কাজ শুরুর দু’বছর পরেও সালানপুরের সামডিহি গ্রামের ধস কবলিত অঞ্চলের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া একটুও এগোয়নি বলে অভিযোগ করলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গণস্বাক্ষর সংবলিত চিঠি পাঠিয়েছেন বলেও জানান তাঁরা। তার প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। বাসিন্দাদের দাবি, দ্রুত পুনর্বাসন ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাঁদের অন্যত্র স্থানান্তর করা হোক। তাপসবাবু জানান, পুনর্বাসনের প্রাথমিক পর্বের কাজ শেষের পথে। মাস তিনেকের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ হয়ে যাবে।
এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপসবাবু জানান, পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার জন্য ২৬১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তার মধ্যে এখনও মিলেছে ১৬১ কোটি টাকা। তাতে ১৪১টি অঞ্চলের প্রায় ৩৩ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে একটি ‘মাস্টারপ্ল্যান’ ঠিক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রক। এডিডিএ সূত্রে খবর, পুনর্বাসনের জন্য প্রাথমিক ভাবে বাছা হয়েছে সালানপুরের সামডিহি, জামুড়িয়ার কেন্দা ও নিমচা গ্রাম, পাণ্ডবেশ্বরের বাঙালপাড়া ও হরিশপুর গ্রামকে। ২০১০-এর ২ সেপ্টেম্বর সামডিহি থেকে শুরু হয় এই কাজ। |
এডিডিএ সূত্রে জানা যায়, পুনর্বাসনের কাজ ছ’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমে ধস কবলিত অঞ্চলগুলির জমি জরিপ ও মূল্যায়ণ করা হবে। এর পরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের পরিচয়পত্র বানিয়ে দেওয়া হবে। তার পরে পুনর্বাসনযোগ্য নতুন শহরতলি তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ হবে। এ সবের পরে আধুনিক শহরতলি গড়ার পরিকল্পনা ও উন্নয়ন। সব শেষে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও অন্যত্র স্থানান্তর করা হবে।
বাসিন্দাদের অবশ্য অভিযোগ, দু’বছর কেটে গেলেও কাজ এগোয়নি। যে কোনও সময়ে ভূগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন তাঁরা। এমনই এক বাসিন্দা দিলীপ রুইদাসের কথায়, “মাঝে-মধ্যেই এলাকায় ধস নামে। মাটি ফুঁড়ে ধোঁয়া বেরোয় দৈনিক। মনে হয়, যে কোনও সময়ে তলিয়ে যাব।” এলাকার তৃণমূল নেতা পাপ্পু উপাধ্যায় জানান, সম্প্রতি এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপসবাবুকে বিষয়টি জানিয়েছেন বাসিন্দারা। পাপ্পুবাবুর অভিযোগ, “এডিডিএ কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে ধস কবলিত এলাকার বাসিন্দারা ঝুঁকি নিয়ে বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন।” বারাবনির তৃণমূল বিধায়ক বিধান উপাধ্যায় জানান, বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে বিষয়টি তুলবেন তিনি।
রাজ্যে পালাবদলের পরে এডিডিএ-র চেয়ারম্যান হন তৃণমূল বিধায়ক তথা আসানসোলের মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরে নতুন ভাবে পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়। এ জন্য তৈরি হওয়া ‘মনিটরিং কমিটি’ গত ১৪ জানুয়ারি একটি বৈঠকে দ্রুত কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাপসবাবুর দাবি, জমি জরিপের কাজ শেষ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পরিচয়পত্র তৈরির কাজও শেষের পথে। তিনি বলেন, “পরিবারগুলির ভূসম্পত্তি ও বাড়িঘরের মূল্যায়ণের কাজ হচ্ছে। নতুন শহরতলি গড়ার বদলে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায় কি না, তা ঠিক করতে একটি বৈঠক ডাকা হচ্ছে। দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” |