বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের দর্পচূর্ণ
প্রেমদাসায় মুরলী হয়ে উঠলেন হরভজন
ত গ্রীষ্মে ভারত যখন বিলেতে নিয়মিত হেনস্থা হচ্ছে ইংল্যান্ডের কাগজগুলো একটা ছবি বারবার ছাপাত। চার স্লিপ, দুই গালি নিয়ে বল করছেন ইংরেজ পেসাররা। আর উইকেটের সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে বিপন্ন তেন্ডুলকর।
ওটা তো তবু ছিল টেস্ট ম্যাচ। তা-ও নিজের দেশের মাঠে। রোববার নিরপেক্ষ দেশের উইকেটে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারত জুতসই জবাব দিয়ে গেল। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ৯০ রানে হারানো। ১৫ ওভারের মধ্যে অলআউট করে দেওয়া। এগুলো তো স্রেফ রেকর্ডের অংশ। গ্রুপ শীর্ষে থেকে সুপার এইটে যাওয়াটাও। কিন্তু তারই সঙ্গে একটা ছবি ভারত পাল্টা উপহার দিল ইংল্যান্ডকে। যখন হরভজন সিংহের জন্য পাঁচ জনকে ক্লোজ ইনে নিয়ে এলেন ধোনি। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের জন্য কিপার-সহ ছ’জন ক্লোজ ইনে, এমন দৃশ্য কে কবে দেখেছে? রোববার মাঝরাতে সাংবাদিক সম্মেলন করে বেরিয়ে যাওয়ার পথে ধোনি আনন্দবাজারকে বললেন, “ওরা নিজেরাই এই অপমানজনক ফিল্ড সেটিংটাকে আমন্ত্রণ জানাল।” ভারত অধিনায়কের গলায় পরিতৃপ্তির সুর।
দলে ফিরেই চার উইকেট। কলম্বোয় ইংল্যান্ডের
বিরুদ্ধে বিধ্বংসী হরভজন। ভারত জিতল ৯০ রানে।
যে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা কিছু দিন আগেই এই মাঠে আফগানদের পেস বোলিং নামক ভয়ঙ্কর বন্দুকের নলে শাসন করেছে, তারা নিজেরা যে একই সারফেসে এ ভাবে ধ্বংস হতে পারে কেউ ভাবতেই পারেনি। তা-ও চূড়ান্ত অনিশ্চিত দেখাতে থাকা ভারতের সামনে। গোটা টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচেই ভারতীয় বোলিং নিয়ে নিশির ডাক দেওয়া হচ্ছিল। কে জানত, সেই বোলিংকেই স্পিনের সোনার খনিতে রূপান্তরিত করবেন হরভজন সিংহ? স্বপ্নের প্রত্যাবর্তন ঘটালেন হরভজন। উপেক্ষার অন্ধকূপ থেকে সরাসরি তিনি ক্রিকেটের রাজপ্রাসাদে ফেরত। এক মাসও হয়নি, টেস্ট ক্রিকেটে তাঁকে ফেরাতে চেয়ে অন্যতম নির্বাচক মোহিন্দর অমরনাথকে বোর্ডের অসূয়ার স্বীকার হতে হয়েছে। ভাজ্জি নিজেও ক্রমশ আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছিলেন। পাকিস্তানের সঙ্গে ওয়ার্ম আপ ম্যাচে মোটেও ভাল বল করেননি। প্রথম ম্যাচে বাদই পড়ে যান। তাঁর আত্মবিশ্বাস ক্রমশ কমছে দেখে কলকাতায় দক্ষিণেশ্বর-সহ বেশ কিছু কালী মন্দিরে বন্ধুরা তাঁর জন্য পুজো চড়ান। সচিন যেমন সেঞ্চুরির পর আকাশের দিকে তাকান, ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ পুরস্কার নিয়ে হরভজনও সে রকম আকাশের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানালেন। কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি, মুরলীর চিরকালীন বাসস্থান হিসেবে স্বীকৃত প্রেমদাসায় নিঁখুত টপস্পিন ও দুসরা সমেত হরভজন নতুন মুরলী হয়ে দেখা দেবেন।
ভারতের কাছে এই ম্যাচটা ট্রায়াল ম্যাচ ছিল। তিন-চারজন আন্ডারডগ এই ম্যাচে ট্রায়াল দিচ্ছিলেন। একজন অবশ্যই হরভজন। যিনি পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ। দ্বিতীয় জন রোহিত শর্মা। সুপার এইটে পাঁচ বোলার খেলালে যাঁর নির্ঘাত বাদ যাওয়ার কথা ছিল। হরভজনের মতো রোহিতও সসম্মানে উত্তীর্ণ। গৌতম গম্ভীর, যিনি এ দিন রান পেয়ে আবার টিমের মূল নকশায় ফেরত এলেন। অশোক দিন্দা, যিনি ডেথ-এ রান দেওয়ার আতঙ্ক জিইয়ে রাখলেন। আশানুরূপ বোলিং হল না দিন্দার। অনেক গতিতে বল করলেন। কিন্তু লেংথটা নিয়ন্ত্রিত ছিল না।
