অটো রিকশার সওয়ারি হয়ে বিপাকে পড়েছিলেন বিশ্বনাথ পাল। সামান্য পাঁচশো মিটার রাস্তা অটো রিকশায় চেপে পার হচ্ছিলেন তিনি। বাগনানের মুম্বই রোড থেকে মুরালিবাড় গ্রামের ভিতর দিয়ে যে রাস্তাটি এসে বাসস্ট্যান্ডে মিশেছে, তার হাল এমন ভয়াবহ যে অটো রিকশার ভিতরে বসে সহযাত্রীর বাহু আঁকড়ে ধরেছিলেন তিনি। অটো রিকশা থেকে নেমে তিনি বললেন, “প্রতি মুহূর্তে ভয় হচ্ছিল এই না অটো রিকশা উল্টে যায়।” শুধু বিশ্বনাথবাবু নন, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এই ভাবেই পারাপার করছেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, রাস্তাটির বেহাল দশা নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা নেই। |
রাস্তাটি গুরুত্বপূর্ণ। বাগনান শহরের সঙ্গে মুম্বই রোড হয়ে কলকাতায় যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম এই রাস্তাটিই। এই রাস্তা ধরে বাগনান লেভেল ক্রসিং পার হয়ে শ্যামপুরের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতে হয়। এই রাস্তার উপর দিয়ে প্রতিদিন কয়েকশো গাড়ি চলাচল করে। বাগনান-ধর্মতলা রুটের সিটিসি বাস, শ্যামপুর-ধর্মতলা, কমলপুর-বারাসত রুটের বেসরকারি বাস চলাচল করে এই রাস্তার উপর দিয়ে। এ ছাড়া বাগনান-আমতা, বাগনান-জয়পুর, বাগনান-বাকশি, বাগনান-মানকুর-সহ বিভিন্ন রুটের বাস এবং মিনিবাস এই রাস্তার উপর দিয়ে যাতায়াত করে। রয়েছে অসংখ্য অটো, ট্রেকার, মোটরবাইক, গাড়ি এবং মোটরবাইক।
নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, বর্তমানে এটিকে আর রাস্তা বলা যাবে না। তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। বৃষ্টি হলে গর্তে জল জমে থাকে। এই অবস্থাতেই দুলতে-দুলতে চলাচল করে বাস, অটো-রিকশা, ট্রেকার এবং গাড়ি। এক অটোচালক বললেন, “যাত্রী নিয়ে কী ভাবে এই রাস্তার উপর দিয়ে চলাচল করি তা ভাবতে পারবেন না। প্রতি মূহূর্তে ইষ্টনাম জপ করি।” সমস্যায় পড়েন পথচারীরাও। গর্ত এড়িয়ে চলাচল করার জন্য ফুটপাথের উপরে উঠে আসে গাড়ি। দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। |
সম্প্রতি এই রাস্তার উপরে পাথর ফেলে গর্তগুলি বোঝানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে বিপদ আরও বেড়েছে। লাল পাথরের গুঁড়ো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে পুরো রাস্তা কাদা হয়ে গিয়েছে। এখন এই রাস্তার উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচল করাও দায় হয়ে পড়েছে।
পুর্ত (সড়ক) দফতরের অবশ্য দাবি, রাস্তাটি নিয়মিত মেরামত হয়। একই সঙ্গে, দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, রাস্তাটি অপেক্ষাকৃত নীচু এলাকায় অবস্থিত। ফলে জল নিকাশ হতে পারে না। সেই কারণে মেরামত করা হলেও ফের তা বেহাল হয়ে পড়ে। তবে রাস্তাটি পাকাপাকি ভাবে মেরামত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন পুর্ত (সড়ক) দফতরের হাওড়া ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার সত্যব্রত বসু। তিনি বলেন, “রাস্তাটি কার্যত নতুন করে তৈরি করার জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। টেন্ডারও হয়ে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।”
|
ছবি দু’টি তুলেছেন সুব্রত জানা ও দীপঙ্কর দে। |