নিজেদের যা কোমরের জোর, তাতে কিছুই করতে পারবেন না। এমনকী, সংসদে বিশেষ অধিবেশনের প্রস্তাব থেকেও পিছু হটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু তাতে কী! কেন্দ্রীয় সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখতে চেষ্টার অন্ত নেই লালকৃষ্ণ আডবাণী, নিতিন গডকড়ীদের। নিজেদের ক্ষমতায় কুলোবে না বলে মুলায়ম সিংহ যাদবের ঘাড় ব্যবহার করতে চান বন্দুক রাখার জন্য। আর সে জন্য নৈতিকতার ধুয়ো তুলে সমাজবাদী পার্টিকে তাতানোর চেষ্টা কম করছে না বিজেপি।
লালকৃষ্ণ আডবাণীরা ভাল ভাবেই জানেন, ইউপিএ সরকার এখন অনেকটাই মুলায়মের উপরে নির্ভরশীল। অঙ্ক বলছে, মুলায়ম-মায়াবতী সঙ্গে আছেন বলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরে গেলেও আপাতত কেন্দ্রীয় সরকারের চিন্তার কোনও কারণ নেই। তবে মুলায়ম সমর্থন তুলে নিলে সঙ্কট বাড়বে। এই অবস্থায় সপা প্রধানকে লাগাতার চাপে রাখার পথ নিয়েছে বিজেপি তথা এনডিএ। এর আগে মুলায়মের কাছে শিবসেনা আবেদন করেছিল, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে মমতা যে ভাবে সমর্থন প্রত্যাহার করেছেন, মুলায়মও সে ভাবে সরকারের পাশ থেকে সরে আসুন। আজ ফের ওই একই দাবি জানিয়েছেন বিজেপি সাংসদ শাহনওয়াজ হুসেন।
মনমোহনের এই সংস্কার নীতির বিরুদ্ধে সপা নেতৃত্বের নীতিগত বিরোধিতা থাকলেও দল এখনই কেন্দ্রীয় সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলবে না বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন মুলায়ম। সপা’র এই সুবিধাবাদী অবস্থানের কড়া সমালোচনা করে আজ শাহনওয়াজ বলেন, “মুলায়ম সরকারে থাকার কথা বলছেন। আবার তাঁর ছেলে তথা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ জানাচ্ছেন, মনমোহন সরকারের ভুল আর্থিক নীতির কারণেই দেশের অর্থনীতি ঘোর সমস্যায়। কিন্তু সমর্থন প্রত্যাহারে রাজি নয়।” তাঁর সাফ কথা, “যদি সরকারের অর্থনীতি ভুল বলেই মনে করেন মুলায়ম-অখিলেশরা, তা হলে এই দ্বিচারিতা বন্ধ করে ইউপিএ থেকে সমর্থন তুলে নিক সপা।”
কিন্তু মুলায়ম কি আদৌ সে পথে হাঁটবেন?
এর আগেই সপা প্রধান জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা খুচরোয় বিদেশি লগ্নির বিরোধী। কিন্তু সাম্প্রদায়িক শক্তিকে দূরে সরিয়ে রাখতেই কংগ্রেসের সরকারকে সমর্থন করবেন তাঁরা। তবে বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছেন। আজও লখনউয়ে অখিলেশ বলেছেন, “বিদেশি লগ্নি এলে চাষি বা ব্যবসায়ীদের কী লাভ হবে? যাঁরা ছোট দোকান চালান, তাঁদেরও লাভ হবে না। সমাজবাদী পার্টি এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না যাতে চাষি বা ছোট ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।” একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা অন্তর্বর্তী ভোটের জন্যও তৈরি। এমনকী, কেন্দ্রের সরকারে যাওয়ার ব্যাপারে অখিলেশের মন্তব্য, “আর তো ক’দিন বাকি। এখন এই সরকারে কে যোগ দেবে?”
বিজেপির প্রশ্ন, তা হলে কেন সমর্থন তোলার ব্যাপারে পিছিয়ে যাচ্ছেন মুলায়ম? তাই এখন নৈতিকতার প্রশ্ন তুলছে তারা। সামনে নিয়ে আসছে মমতার উদাহরণ। যার মূল লক্ষ্য মুলায়মকে অস্বস্তিতে ফেলা। যে অস্বস্তি উস্কে দিতে শাহনওয়াজও বলেন, “মুলায়মের উচিত মমতার সাহসী পদক্ষেপ থেকে শিক্ষা নেওয়া। মমতা নীতির প্রশ্নে আপস করেননি। ক্ষুদ্র স্বার্থের কথাও ভাবেননি।” এর পাশাপাশি, আডবাণী আজ ব্লগে জানিয়েছেন, এনডিএ আমলে এই কংগ্রেসই খুচরোয় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করেছিল। |