ভারত যে ভঙ্গিতে ম্যাচটা জিতল, সুপার এইটে সম্ভ্রম জাগানোর পক্ষে যথেষ্ট। এই ক’দিন মনে করা হচ্ছিল কিশোরকুমারের দুঃখের গানের আবহেই টিমের অধিকার। কারণ পরের পর্যায়ে তিনটে জবরদস্ত টিমের দুটোকে তারা হারাবে কী করে? কোনও রাস্তাই তো পাওয়া যাচ্ছে না। রবিবারের প্রেমদাসা টিভির সামনে বসে থাকা অস্ট্রেলীয়-দক্ষিণ আফ্রিকানদের দেখাল, এখানে ভারতীয় স্পিন ঘূর্ণি খেলা মোটেও সহজ হবে না। স্টুয়ার্ট ব্রড ম্যাচ হেরে গিয়ে বললেন তিনি নাকি আজ এই চরম বিপর্যয়ের মধ্যেও পিটারসেনকে একেবারেই মিস করেননি। এ-ও বললেন যে বল নাকি তেমন ঘোরেনি। তাঁর ব্যাটসম্যানরাই খারাপ খেলেছে। ব্রডকে হয়তো বলতেই হবে। কারণ টস জিতে ফিল্ড করেছেন। কিন্তু নিরপেক্ষ যাঁরা খেলাটা দেখছিলেন, তাঁরা জানেন আত্মবিশ্বাস পেয়ে যাওয়া হরভজন অন্য জিনিস।
"নীল জার্সিটা বাদ দিয়ে কী করতাম জানি না। সতীর্থদের ধন্যবাদ। ওরা দুঃসময়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল। পুরস্কারটা ওদের আর আমার মা -র জন্য।"
—হরভজন সিংহ
হরভজন সিংহ
৪ -২ -১২ -৪
প্রথম ওভার : মেডেন
দ্বিতীয় বলে উইকেট
দ্বিতীয় ওভার : ৯ রান
তৃতীয় ওভার : ৩ রান,
ষষ্ঠ বলে উইকেট
চতুর্থ ওভার : মেডেন
প্রথম ও চতুর্থ বলে উইকেট
টি -টোয়েন্টিতে ভারতের হয়ে সেরা বোলিং।
ইরফান পাঠানকে ব্যাটে ওপেন করিয়ে ধোনি যে ট্রায়ালটা দিয়েছিলেন সেটা সফল হয়নি। আজকের মতো ব্যর্থ হয়েছে ডেথ ওভারে দিন্দাকে দিয়ে রান চেক করানোও। কিন্তু আন্ডারডগদের নিয়ে অন্য ফাটকাগুলো মারাত্মক খেটে গিয়ে ফের তিনি নতুন প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে। ২৮ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কী টিম নামাবেন? চার বোলার না পাঁচ? যদি পাঁচ বোলার হয় তা হলে বাদ দেবেন কোন ব্যাটসম্যানকে? দু’দিন আগে মুরলীর আনন্দবাজারের পূর্বাভাস মিলেই প্রেমদাসায় বল ঘুরতে শুরু করেছে। ধোনি কি সেই মতো দুই স্পিনার-তিন পেসার খেলাবেন?
ধোনি অবশ্য জিতে উঠে বললেন, এই সমস্যাটা সুখী সমস্যা। সাংবাদিক সম্মেলনে ধোনি এবং মাঠে ভারতীয় দলের তৃপ্ত শরীরী ভাষা দেখে মনে হল, এটা নামেই ছিল বেসরকারি ওয়ার্ম আপ ম্যাচ। ভেতরে ভেতরে দুটো নকআউট ম্যাচের বীজ। হরভজন শেষ কবে এত ভাল বল করেছেন যেমন পিছন ফিরে উত্তর খুঁজতে হবে, তেমনই ভারত শেষ কবে এত তাৎপর্যপূর্ণ ম্যাচ জিতেছে সেটাও হাতড়াতে হবে। সম্ভবত হাতড়ে উত্তর পাওয়া যাবে ২ এপ্রিল ২০১১, ওয়াংখেড়ে।
পুনশ্চ: গভীর রাতের দিকে দেখলাম জঙ্গি ক্রিকেট সমর্থক ওরফে অ্যাসেজজয়ী প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভন টুইট করেছেন, ‘ইংল্যান্ডের স্পিন পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। আজকের প্রদর্শনীর পর ভারত টেস্টে তিন/চার জন করে স্পিনার খেলাবে। ওহে ইংল্যান্ড, তাড়াতাড়ি শেখো। নইলে টেস্টে ০-৪ অপেক্ষা করে রয়েছে।’ ধোনিরা টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটের সামনে ছ’জন, ওই ছবিটার মতো ভনের টুইটটা দেখলেও পরম পুলকিত হবেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত ১৭০-৪ (রোহিত ৫৫ নটআউট, গম্ভীর ৪৫, কোহলি ৪০, ফিন ২-৩৩)।
ইংল্যান্ড ৮০ (ক্রেগ ৩৫, হরভজন ৪-১২, চাওলা ২-১৩, ইরফান ২-১৭)।

জিতল পাকিস্তান
নাসের জামশেদের ব্যাটিং। আর সইদ আজমলের বোলিংয়ের দাপটে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ১৩ রানে হারাল পাকিস্তান। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান তোলে ১৭৭-৬। নাসের ৩৫ বলে ৫৬ করে যান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে এক সময় ভালই এগোচ্ছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু পরে আজমলের (৪-৩০) স্পিনের ধাক্কায় আটকে গেল তারা। শেষ করল ১৬৪-৯ স্কোরে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.