‘অহিংস ধর্ম’ পালন করতে গিয়ে হিংসার মুখে পড়েছেন দেশের সীমান্ত রক্ষীরা। চোরাকারবারিদের হাতে তারাই পাল্টা মার খাচ্ছেন। নিরীহ মানুষের মৃত্যু হলে সরকারি চোখরাঙানির ভয়। তাই ইচ্ছেমতো গুলি চালানো যাচ্ছে না। তার সুযোগে ভোজালি-হাঁসুয়া নিয়ে বিএসএফ জওয়ানদের উপরে হামলা চালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা।
পশ্চিমবঙ্গের মালদা-মুর্শিদাবাদে এখন এমনই অবস্থা বিএসএফ জওয়ানদের। এই পরিস্থিতি বদলাতে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) সঙ্গে শীর্ষ স্তরের বৈঠককে কাজে লাগাতে চাইছেন বিএসএফের কর্তারা। আগামিকাল থেকে ঢাকায় বিএসএফ ও বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) শীর্ষ স্তরের ওই বৈঠক শুরু হচ্ছে। সেখানেই এই বিষয়ে বাংলাদেশের সাহায্য চাইবেন বিএসএফ কর্তারা। বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কাছে কাঁটাতারের ও পারের দুষ্কৃতীদের নিয়ন্ত্রণে রাখার অনুরোধ করা হবে। পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের যে সব এলাকায় এখনও কাঁটাতার বসানো হয়নি, সেখানেও এই কাজ দ্রুত শেষ করতে চাইছেন বিএসএফ কর্তারা।
গত কয়েক বছর ধরেই শেখ হাসিনা সরকার বিএসএফের গুলিতে নিরীহ বাংলাদেশির মৃত্যু নিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছে। ঢাকা সফরে গিয়ে পি চিদম্বরমকেও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে এ বিষয়ে অনুযোগ শুনতে হয়েছিল। গত বছর জানুয়ারি মাসে পশ্চিমবঙ্গের কুড়িগ্রামে কাঁটাতার পেরোতে গিয়ে ফ্যালানি নামে এক কিশোরীর মৃত্যু হয় বিএসএফের গুলিতে। মানবাধিকার সংগঠনগুলিও ওই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়। তার পরেই বিএসএফ-এর কাছে গুলি চালানোর বিষয়ে ‘সংযত’ থাকার নির্দেশ পাঠায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। শুধু তা-ই নয়, সাধারণ বুলেটের বদলে রাবার বুলেটের মতো ‘নন-লিথাল’ অস্ত্র ব্যবহার করারও নির্দেশ দেওয়া হয় বিএসএফ-কে। সমস্যা হয়েছে তাতেই।
বিএসএফ-এর শীর্ষকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে যে সব দুষ্কৃতী এ দেশে জাল নোট বা মাদক পাচার করে কিংবা এ দেশ থেকে গরু পাচার করে নিয়ে যায়, সেই সব বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা এখন বুঝে গিয়েছে, বিএসএফ আর গুলি চালাচ্ছে না। তাই চোরাকারবারে বাধা দিতে গেলে ওই সব দুষ্কৃতীরাই ধারালো অস্ত্র নিয়ে চড়াও হচ্ছে বিএসএফ-জওয়ানদের উপর। পেট্রোল বোমারও নিশানা হচ্ছেন জওয়ানরা। গত তিন বছরের পরিসংখ্যান দেখেই বিএসএফ কর্তারা বুঝতে পারছেন, জওয়ানদের সংযত থাকতে বলার পরেই হামলার ঘটনা এক লাফে বেড়ে গিয়েছে। মালদা, মুর্শিদাবাদ, অসমের ধুবুরির মতো যে সব সীমান্ত এলাকা দিয়ে গরু ও জাল নোট পাচার বেড়েছে। এই সব জায়গায় হামলার ঘটনাও ঘটছে বেশি।
সে কারণে কাঁটাতার বসানোর কাজ শেষ করাটাও জরুরি বলে মনে করছে বিএসএফ। বৈঠকের জন্য ঢাকা রওয়ানা হওয়ার আগে বিএসএফের এক কর্তা আজ বলেন, “সাধারণত সমান্তরাল দুই সারি কাঁটাতারের বেড়া বসানো হয়। কিন্তু ভৌগোলিক কারণে অনেক জায়গায় তা সম্ভব হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে আমরা এক সারি কাঁটাতার
বসাতে চাইছি। এ বিষয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সম্মতি প্রয়োজন।”
দুই সারি কাঁটাতারের ক্ষেত্রে, আন্তর্জাতিক নিয়ম ও ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি মেনে সীমান্তের ‘জিরো লাইন’ থেকে দু’দিকে ১৫০ গজ দূরে দুই সারিতে কাঁটাতারের বেড়া বসানো হয়। এখন এক সারির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জিরো লাইন বরাবার কাঁটাতার বসাতে আপত্তি তুলছে। সে ক্ষেত্রে ভৌগোলিক পরিস্থিতি অনুযায়ী যেখানে যেমন সম্ভব, কাঁটাতারের বেড়া বসানোর প্রস্তাব দিচ্ছে বিএসএফ। আগামিকাল থেকে শুরু হওয়া বৈঠকে বিজিবি-র প্রধান মেজর জেনারেল আনোয়ার হুসেনের সঙ্গে এ বিষয়ে সহমত গড়ার চেষ্টা করবেন বিএসএফের ডিজি ইউ কে বনসল।
|
আক্রান্ত হচ্ছেন সংযত জওয়ানরা |
|
২০০৯ |
২০১০ |
২০১১ |
বিএসএফ জওয়ান আহত |
১২ |
৫৯ |
১৪৭ |
আটক জাল নোটের মূল্য |
২৮,৪৩,৩৯০ |
৩২,২৬,৯০০ |
৪৪,৮৬,৩০০ |
|