অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেনের হাত ধরেই মাঠে নতুন মুখের ‘টিম ছিনতাই’
নেতৃত্ব দিচ্ছে কোনও এক দাগি। সঙ্গে নতুন কয়েক জন। এমন একটি দুষ্কৃতীদলই দক্ষিণ শহরতলিতে পরপর ছিনতাই ও বাধা পেয়ে গুলি করেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে করছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।
তদন্তকারীদের ধারণা, দলটির হাতে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র তো আছেই, সেই সঙ্গে আছে ভাল রকম গুলির জোগানও। যে কারণে শনিবার ঢাকুরিয়ার বাবুবাগানে সামান্য বাধা পেয়েই নির্দ্বিধায় একেবারে পাঁচ রাউন্ড গুলি শূন্যে ছুড়ে ‘নষ্ট করতে’ দ্বিধা করেনি তারা। এখনও পর্যন্ত পাওয়া সূত্রের ভিত্তিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর, ভাঙর ও বারুইপুর এবং দক্ষিণ শহরতলির তিলজলার কয়েক জন দুষ্কৃতী সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। রবিবার রাত পর্যন্ত অবশ্য কাউকে ধরা যায়নি।
যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “ঢাকুরিয়ায় যে দুষ্কৃতী গুলি চালিয়েছিল, প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী তার স্কেচ আঁকানো হয়েছে। কিছু সূত্রের ভিত্তিতে কয়েকটি জায়গায় গোয়েন্দা বিভাগের দল অনুসন্ধান চালাচ্ছে।” তদন্তকারীরা জেনেছেন, তিনটি ঘটনাতেই ‘অপারেশন’-এর ধরনটা এক।
একটি মোটরবাইকে তিন জন থাকছে। চালকের মুখ ঢাকা হেলমেটে। মাঝে বসা ছিনতাইকারী। কেউ বাধা দিতে এলে গুলি করছে তৃতীয় জন।
কলকাতা শহর ও তার আশপাশে সাতসকালে ছিনতাই নতুন কিছু নয়। কিন্তু একটু বাধা পেলেই ছিনতাইকারীরা দুমদাম গুলি চালিয়ে দেওয়ায় পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ঘুম ছুটেছে। শুক্র ও শনিবার পরপর তিনটি ছিনতাইয়ের দু’টি ক্ষেত্রে দুষ্কৃতীদের চালানো মোট ছ’রাউন্ড গুলি কারও গায়ে না-লাগলেও একটু এ দিক-ও দিক হলেই যে একাধিক লোক মারা পড়তে পারতেন এবং সে ক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসন যে ভয়ঙ্কর চাপে পড়ে যেত, সেটা লালবাজারের কর্তারা বিলক্ষণ বুঝেছেন।
লুঠের লক্ষণ
• একটি ছিনতাইয়ের পরদিনই অন্যত্র হানা
• গুলির জোগান প্রচুর
• হুটহাট গুলি চালানো
• অল্প বাধাতেই পাঁচ রাউন্ড গুলি শূন্যে ছুড়ে নষ্ট
• জনতার হাতে ধরা পড়ার ভয়
• নগদের প্রয়োজন খুব তাড়াতাড়ি
দলটিকে যে ভাবেই হোক ধরতে তাই পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে শনিবার থেকে নজিরবিহীন ভাবে গোয়েন্দা বিভাগের ডাকাতি ও রাহাজানি দমন, ছিনতাই দমন ও গুন্ডা দমন শাখা একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শহরতলির পুরনো অপরাধীদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সিআইডি-র সাহায্য নিচ্ছে কলকাতা পুলিশ। পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশের কয়েক জন অফিসারের, যাঁরা বহুকাল দক্ষিণ শহরতলির থানাগুলিতে কাজ করেছেন। শনিবার থেকেই বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে মোটরবাইক তল্লাশিতে।
