ছোটদের মাতিয়ে এ বার বড়দের দুনিয়ায় পা রাখতে চলেছেন জে কে রোওলিং। দীর্ঘ ১৫ বছর পরে বড়দের জন্য উপন্যাস লিখেছেন ৪৭ বছরের এই ব্রিটিশ লেখিকা। বইটির নাম, ‘দ্য ক্যাজুয়াল ভ্যাকেন্সি’। আর বিষয়? শ্রেণি দ্বন্দ্ব, মাদকাসক্তি এবং কৈশোরের যৌনতা।
বইটির বিষয়বস্তু নিয়ে এত দিন যথেষ্ট রাখঢাক করে এসেছেন লেখিকা নিজেই। কিন্তু একটি ব্রিটিশ প্রকাশনা সংস্থার দফতর থেকে বইটির কিছু অংশ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এক মার্কিন সাংবাদিক। আর তিনিই মূলত ‘ফাঁস’ করে দিয়েছেন হ্যারি পটার স্রষ্টার নতুন উপন্যাসের বিষয়বস্তু। সম্প্রতি একটি ব্রিটিশ দৈনিকে এই খবর বেরিয়েছে।
তবে বিষয়বস্তু যতই আলাদা হোক না কেন, রোওলিংয়ের এই নতুন উপন্যাস নিয়ে উন্মাদনা কিন্তু একই রকম। ঠিক যেমনটা হত হ্যারি পটারকে নিয়ে। কিশোর জাদুকরের যে কোনও বই প্রকাশিত হওয়ার আগেই তার আগাম বুকিংয়ের জন্য হিড়িক রীতিমতো চোখে পড়ত। ‘দ্য ক্যাজুয়াল ভ্যাকেন্সি’ও ব্যতিক্রম নয়। আগামী বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশিত হতে চলেছে বইটি। কিন্তু ইতিমধ্যেই লক্ষ লক্ষ পাঠক আগাম বুকিংয়ের জন্য আবেদন করেছেন। প্রকাশনা সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরে যা ‘রেকর্ড ব্রেকিং’। অনলাইন বুকিংয়েও একই হুড়োহুড়ি। |
কিন্তু হঠাৎ করে কিশোরের কল্পনার জগৎ ছেড়ে যৌনতার আশ্রয় নেওয়া কেন? “আসলে কাল্পনিক গল্পে কিছু জিনিস আছে, যা লেখার কথা ভাবই যায় না। যেমন, ‘ইউনিকর্নের’ সামনে যৌন দৃশ্য।” জানালেন রোওলিং। তবে সেই সঙ্গে এটা-ও পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, তিনি শুধু যৌনতা নিয়েই লিখতে চেয়েছিলেন বলেই বড়দের গল্প বাছা, এমনটা একদমই নয়। তাঁর কথায় “আসলে বাস্তব দুনিয়ার প্রচুর অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার। বিশ্বাস করুন। আর সেটা বোঝাতেই বড়দের জন্য লেখার কথা ভাবা।” নৈতিকতা ও মৃত্যুও যে তাঁর ভীষণ আগ্রহের জায়গা, সেটাও জানাতে ভোলেননি তিনি।
রোওলিং জানিয়েছেন, তাঁর মধ্যবিত্ত কৈশোর জীবন যে রকম কেটেছিল, ঠিক সেই রকম চরিত্রের উল্লেখ রয়েছে এই নতুন উপন্যাসে। সেখানকার ‘নাকউঁচু’ মধ্যবিত্ত মানসিকতার ছোঁয়াও রয়েছে সেই চরিত্রে। যদিও গ্লস্টারশায়ারের টুটসহিলের যে এলাকায় রোওলিংয়ের কৈশোর কেটেছিল, সেখানকার বাসিন্দাদের মত একটু অন্য রকম। টুটসহিলের বাসিন্দা, পঞ্চাশোর্ধ্ব প্রৌঢ়া ভিক্টোরিয়া কার্টার যেমন স্পষ্ট বলেই দিলেন, তাঁদের এলাকার লোকজনকে ‘উদ্ধত’ বলাটা হ্যারি পটারের গল্পের মতোই কাল্পনিক। ভিক্টোরিয়া আরও জানালেন, রোওলিংয়ের নিজের কৈশোরবেলাটা সুখের হয়নি বলেই হয়তো, টুটসহিলের বাসিন্দাদের সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছেন রোওলিং।
তবে কিশোর সাহিত্যকে নতুন করে গোটা বিশ্বে জনপ্রিয়তার শিখরে তুলেছিলেন যে রোওলিং, তিনিই বড়দের বই লেখার জন্য এমন উঠেপড়ে লাগলেন কেন? এ নিয়ে পটার ভক্তেরা কিন্তু যারপরনাই বিরক্ত হতে পারেন। কারণ, ব্রিটিশ দৈনিকটি জানাচ্ছে, উপন্যাসটির বেশ কিছু অংশ শুধুমাত্র বড়দের জন্যই নয়। যথেষ্ট যৌনতা মাখানোও। যদিও রোওলিং বিষয়টি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছেন না। তিনি শুধু বলেছেন, “আমি এক জন লেখিকা। আমার যা ইচ্ছে হবে, আমি তা-ই লিখব।”
সেই সঙ্গেই পাঠকদের উদ্দেশেই রোওলিংয়ের স্পষ্ট বার্তা, “আমি তো কখনও আপনাদের বাচ্চার বেবিসিটার বা শিক্ষিকা হিসেবে নিজেকে দেখাইনি। মনে হয়, আমার মধ্যে একটা জিনিস ছিল। সেটা সততা।” |