একটা নয়, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি নাকি দু-দু’টো ‘মোনালিসা’ এঁকেছিলেন! দু’টি সৃষ্টির মধ্যে সময়ের ব্যবধান ১০ বছরের। এই দাবি সুইৎজারল্যান্ডের চিত্র বিশেষজ্ঞদের একটি গোষ্ঠীর। তারাই আপাতত ওই ছবিটির মালিক। ল্যুভর মিউজিয়ামে যে ‘মোনালিসা’ রয়েছে তার প্রায় যমজ ওই ছবিটির নাম ‘ইজেলওয়ার্থ মোনালিসা’।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ঠিক পর পরই ‘ইজেলওয়ার্থ মোনালিসা’কে খুঁজে পান হুগ ব্লেকার নামে এক ইংরেজ চিত্র সংগ্রাহক। দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের সমারসেট এলাকার এক অভিজাত ব্যক্তির বাড়িতে ছবিটি দেখে কিনে নেন তিনি। সেটিকে নিয়ে যান লন্ডনের ইজেলওয়ার্থে, তাঁর স্টুডিওতে। আর সেই কারণেই ছবিটির নামের সঙ্গে জুড়ে যায় ইজেলওয়ার্থের নাম।
এর পর শুরু হয় ছবিটির মালিকানা বদলের পালা। ব্লেকারের কাছ থেকে ছবিটি কিনে নেন মার্কিন চিত্র সংগ্রাহক হেনরি এফ পুলিৎজার। সেটি উপহার দেন বান্ধবীকে। ওই মহিলার মৃত্যুর পর ছবিটি কিনে নেন সুইৎজারল্যান্ডের এক বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী। দীর্ঘ ৪০ বছর ছবিটিকে তাঁরা রেখে দিয়েছিলেন একটি সুইস ব্যাঙ্কের ভল্টে।
‘ইজেলওয়ার্থ মোনালিসা’ যে রেনেসাঁস যুগের ইতালীয় শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চিরই সৃষ্টি, সে বিষয়ে নিশ্চিত সুইৎজারল্যান্ডের ওই বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠীটি। এমনকী তাঁদের কাছে উপযুক্ত প্রমাণ আছে বলেও দাবি করেছেন ওই গোষ্ঠীর সদস্যরা। শিগগিরই ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আরমান্ড হ্যামের সেন্টার ফর লিওনার্দো স্টাডিজের’ অধ্যাপক কার্লো পেড্রেট্টির কাছে প্রমাণ পেশ করবেন। তাঁদের বিশ্বাস, সেই ‘ঐতিহাসিক, তুলনামূলক এবং বিজ্ঞানসম্মত’ প্রমাণ সব বিতর্কের অবসান ঘটাবে। তাঁদের সমর্থন জানিয়েছেন আর এক অধ্যাপক আলেসান্দ্রো ভেজোসি-ও। |
|
|
ল্যুভরে সংরক্ষিত আসল মোনালিসা। |
অন্য মোনালিসা। |
|
তবে ভেজোসি কিংবা সুইৎজারল্যান্ডের ওই বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠীর সঙ্গে একমত নন অনেকেই। তাঁদেরই অন্যতম অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক মার্টিন কেম্প। একটি ব্রিটিশ সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “অনেক কিছুই মিলছে না। ছবিতে ওই মহিলার পোশাক, চুল এবং পিছনের প্রাকৃতিক দৃশ্য অনেকটাই পরিবর্তিত। তা ছাড়া এই ছবিটি আঁকা হয়েছে ক্যানভাসে। লিওনার্দো ক্যানভাসে প্রায় আঁকতেনই না।”
ল্যুভরে যে ‘মোনালিসা’ শোভা পাচ্ছে, সেটিও দা ভিঞ্চির অধিকাংশ ছবির মতোই কাঠের উপর আঁকা। আর ‘ইজেলওয়ার্থ মোনালিসা’ আকারেও ‘মোনালিসা’র চেয়ে অনেকটাই বড়।
বিশেষজ্ঞদের যুক্তি, ১০ বছর আগে আঁকা ‘ইজেলওয়ার্থ মোনালিসায়’ মহিলা বয়সে ‘মোনালিসা’র মহিলার চেয়ে অনেকটাই ছোট। ১০ বছর আগে আঁকা বলেই এমনটা হয়েছে। কিন্তু এই যুক্তি মানতে নারাজ কেম্প। শুধু এই যুক্তির জন্য ছবি দু’টিই দা ভিঞ্চির আঁকা, এ কথা মনে করেন না তিনি।
বরং তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, “ওই মহিলার বয়স কম, কারণ ছবিটি পরে কেউ এঁকেছেন। হয়তো ‘মোনালিসা’ সম্পূর্ণ হওয়ার কয়েক বছর পরেই। যিনি ওই ছবিটি এঁকেছেন, তিনি লিওনার্দোর অঙ্কনশৈলী অনুকরণ করেছেন।”
|