মর্গ্যানের সাহসই জেতাল ইস্টবেঙ্গলকে
ইস্টবেঙ্গল - ২ (চিডি, মননদীপ)
ওএনজিসি - ১ (কাটুমি)
ফ্রিকিক থেকে চিডির ডান পায়ের সোয়াভিং শটের গোল দেখে দাঁড়িয়ে উঠলেন উইম কোভারম্যান্স। হাততালি দিতে দিতে বললেন, “গুড গোল। ভেরি নাইস।”
১-১ অবস্থায় জেতার জন্য মরিয়া মর্গ্যানের ৩-৪-৩-এর অতি সাহসী পদক্ষেপ দেখে স্টেডিয়ামে বসে থাকা জাতীয় কোচের মন্তব্য জানতে গিয়ে দেখলাম, তিনি দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ কোচের দলের ড্রেসিংরুমের সামনে।
লালকার্ড, গুঁতোগুঁতি, চোরাগোপ্তা, ঝামেলা, চমকপ্রদ উত্থান-পতনের নাটকীয় লড়াইয়ে চিডির চোখধাঁধানো গোলে যদি লাল-হলুদের শাপমুক্তি ঘটে থাকে, তা হলে মর্গ্যানের ধুরন্ধর চালটাই জিতিয়ে দিল মশাল বাহিনীকে।
ম্যাচ দেখতে ভিআইপি বক্সে বসা মোহনবাগান কোচ সন্তোষ কাশ্যপ কী শিক্ষা নিলেন জানি না, তবে তিনটে জিনিস প্রমাণিত।
এক) বড় বাজেটের দল গড়লেই হয় না। সেই টিমেও ভাল ও অভিজ্ঞ কোচ একটা বড় ফ্যাক্টর।
দুই) খেলা চলাকালীন কোচের তাৎক্ষণিক সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াটা দলকে মাঠে অনেকটাই এগিয়ে দেয়।
তিন) ‘ফুটবলের ভগবান’ সাহসীদেরই সহায় হন।
রবিবার ম্যাচের আগে তীব্র চাপ এবং মাঠে অপ্রত্যাশিত ভাবে প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠা ওএনজিসি-কে হারানোর পর কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের গ্যালারি যে ভাবে গর্জে উঠল তাতে মনে হল ইস্টবেঙ্গল চ্যাম্পিয়নই হয়ে গিয়েছে। কিন্তু গ্রুপেই অঙ্ক এখনও রীতিমতো কঠিন লাল-হলুদের কাছে। আজ প্রথম ম্যাচে স্পোর্টিং ক্লুব ৩-২ হারিয়েছে কালীঘাট মিলন সংঘকে। নিট ফল, ইস্টবেঙ্গলকে শেষ চারে যেতে গেলে মঙ্গলবার শেষ ম্যাচে জিততেই হবে কালীঘাটের বিরুদ্ধে। এবং তার পরেও তাকিয়ে থাকতে হবে স্পোর্টিং-ওএনজিসি ম্যাচের দিকে। মর্গ্যানের দল অবশ্য সামান্য সুবিধে পাবে, স্পোর্টিং (শেষ ম্যাচে জিতলে যাদের সাত পয়েন্ট হবে) ম্যাচের ফল দেখে খেলতে নামতে পারবে। তা ছাড়া দুর্বল দল কালীঘাট এমএস-কে কলকাতা লিগে চিডি-পেনরা চার গোল দিয়ে আসায় মানসিক ভাবে অনেকটাই এগিয়ে থেকে নামবেন। যদিও এ দিনই রাতে চিঠি দিয়ে স্পোর্টিং ক্লুব ফেডারেশনের কাছে দাবি জানিয়েছে একই সময় গ্রুপের শেষ দু’টি ম্যাচ দেওয়ার।
দুই নায়ক: মননদীপ -চিডি। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
