|
|
|
|
আত্মসমালোচনার পথে ‘দিশা’ দেখছে এবিটিএ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
সংগঠনে ‘দ্বন্দ্ব’ রয়েছে এবং সেই ‘দ্বন্দ্ব’ কাজে বাধা সৃষ্টি করছে, পরোক্ষে তা কবুল করে নিল সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন ‘নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি’ (এবিটিএ)।
রবিবার রাতে শেষ হয়েছে সিপিএমের শিক্ষক সংগঠনের সপ্তম ত্রিবার্ষিক পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন। মেদিনীপুরে জেলা পরিষদ হলে সম্মেলনে ৫০৫ জন প্রতিনিধি যোগ দেন। সম্মেলন শুরুর আগে শনিবার দুপুরে হয় শিক্ষা সেমিনার। ‘বর্তমান পরিস্থিতি ও শিক্ষক সমাজের কর্তব্য’ বিষয়ক এই সেমিনারে বক্তব্য রাখেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য শুভঙ্কর চক্রবর্তী। সন্ধ্যায় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উৎপল রায়। রাতে সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করেন জেলা সম্পাদক অপরেশ ভট্টাচার্য। রবিবার তা নিয়ে আলোচনা হয়। প্রতিবেদনের আগাগোড়া আত্মসমালোচনা মধ্য দিয়ে আগামী দিনে ‘দিশা’ খোঁজার চেষ্টা হয়েছে। শুরুতেই জেলা সম্পাদক বলেছেন, ‘এ বারের প্রতিবেদনে জেলার ধারাবাহিক কর্মসূচির দফাওয়ারি পর্যালোচনার পাশাপাশি আত্মসমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে আমাদের আশু কর্তব্যের প্রতি দিক নির্দেশ করার প্রচেষ্টা রয়েছে। বস্তুবাদী বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে যা কিছু অপূর্ণতা, তা সম্পূর্ণ করার দায় আমাদের সকলের।’ |
|
সম্মেলন উপলক্ষে মিছিল মেদিনীপুরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
এবং এ ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথকেই আঁকড়ে ধরার পরামর্শ দিয়েছেন নেতৃত্ব। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বর্তমান সময়ে তাত্ত্বিক অনুশীলন প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের প্রদর্শিত পথই আমাদের দিশারি হোক।’ প্রতিবেদনের বেশ কয়েকটি জায়গায় রবীন্দ্রনাথের লেখা তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘ছাত্র শাসনতন্ত্র’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘যাদের উচিত ছিল জেলের দারোগা বা ড্রিল সার্জেন্ট বা ভুতের ওঝা হওয়া, তাদের কোনওমতেই উচিত হয় না ছাত্রদিগকে মানুষ করিবার ভার লওয়া। ছাত্রদের ভার তাঁরাই লইবার অধিকারী, যাঁরা নিজের চেয়ে বয়সে অল্প, জ্ঞানে অপ্রবীণ ও ক্ষমতায় দুর্বলকেও সহজেই শ্রদ্ধা করিতে পারেন।’ শেষোক্ত বাক্যে আমাদের মনোনিবেশ করা জরুরি। এখানেই একটা গভীরতর সমস্যা উঁকি মারে। বর্তমান নিয়োগ ব্যবস্থায় ক্রুটি থেকে যাচ্ছে না তো?’ রাজ্যে শিক্ষক নির্বাচন ব্যবস্থা কতটা বিজ্ঞানসম্মত, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে প্রতিবেদনে। বিজ্ঞান নির্ভর নিয়োগ ব্যবস্থায় একাংশ শিক্ষক ক্যাজুয়াল ক্লাস নিতে অনীহা দেখাবেন, ক্লাসে বাচ্চাদের লিখতে দিয়ে মোবাইলে ফেসবুক ‘খেলবেন’, ছাত্রদের আগেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করবেন, স্টাফরুমে বসে কত শতাংশ ডিএ থেকে বঞ্চিত, তার হিসেব কষবেন, সন্তানতুল্য কিংবা ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্রছাত্রীদের শিশুসুলভ মুর্খামি নিয়ে হাসাহাসি করবেন, এটাই স্বাভাবিক।’ এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে বিশ্বাস, মূল্যবোধ এবং আত্মরকিতায় ‘ফাঁক’ থেকে যাচ্ছে বলেও মানছে এবিটিএ।
এ বারের সম্মেলন থেকে সংগঠনের সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় গণ আন্দোলন, শ্রেণি আন্দোলনে যোগ দেওয়া ও মানুষের সঙ্গে বেশি করে মেলামেশার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংগঠন চালানোর ক্ষেত্রে যে সব বাধা এসেছে, তা চিহ্নিত করা হয়েছে। কী ভাবে সেই সব বাধা পেরোনো যাবে, তারও দিক নির্দেশ করেছেন নেতৃত্ব। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজ নিজ এলাকায় পরিস্থিতি অনুযায়ী কর্মসূচি গ্রহণের জন্যও সংগঠনের সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা নেতৃত্ব। এ বারের সম্মেলনে ৮ দফা প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষায় বেসরকারিকরণ এবং অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ রোধ করা, শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলা, পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা প্রভৃতি রয়েছে বলে সংগঠন সূত্রে খবর। |
|
|
|
|
|