গলায় ও পায়ে গভীর ক্ষত। রবিবার বৃষ্টির সন্ধ্যায় এক যুবকের ক্ষতবিক্ষত দেহ মিলল লালবাজারের নাকের ডগায়। এবং মহাকরণের কাছেই। ভরসন্ধ্যায় রাজ্য প্রশাসন এবং কলকাতা পুলিশের সদর দফতরের সামনে গলাকাটা দেহ উদ্ধারের পরে ওই এলাকায় পুলিশের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাত পর্যন্ত নিহতের পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ।
সন্ধ্যায় দেহটি পাওয়া যায় স্টিফেন হাউসের উল্টো দিকে, মিনিবাস গুমটির লাগোয়া বি বা দী বাগ (ইস্ট)-এ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, অন্য কোথাও খুন করে ওই যুবকের দেহ ফেলে দিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। এই নিয়ে চলতি মাসে মহানগরীতে দু’টি গলাকাটা দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। গত ৯ সেপ্টেম্বর ভোরে এক যুবকের গলাকাটা দেহ পাওয়া গিয়েছিল মল্লিকবাজারে। তাঁরও সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাঁরও পরিচয় জানা যায়নি। দু’টি খুনের মধ্যে কোনও যোগসূত্র আছে কি না, তদন্তকারীরা তা খতিয়ে দেখছেন।
পুলিশ জানায়, বি বা দী বাগে এ দিন যাঁর দেহ পাওয়া গিয়েছে, তাঁর বয়স ২৬-২৭ বছর।
সন্ধ্যা পৌনে ৭টা নাগাদ একটি বেসরকারি গাড়ির আরোহীরা দেহটি পড়ে থাকতে দেখে রাস্তায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে জানান। সেখান থেকেই হেয়ার স্ট্রিট থানায় খবর যায়। শ্যামলা রঙের ওই যুবকের মাথা কামানো, পরনে ছিল নীল লুঙ্গি এবং হলুদ গেঞ্জি। নিহতের গলায় প্রায় চার ইঞ্চি ক্ষত। মাথা দেহ থেকে প্রায় ঝুলছিল। মাথাতেও কাটা দাগ। ডান ঊরু এবং হাঁটুর কাছে মাংস যেন খুবলে কেটে নেওয়া হয়েছে। ভারী ছোরা বা চপারের মতো কোনও হাতিয়ার দিয়ে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন তদন্তকারীরা। নিহতের দেহে রক্ত শুকিয়ে কালচে হয়ে গিয়েছে। তা থেকে পুলিশের অনুমান, ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১২ ঘণ্টা আগে। ডিসি (সেন্ট্রাল) দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ এবং লালবাজারের হোমিসাইড শাখার অফিসারেরা ঘটনাস্থলে যান।
গোয়েন্দারা প্রাথমিক ভাবে অনুমান করছেন, বেব্রোর্ন রোড অথবা মহাকরণের দিক থেকে আসা কোনও গাড়ি থেকে দেহটি ফেলে দিয়ে পালিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। সেটা রাস্তার পুলিশের নজরে পড়ল না কেন? ডিসি (সেন্ট্রাল) বলেন, “সন্ধ্যায় মধ্য কলকাতায় মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। সম্ভবত সেই সময়েই দেহটি ওখানে ফেলে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা।” পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, গণেশ চন্দ্র অ্যাভিনিউ এবং বি বা দী বাগ (ইস্ট)-এর মোড়ে একটি সিসিটিভি রয়েছে। তাতে ওই এলাকায় যানবাহনের গতিবিধি লক্ষ করা যায়। যদি কোনও গাড়ি দেহটি ফেলে দিয়ে গিয়ে থাকে, সেটা ওই সিসিটিভি-র ক্যামেরায় ধরা পড়ার কথা। নজর-টিভি তেমন কিছু দেখেছে কী? সরাসরি জবাব এড়িয়ে তদন্তকারীরা জানান, ওই সিসিটিভি থেকে কিছু সূত্র মিলেছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে এখনই তা বলা যাবে না। ওই এলাকার ফুটপাথবাসীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। |