কার্যত দুর্বল ওএনজিসিকেও তো গোলপার্থক্য বাড়িয়ে রাখার প্রতিপক্ষ হিসেবে ভেবে এ দিন নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল। গত দু’দিন শিলিগুড়িতে বৃষ্টি হয়নি। চড়া রোদে লোকে হাসফাঁস। তবে মাঠ খটখটে শুকনো। পাসিং ফুটবল খেলার চমৎকার মঞ্চ পেয়েও কোনও রকমে জিততে হল মর্গ্যান ব্রিগেডকে। ০-১ পিছিয়ে থেকে ২-১ জেতাটাকে সম্মান জানিয়েও লিখতে হচ্ছে, এ বারের ইস্টবেঙ্গল মোটেই অজেয় নয়। দলের স্ট্রাইকিং ফোর্সের অভাব মাঝমাঠ কোনও কোনও সময় পুষিয়ে দিলেও, তাতে আক্রমণভাগের ক্ষত পুরোপুরি ঢাকা পড়ছে না। আশা একটাই, রিজার্ভ বেঞ্চ শক্তিশালী। গঙ্গাপারের আর এক বড় দলের মতো চোট-আঘাতে জর্জরিত নয়। আর সেই অস্ত্র ব্যবহার করেই আজ জিতে গেল ইস্টবেঙ্গল।
মর্গ্যানের ‘প্ল্যান এ’ রুখে দিয়েছিলেন বিপক্ষের কোচ পটলা ওরফে সুব্রত ভট্টাচার্য। ‘প্ল্যান বি’সেটাও খোঁড়াচ্ছিল। ৭৮ মিনিটে তেল কোম্পানির সবচেয়ে বিপজ্জনক ফুটবলার কাট্টুমি বাইরে চলে যাওয়ার পরে প্ল্যান সি-র প্রয়োগ ঘটালেন লাল-হলুদ কোচ। চিডি-বলজিতের সঙ্গে তিন নম্বর ফরোয়ার্ড নামিয়ে দিলেন মননদীপকে। সাহস দেখিয়ে ডিফেন্ডার কমানোর ঝুঁকি নিয়েও। তাতেই কেল্লাফতে। যে সাহসটা গত কাল দেখাতে পারেননি মোহনবাগান কোচ। চার মিনিটের মধ্যেই বিপক্ষের হাসানের মিস পাস ধরে মননদীপই জয়ের গোলটা করলেন। লাল-হলুদ কোচ অবশ্য বলছেন, “চিডির গোলের আগে পর্যন্তই চিন্তায় ছিলাম।”
শুরুতেই ইস্টবেঙ্গল ধাক্কা খেয়েছিল। গুরবিন্দরদের রক্ষণে ফাটল চোখে পড়েছিল আগের ম্যাচেই। সেখানেই বারবার ঝাপ্টাচ্ছিলেন বিপক্ষের দুই বিদেশি অনিয়েমা এবং কাট্টুমি। জাপানি কাট্টুমি খেলছিলেন একটু পিছন থেকে। গোলকিপার অভিজিৎ মণ্ডল হঠাৎ একটা বল বাঁ দিকে দিতে যান ওপারাকে। কেড়ে নিয়ে সুরাবুদ্দিন স্কোয়ার পাস বাড়ান কাট্টুমিকে। বক্সের ভিতরে ঢুকে জোরাল শটে গোল করেন তিনি। অপ্রত্যাশিত গোল হজম করে মর্গ্যানের টিম তখন দিশাহারা। বারবার চোখে পড়ছিল মেহতাবের মাঠে না থাকাটা। মনে হচ্ছিল মোহনবাগান-এয়ার ইন্ডিয়া ম্যাচের না পুনরাবৃত্তি হয়। প্রেসবক্স থেকেও দেখা যাচ্ছিল তেল কোম্পানির দৌরাত্ম্য দেখে ম্যাচ দেখতে আসা মোহন-কোচের নোট নেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু অসহনীয় চাপের মধ্যেই বিরতির এক মিনিট আগে চিডির অসাধারণ ফ্রিকিক গোল আর ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের নাটকীয় ফেরা।
ইস্টবেঙ্গল বাদে বাংলার সব দলই বিদায় নিয়েছে জাতীয় কাপ থেকে। শিলিগুড়ি বরাবর লাল-হলুদের শহর। তা সত্ত্বেও ফেড কাপ নিয়ে শহরের রাস্তায় মশাল মিছিল বেরোবে এ কথা এখনও লেখা যাচ্ছে না।

ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ, নওবা (খাবরা), গুরবিন্দর, ওপারা, সৌমিক, সঞ্জু, সুবোধ (মননদীপ), পেন, ইসফাক (লালরিনডিকা) , বলজিৎ, চিডি।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.