকে এখনও পর্যন্ত বন্দন রাহাদের মতো শিল্পীর নাম থাকছে ‘সমগ্র পরিকল্পনা’ বা ‘সৃজনশীল ভাবনা’-র উপস্থাপক হিসেবে।
তবে সব কিছু ছাপিয়ে গিয়েছে পুজো-অ্যাম্বাসাডর। কলকাতার প্রথম ঘোষিত পুজো-অ্যাম্বাসাডর ২০০৮ সালে মিঠুন চক্রবর্তী। রাসবিহারী এলাকার একটি পুজোয়। তাঁকে পুজো-অ্যাম্বাসাডর করার পিছনে সংগঠকদের কোনও ভূমিকা ছিল না। সে বার পুজোর পৃষ্ঠপোষক, আমেরিকার একটি সংস্থার কথাতেই মিঠুনকে পুজোর মুখ করে সেই মর্মে শহর জুড়ে হোর্ডিং ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, “সে বছর আমাদের পুজোর বাজেট ছিল ১৫ লক্ষ টাকা। পুরো টাকাটাই সংস্থাটি আমাদের হাতে তুলে দেয়। তার চেয়ে বেশি টাকা নিশ্চয়ই ওই সংস্থা পুজো-বিপণনের মাধ্যমে তুলেছিল। মিঠুন আমাদের মণ্ডপে এসে ক্যুইজে জয়ীদের পুরস্কার দিয়েছিলেন।”
আর রাজা বসন্ত রায় রোডের ওই পুজোর সাধারণ সম্পাদক বিশ্বদীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, “ঋতুপর্ণাকে পুজো-অ্যাম্বাসাডর করার আগে আমরা এ বার পুজোর বাজেট ১৬ লক্ষ টাকায় বেঁধেছিলাম। কিন্তু ঋতুপর্ণাকে পুজো-অ্যাম্বাসাডর করার পরে বিভিন্ন সংস্থা পৃষ্ঠপোষকতা করতে যে ভাবে এগিয়ে এসেছে, তাতে আমরা নতুন ভাবে পুজোর বাজেট ৩০ লক্ষ টাকা করতে বাধ্য হলাম।”
পুজো-অ্যাম্বাসাডর নায়িকার কথায়, “এই পাড়া, এই পুজোর সঙ্গে সঙ্গে আমি চুমকি থেকে ঋতুপর্ণা হয়েছি।
পুজো এখন একটা বিপণন। সেটা তো অস্বীকার করে লাভ নেই। আর সেখানেই পুজো-অ্যাম্বাসাডরের প্রাসঙ্গিকতা।”
পুজো-বিপণনের নতুন শব্দবন্ধ সম্ভবত আগামী দিনে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হতে যাচ্ছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.