ডাকাতি দমন শাখার এক অফিসারের কথায়, “কিছু ঘটনায় এখন স্থানীয় মানুষই দুষ্কৃতীদের ধরে ফেলছেন। নতুন এই দলটি তাই যথেষ্ট সন্ত্রস্ত। সে জন্যই বাধা পেলে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাতে তারা হুটহাট গুলি চালিয়ে দিচ্ছে। একটি অপরাধ করার পরের দিনই দলটি পরপর দু’জায়গায় হানা দেওয়ার ঝুঁকিও নিচ্ছে। এর থেকে ধরে নেওয়া যেতে পারে, বিশেষ কোনও কারণে তাদের এখনই প্রচুর টাকার প্রয়োজন।”
গুন্ডা দমন শাখার এক অফিসার বলেন, “দলের পাণ্ডা দাগি হলেও সে সম্ভবত আগে ছিনতাই করেনি। সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাতে যেখানে শূন্যে এক রাউন্ড গুলি ছুড়লেই চলে যায়, সেখানে পাঁচ রাউন্ড গুলি নষ্ট করা হচ্ছে। তার আগেকার সঙ্গীরা সম্ভবত সকলে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। তাই নতুন কিছু ছেলেকে নিয়ে সে নতুন অপরাধে নেমেছে।”
গত সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ শহরতলির ন’টি থানা ভেঙে মোট ১৭টি থানা তৈরি করে কলকাতা পুলিশের আওতায় আনা হয়। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন থানাগুলিতে ‘অ্যাক্টিভ ক্রিমিনাল রেজিস্টার’ বা অপরাধীদের ‘ডেটা বেস’ সেই অনুযায়ী তৈরি করা হয়নি। শুক্রবার রাতে গুন্ডা দমন শাখার গোয়েন্দারা অশোক রায় ওরফে চিংড়ি নামে পর্ণশ্রীর বাসিন্দা এক দুষ্কৃতীকে ধরেন। বেহালা ও ঠাকুরপুকুরের কিছুটা অংশ নিয়ে নতুন পর্ণশ্রী থানা হওয়ার পরে সেখানকার নথিতেই চিংড়ির নাম থাকার কথা। কিন্তু চিংড়ির বিস্তারিত তথ্য এখনও শুধু রয়ে গিয়েছে বেহালা থানার নথিতেই।
এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, “পুরনো মূল থানা ও নতুন থানার মধ্যে সমন্বয় ও তথ্যের আদান-প্রদান হচ্ছে না। তাই অপরাধের ঘটনার পরে দুষ্কৃতীদের সম্পর্কে ন্যূনতম আন্দাজ পেতেও সমস্যা হচ্ছে।” কলকাতা পুলিশের এই বর্ধিত এলাকায় গত ১০ বছরের কুখ্যাত দুষ্কৃতীদের নাম, তাদের মধ্যে সম্প্রতি কারা জেল খেটে বেরিয়েছে, সেই সম্পর্কে শুক্রবার থেকে বিস্তারিত তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে। তবে এক বছর পরেও বর্ধিত এলাকায় পুলিশ সোর্স-নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারল না কেন, সে প্রশ্নও উঠছে।
আবার ডাকাতি ও ছিনতাই দমন শাখার মধ্যে বছর তিনেক আগে তৈরি হওয়ার তিক্ততার মাসুলও দিতে হচ্ছে পুলিশকে। এই দু’টি বিভাগের মধ্যে সব সময়ে সমন্বয় থাকা প্রত্যাশিত হলেও সেই সময়ে ছিনতাই দমন শাখার এক অফিসার বেছে বেছে ডাকাতি দমন শাখার ‘সোর্স’-দের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করছিলেন বলে গোয়েন্দাদের একাংশের অভিযোগ। গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রের খবর, পরে সেই অফিসারকে থানায় বদলি করা হলেও দুই বিভাগের মধ্যে চাপান-উতোরের কাঁটা এখনও বিঁধে আছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.