মহাকরণ আর লালবাজারের নিরাপত্তা ও নজরদারি কঠোর করার জন্য বি বা দী বাগ এলাকায় বসেছিল সিসিটিভি ক্যামেরা। খরচও হয়েছে কয়েক লক্ষ টাকা। কিন্তু দরকারের সময়ে তা থেকে কোনও ছবিই পেল না পুলিশ। জানা গেল, ঘটনাস্থলের ক্যামেরাই খারাপ। রবিবার সন্ধ্যায় বি বা দী বাগ মিনিবাস স্ট্যান্ডের কাছে দেহ উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে নেমে এই বিকল ক্যামেরার সন্ধান পায় পুলিশ।
এরই মধ্যে সোমবার দুপুরে শহরে ফের একটি দেহ মিলেছে। পাটুলি এলাকায় বাইপাসের ঢালাই ব্রিজের কাছে ঝোপ থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের গলা-কাটা দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ জানায়, দেহটির বুকে একটি বাঁট-ভাঙা ছুরি গাঁথা ছিল। বছর তিরিশের ওই যুবকের মাথার পিছনে ও পিঠে আঘাতের চিহ্নও মিলেছে। তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। তবে ঘটনাস্থলে রক্তের দাগ না মেলায় পুলিশের সন্দেহ, অন্যত্র খুন করে দেহটি ফেলে যায় দুষ্কৃতীরা। বাইপাসে সব সময়ে পুলিশি নজরদারি থাকা সত্ত্বেও কী করে দেহটি ফেলে যাওয়া হল, ফের সেই প্রশ্ন উঠছে।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ এ দিন জানান, রবিবারের ঘটনায় নজরদারি ক্যামেরা ঠিক মতো কাজ করেনি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বি বা দী বাগে (পূর্ব) বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক রয়েছে। ব্যাঙ্কের বাইরে নজরদারির জন্য তাদের নিজস্ব ক্যামেরাও রয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ সেই ক্যামেরাগুলির ফুটেজও পরীক্ষা করে। দেখা যায়, সেগুলিরও বেশির ভাগের হাল পুলিশের ক্যামেরার মতোই। অনেক খুঁজে পেতে শেষমেশ দু’টি ব্যাঙ্কের ক্যামেরা ওই সময়ে সচল ছিল বলে জানা যায়। কিন্তু তার ফুটেজ দেখেও বিশেষ লাভ হয়নি। কারণ কম আলোয় ওই এলাকার যে ছবি উঠেছে, তা থেকে তদন্তকারীরা বিশেষ কিছু বুঝে উঠতে পারেননি। তাই রবিবার ওই এলাকায় মৃতদেহটি কী করে এল, তা নিয়ে এখনও অন্ধকারে পুলিশ।
তবে এ দিন দেহটি শনাক্ত করা গিয়েছে। পুলিশ জানায়, দেহটি বৌবাজারের বাসিন্দা সত্যেন্দ্রপ্রসাদ যাদবের। পেশায় রিকশাচালক সত্যেন্দ্রপ্রসাদের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে পুলিশ জেনেছে, গাড়ির ধাক্কাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে সত্যেন্দ্রর গলায় ক্ষতচিহ্ন থাকায় মৃত্যুর কারণ নিয়ে কিছুটা ধন্দে তদন্তকারীরা। যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) বলেন, “কী ভাবে ওই রিকশাচালকের মৃত্যু হল, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে এলে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।’’
তদন্তকারীদের প্রশ্ন, ব্যস্ত রাস্তায় কোনও গাড়ি সত্যেন্দ্রকে ধাক্কা দিলে কেউ তা দেখলেন না কেন? আবার অন্য কোথাও খুন করে দেহ বি বা দী বাগের মতো এলাকায় ফেলে যাওয়া হলে সেটাই বা কেন পুলিশের নজর এড়িয়ে গেল, সেই প্রশ্নও উঠেছে। সত্যেন্দ্রপ্রসাদের ভাই ভোলাপ্রসাদ এ দিন দাদার দেহ শনাক্ত করেন। পুলিশ জানায়, সত্যেন্দ্র রবিবার সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ বৌবাজারের বাড়ি থেকে বেরোন। তার পর থেকে আর তাঁর খোঁজ মেলেনি জানিয়েছেন ভোলা।
|